Editorial

সঙ্কটেরই আঁচ

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিগত পাঁচ বছরে ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে মহিলাদের ঋণ নেবার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অন্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে আরও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে চরিত্রগতভাবে এই ঋণের বেশিটাই স্বর্ণ ঋণ। অর্থাৎ মহিলারা বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে যেটুকু সোনার গহনা বানাতে পারেন সেটাই শেষ পর্যন্ত বন্ধক দিয়ে বিপদকালে বা জরুরি প্রয়োজনে অর্থ জোগাড় করছেন। বাণিজ্যিক প্রয়োজনেও ঋণ নেবার প্রবণতা মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে ঠিকই তবে মোট ঋণের অংশ হিসাবে সেটা নিতান্তই কম।
অর্থনীতির নিরিখে মহিলাদের মধ্যে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা যেকোনও দেশের পক্ষেই উৎসাহব্যঞ্জক। এটা অর্থনীতির কর্মকাণ্ডের মহিলাদের যুক্ত হবার বিষয়টিকেই তুলে ধরে। তাই ক্রমবর্ধমান হারে মহিলারা ঋণ গ্রহণ করাকে অর্থনীতির বিকাশের একটা ভালো দিক বলেই মনে করা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো ঋণ নেবার পেছনে উদ্দেশ্য ও কারণ। যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি বেশি করে যুক্ত হবার উদ্দেশ্যে মহিলারা ঋণ গ্রহণে উৎসাহী হতেন তাহলে নিঃসন্দেহে খুশি হওয়া যেত। কিন্তু মহিলারা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছেন বটে তবে সেটা খুবই কম পরিমাণে। বেশিটাই নিয়েছেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে।
মানুষ বিপদে না পড়লে বা খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে সাধারণত ঋণ নেন না। আর মহিলারা ঋণ নিতে যাচ্ছেন মানে বুঝতে হবে পুরুষরা ইতিমধ্যেই ঋণভারে জর্জরিত হয়ে আছেন। নতুন করে ঋণ পাবার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই মহিলারা ঋণ নিচ্ছেন। ঋণ দেবার আগে যেকোন সংস্থাই যাচাই করে নেয় গ্রহীতার ঋণ শোধের সামর্থ্য আছে কি না। তাছাড়া দরকার হয় গ্যারান্টারও। গৃহীতার আর্থিক অবস্থা ভালো না হলে কেউ গ্যারান্টার হতে চায় না। তেমনি প্রয়োজন কিছু সম্পদ জমা রাখার। এসব কোনও কিছুই যাদের নেই তাদের ঋণ পাবার একমাত্র উপায় সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া। বস্তুত গত পাঁচ বছরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে মহিলারা সোনা বন্ধক রেখেই সর্বাধিক পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন। আর এই ঋণ গ্রহীতার প্রধানত আধা শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। মানুষের আর্থিক অবস্থা যে ভালো নয়, রুজিরোজগারে সঙ্কট যে তীব্র এই রিপোর্ট সেই সত্যটাকেই প্রকটভাবে তুলে ধরছে।
অভাব-অনটনের সংসার হলেও বাড়ির মহিলারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান তাদের স্বর্ণালঙ্কারটুকু রক্ষা করার। কিন্তু যদি আরও খারাপ হয় তখন বাধ্য হন সোনা বন্ধক রেখে কিছু ঋণ নিতে। ঋণ নিলেও যদি সময়মতো তা শোধ দেওয়া না যায় তাহলে সেই বন্ধকী সোনা আর ফেরত পাওয়া যায় না। পরিবারের মহিলাদের শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া হয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে যান। ইতিমধ্যেই বহু সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে মানুষের পারিবারিক সঞ্চয় কমে গেছে। আসলে কাজের অভাবে, রুজির অভাবে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আয় না বাড়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না। ফলে বাজারে পণ্যপরিষেবার চাহিদা কমছে। সাধারণ মানুষের এমন দুঃসহ অবস্থার আর একটি প্রকাশ আধা শহর ও গ্রামে মহিলা ঋণগৃহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি। আবার ঋণের বেশিটাই সোনা বন্ধক রেখে ঋণ।
 

Comments :0

Login to leave a comment