Editorial

প্রধানমন্ত্রীর সিলেবাসে মণিপুর নেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

১৬ মাস অতিক্রম করলেও মণিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার ক্ষেত্রে কোনোরকম আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি যেন দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। মণিপুরে আরএসএস-বিজেপি আসলে কি চায় সেটাও স্পষ্ট নয়। মোদী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে নানা মহল থেকে যেমন গুরুতর প্রশ্ন উঠছে তেমনি সন্দেহও দানা বাঁধছে। মোদী-শাহরা কি সত্যি সত্যি চান মণিপুর স্বাভাবিক হোক? বিবাদমান জাতিগোষ্ঠীগুলির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হোক? তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের জমি পোক্ত হোক? নাকি সংঘাতের পরিবেশ বজায় রেখে বিভাজনের রাজনীতির ফায়দা লুটতে চান। মণিপুরে নরেন্দ্র মোদীর অতি প্রিয় ডাবল ইঞ্জিনের সরকার যে অকর্মণ্য এবং পরিস্থিতির মোকাবিলা বা নিয়ন্ত্রণে যে কোনও যোগ্যতা নেই তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। এক অপদার্থ সরকারের মাথায় একজন অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীকে বসিয়ে রাখলে যা হয় মণিপুরে সেটাই হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের প্রশাসনের উপর যেমন নিয়ন্ত্রণ নেই তেমনি নিজের দলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে সরকারের সক্রিয়তা যেমন থমকে আছে তেমনি সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা কার্যকর করতে পারে না। ফলে মণিপুরে এখন কাগজে কলমে সরকার থাকলেও বাস্তবের মাটিতে সরকারের কোনও অস্তিত্ব নেই। গোটা রাজ্যে চলছে নৈরাজ্যের রাজত্ব। আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। 
এমন এক অচলাবস্থার মধ্যে মণিপুরে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে সক্রিয় ভূমিকা দরকার কেন্দ্রীয় সরকারের। অথচ কেন্দ্র কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না। ভাবখানা এমন যে সেখানে যা খুশি হোক মোদী-শাহদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। এমন মনোভাব থেকেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব-কর্তব্যের তালিকা থেকে মণিপুরকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। গত ১৬ মাসের মধ্যে একবারের জন্যও তিনি মণিপুরে যাবার প্রয়োজন মনে করেননি। মণিপুর ‍‌নিয়ে কথা বলা, সরকারি পদক্ষেপ ইত্যাদি থেকে পুরোপুরি বিরত রয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সিলেবাস থেকে অঙ্গরাজ্য মণিপুরকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সব বিষয়ে প্রতিদিন অনর্গল কথা বলেন কিন্তু মণিপুর নিয়ে একেবারে চুপ। তাহলে তিনি কি চান না মণিপুরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে। কাশ্মীর নিয়ে তো তাঁর মুখে খই ফোটে। তাহলে মণিপুর নিয়ে তিনি মৌন কেন? মণিপুরকে তিনি খরচার খাতায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন?
মণিপুরের সরকার, কেন্দ্র নিযুক্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। কারো কাজের সঙ্গে কারও কাজ মেলে না। এক পক্ষ এক কথা বললে অন্য পক্ষ অন্য কথা বলে। গুজব আর বিভ্রান্তির জোয়ারে মানুষের মধ্যে আস্থাও বিশ্বাসের জমি শিথিল হয়ে যাচ্ছে। তাই বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্যকে সম্প্রতি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন সেনা প্রধান। ভুলভাল তথ্য পরিস্থিতিকে জটিল করছে বলে সেনা প্রধান মনে করেন। কেন্দ্রীয় সরকার হাল ছেড়ে দেওয়ায় মণিপুর এখন দিশাহীন। মোদীরা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীকে সরাতে চাইছেন না। আবার কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনার পথেও হাঁটছে না। এই নিষ্ক্রিয়তা মণিপুরকে সর্বনাশের দিকে পাকা‍‌পাকিভাবে ঠেলে দিচ্ছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment