বিরোধী মঞ্চকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষের জবাবে এই প্রশ্ন তুললেন সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘‘নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজ শাসনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেছিলেন।’’
চার দিন হল সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে। বিরোধীরা একযোগে মণিপুর কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করছেন। কিন্তু সেই দিকে না হেঁটে, মঙ্গলবার বিরোধী জোটকে আক্রমণ চালিয়েছে নরেন্দ্র মোদী। এদিন বিজেপি’র সংসদীয় দলের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘নামের মধ্যে ইন্ডিয়া থাকলেই দেশের ভালো চাইবে এমনটা নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিংবা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নামেও ইন্ডিয়া ছিল। এরা মুখে এক কথা বলে, আর কাজ করে সম্পূর্ণ আলাদা।’’
বেঙ্গালুরুতে বৈঠক থেকে বিজেপি বিরোধী ২৬ট দল মঞ্চের নামকরণ করেছে। নাম হয়েছে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’। যার ইংরেজি আদ্যক্ষর জুড়লে হয় ‘ইন্ডিয়া’। বামপন্থীরা স্পষ্ট করেছেন যে কোনও নির্বাচনী জোট নয়, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারত অক্ষুণ্ণ রাখতে সম্মিলিত রাজনৈতিক প্রয়াস। কিন্তু বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদী টানা বিরোধী বোঝাপড়াকে আক্রমণ করে চলেছেন।
বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর এই ধরণের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়া এবং ভারতের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।’’
বিজেপি বিরোধী দেশের ২৬টি দল একজোট হয়েছে। চেষ্টা চলছে যতটা সম্ভব বিরোধী ভোটের ভাগ ঠেকানো। কারণ ভারতচেতনাকেই ভেঙে দিচ্ছে বিজেপি। ভাঙছে দেশ, বাড়ছে বিদ্বেষ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিরোধীরা এক জায়গায় থাকলে মাত্র ৩৫ শতাংশ ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপির পক্ষে ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন জেতা যে কঠিন হতে চলেছে, তা একপ্রকার প্রকাশ করে ফেললেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রসঙ্গত, বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেই ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল বৃটিশরা। এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন হল একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। অর্থাৎ বিরোধী জোটকে পক্ষান্তরে ‘দেশ বিরোধী’ একাধিক সংগঠনের সঙ্গে এক আসনে বসানোর চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদীর সুরে সুর মিলিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ জানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিংবা কংগ্রেস বিদেশিদের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়টিকেই সামনে এনেছেন।’’
এদিন রাজ্যসভায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, ‘‘মণিপুর ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মণিপুর ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে বিরোধী দলগুলির বহু সাংসদীয় বিধির ২৬৭ ধারায় নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু আলোচনা না করে প্রধানমন্ত্রী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গল্প শোনাচ্ছেন।’’
কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল গান্ধী এই ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘আপনি আমাদের যা খুশি নামে ডাকতে পারেন মিস্টার নরেন্দ্র মোদী। আমরা ইন্ডিয়া। আমরা মণিপুরের ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে সমস্ত রকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমরা প্রতিটি নারী এবং শিশুর চোখের জল মোছাতে প্রস্তুত। আমরা গোটা মণিপুর জুড়ে ফের একবার শান্তি এবং ভালোবাসার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করব। আমরা ফের একবার মণিপুরের মাটিতে ভারত চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করব।’’
বাদল অধিবেশন শুরু হওয়া ইস্তক মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে প্রবল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিরোধীরা। কিন্তু সেই দাবি অগ্রাহ্য করে চলেছে বিজেপি। আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং’কে সংসদের উচ্চ কক্ষ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বিরোধীদের এই নাছোড় মনোভাবে বিজেপি যে বেকায়দায়, তাও নিজের বক্তব্যে স্বীকার করে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি সংসদীয় দলের বৈঠকে দাবি করেছেন, ‘‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে এমন দিশাহীন বিরোধীপক্ষ দেখিনি। এঁরা ক্ষমতার পাওয়ার আশায় পাগল হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’’
একইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর দাবি, বিরোধীরা নাকি ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিংবা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গে তুলনা করায় কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করেছে সিপিআই(এম)। সিপিআই(এম)’র তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত দলগুলির সম্পর্কে যে ভাষায় বক্তব্য রাখছেন তা অত্যন্ত লজ্জার।’’
Comments :0