দেশে সরাসরি লড়াই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সঙ্গে বিজেপি জোট এনডিএ’র। এ রাজ্যে ‘বিজেপি অথবা তৃণমূল’ ভাষ্য ভেঙে গিয়েছে। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অংশ এ রাজ্যে। দিল্লির সরকার থেকে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি-কে হটাতে জনতা ভোট দিচ্ছেন বামপন্থীদের।
এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপি নেই। যাঁরা তৃণমূলকে হারাতে বিজেপি’র সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁরা এখন বামপন্থীদের দিকে ফিরে আসছেন।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষ বুঝেছেন যে বিজেপিকে হারাতে হলে ‘দু নম্বর বিজেপি’ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে লাভ নেই। তাঁরা বামপন্থীদের এবং কংগ্রেসকে সমর্থন করছেন।’’
এদিন রাজ্যের অশোকনগর, যাদবপুরের জনসভার পাশাপাশি শ্যামবাজার থেকে প্রচারে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে বলছেন। এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই নয়ছয় নিয়ে কোনও তদন্ত কেন্দ্রের সরকার করেনি কেন? বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ল। তা নিয়ে কোনও তদন্ত হলো না কেন? ওই উড়ালপুল তৈরির ৬৫ শতাংশ খরচ বহন করছিল কেন্দ্র, বাকিটা রাজ্য। আসলে এখানে যা দুর্নীতি হচ্ছে তার ৬৫ শতাংশ বিজেপি পায় বাকি মমতা।’’
সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার কিভাবে দুর্নীতি করেছে আমরা দেখেছি। আর বিজেপি সরকারও দেশে একই কায়দায় দুর্নীতি করছে। সরকারি সম্পদের নগদীকরণের নামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে সম্পদ। মোদী সরকারের আমলে সব থেকে বড় দুর্নীতি ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে হয়েছে। গঙ্গার নাব্যতা বাড়িয়ে জলপথে পরিবহণের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা হয়েচিল ১৯৮৯ সালে। মোদীর সময়ে ওই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। দেখা গিয়েছে তার মধ্যে দুর্নীতি হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার।’’
দেশের পরিস্থিতি ব্যাখা করে সেলিম বলেন, ‘‘পশ্চিম এবং উত্তর ভারতে বিজেপি বিরোধী মনোভাব বেড়েছে। মোদীর মিথ্যাচার মানুষকে বিজেপি সরকার এবং দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করেছে। আর এখানে বিজেপি এসে তৃণমূলের অপশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদীর অচল জুমলা চালাচ্ছে। বাংলার মানুষ রাজনৈতিক সচেতন, এই মুহূর্তে মানুষ রাজ্যকে বাঁচাতে বেশি সচেতন।’’
মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে মিছিল শুরু করবেন মোদী। শেষ হবে বিবেকানন্দর বাড়ির সামনে, সিমলা স্ট্রীটে।
সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনের শেষ প্রচারে বিদ্যাসাগরকে কেন্দ্র করে অমিত শাহ এবং মমতা একটা নকল যুদ্ধ করেছিলেন। আজ আশা করবো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বামীজির মূর্তি নিয়ে কোন ঘৃণ্য খেলা হবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি নির্বাচনী প্রচারে ধর্মীয় বিভাজন তীব্র করেছে। মোদী ওবিসি নিয়ে বলছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং সরকারের বিরোধিতা করে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধিতা করেছিল বিজেপি-আরএসএস। মমতা রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে নষ্ট করেছেন। সেটা আরএসএস-কে সাহায্য করেছে।’’
মোদী দেশের সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন যে ওবিসি সংরক্ষণে মুসলিমদের নাম ঢুকিয়ে ওবিসি বা অন্য অনগ্রসর অংশের সংরক্ষণের সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেলিম তার পালটা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ওবিসি তালিকায় মুসলিমদের নাম ধর্মের ভিত্তিতে আসেনি। কেন্দ্রের রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মুসলিমদের তালিকায় এনেছিল। আর মমতা ব্যানার্জি পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্তা করেছেন।’’
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট তৃণমূলের মেয়াদে ওবিসি সার্টিফিকেট খারিজ করলেও বামফ্রন্টের সময়ে দেওয়া সার্টিফিকেটকে বাতিল করেনি। ধর্মীয় কারণে নয়, নির্দিষ্ট পদ্ধতি না মানার কারণে বাতিল হয়েছে শংসাপত্র।
১ জুন ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে তৃণমূলের কেউ থাকবে না বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যে সপ্তম দফার ভোটের কথা বলা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।
সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘মমতা মাঝখানে থাকতে চান। নিজেকে এবং ভাইপোকে বাঁচাতে বৈঠক এড়াতে চাইছেন। কেবল এখন না, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে মমতা বারবার খাটো করার চেষ্টা চালিয়েছেন। আগে ছোটখাটো নেতাদের পাঠিয়েছেন, এবার তাও পাঠাচ্ছেন না।’’
MD SALIM 7th Phase
বিজেপি হটাতে বাম-কংগ্রেসের পাশে মানুষ: সেলিম
×
Comments :0