‘‘গণতন্ত্রে নিয়ম হচ্ছে হয় ভোট দিয়ে, ভোট দিতে না পারলে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে। সন্দেশখালিতে কোনও তিনশো ছাপ্পান্ন করতে হয়নি। মা-বোনেরা ঝাঁটা হাতে নেমে এসেছে। মানুষই শেষ কথা বলে।’’
শনিবার জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। জেলার কর্মীসভাতেও ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
‘‘ছাপ্পান্ন লাগবে না, তিনশো ছাপ্পান্নও লাগবে না। বাংলার মানুষ যদি উত্তর-দক্ষিণ, পাহাড়-সমতল, হিন্দু-মুসলিম, রাজবংশী-তপসিলি, আদিবাসী-কুর্মি, সবাই যদি এককাট্টা হয় তা’হলে তৃণমূলকে উৎখাত করবে।’’ রাজ্যে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা জারির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূলর বিরুদ্ধে সব শক্তির সঙ্গে কথা হচ্ছে। এই দুই শক্তিকে হারাতে মানুষ একজোট হবেন।’’
প্রশ্ন ছিল, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সংবিধানের ৩৫৬ ধারা জারি করার হুমকিও দিচ্ছেন।
সেলিম বলেন, ‘‘শুভেন্দু বলেছিল না তারিখ, আগের রাজ্যপালও তারিখ দিতেন। তৃণমূল এবং বিজেপি তাঁকে একসঙ্গে উপরাষ্ট্রপতি করেছে। অনেকে ভেবেছিলেন নবান্নকে ধরতে ছাপ্পান্ন দরকার। ছাপ্পান্ন দিয়ে কিছু হয়নি। ভাইপোকে দরবে ধরবে করে এখন সব ভোঁ-ভাঁ। এখন বলছে ছাপ্পান্ন দিয়ে হচ্ছে না তা’হলে তিনশো ছাপ্পান্ন।’’
সেলিম বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে আপনারা দেখেছেন যে মেয়েরা মুখ খুলেছে তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয়ের রাজত্ব। বাঁধে, চরে, জলাশয়ে রাজ্য কেন্দ্র উৎখাত করছে। কখনো রেলের জমি থেকে। আসল সমস্যা জমির। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মেয়াদে ভূমিসংস্কার করে জমি দেওয়া হয়েছিল। শাহজাহান-শিবুরা বিএলআরও অফিস, বিডিও দপ্তরকে ঠুঁটো করে সেই জমি দখল করেছে। মহিলাদের ব্যবহার করেছে। বলেছিল বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেব। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় মহিলাদের অত্যাচারকে ভয়ের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে যাতে পরিবার দাস হয়ে যায়। মানুষকে নির্জীব করে দেয়।’’
সেলিম বলেন, ‘‘পুলিশ কত অপদার্থ, অভিযোগ নেয় না, নিলেও ব্যবস্থা নেয় না। মনে করছে সিপিআই(এম)’কে জেলে পুরে দিলে লড়াই শেষ হবে যাবে। তা হবে না। ১৩ তারিখ দেখেছেন আইন অমান্য হয়েছে। কমরেড আনারুল ইসলামকে পুলিশ খুন করেছে। অসংখ্য আহত। বন্দি করে রেখে দিয়েছে। সব বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’’
সন্দেশখালিতে এতদিন অশান্ত চলছে মুখ্যমন্ত্রী গেলেন না?
সেলিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী যেমন যাননি, তেমনই সন্দেশখালিতে মুখ্যমন্ত্রী যাননি। দু’জনের কাজের কায়দা তো এক। যেদিন তাঁর পুলিশ আনারুল ইসলামকে খুন করল সেদিনই তিনি পাঞ্জাবে কৃষকদের কেন কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছে তার প্রতিবাদ করছেন! একইভাবে, মণিপুরে প্রতিদিন মানুষ খুন হচ্ছেন মোদীর কাছে তার খবর নেই। অথচ ইজরায়েলে কী হচ্ছে তা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। এরা সব বিশ্বগুরু, বিশ্ববাংলা বলছে। একি কারবার বিশ্ব নিয়ে! পাড়া নিয়ে মহল্লা নিয়ে মানুষ নিয়ে কোনও কারবার নেই।’’
সেলিম বলেন, ‘‘শাহজাহান শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, শাহজাহানদের ধরছে না কেন। চোরাই মাল উদ্ধার হলেও তো চোরের শাস্তি হওয়া উচিত। এখন ক্ষতিপূরণের কথা বললে কী লুটের দোষ মাফ হয়ে যায়। চিট ফান্ডের সময়ও টাকা ফেরানোর কথা বলেছিল। অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।’’
আন্দোলনের চাপে শনিবারই সন্ধ্যায় তৃণমূল ব্লক সভাপতি শিবু হাজরার গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গিয়েছে। তার আগে শিবু হাজরা এবং উত্তর সর্দারের বিরুদ্ধে খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগ পুলিশ দায়ের করেছে বলে জানান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।
এদিন জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য।
Comments :0