প্রবাদে আছে শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল। তাকে অতিক্রম করে এরাজ্যে এখন আইন শৃঙ্খলার রক্ষক ও জনসাধারণের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ হয়ে উঠেছে চোর তৃণমূলের রক্ষাকর্তা। অনেক ক্ষেত্রে আবার পুলিশের ভূমিকা থেকে এটাও প্রতিভাত হচ্ছে যে পুলিশ দলদাসত্ব অতিক্রম করে ক্রমশ শাসক দলের দাগী দুষ্কৃতীদের সমকক্ষ হতে চাইছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে আবাস যোজনার সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশের নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনার পর তৃণমূলী গুন্ডা আর পুলিশের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দলদাসদের মতো পুলিশের কাজ এখন শাসক দলের নেতাদের হুকুম তামিল করাই নয়, শাসক দলের চোরজোচ্চোর, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ নেতাদের জনরোষ থেকে রক্ষা করা। চোরেদের পাহারাদার হিসাবেই পুলিশের ভূমিকা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে।
গরিব গৃহহীনদের জন্য সরকারি প্রকল্প আবাস যোজনা। সরকারি অর্থে গরিবদের মাথা গোঁজার জন্য ভদ্রস্থ আবাস তৈরি করে দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। এই রাজ্যে চোরেদের রাজত্বে যাদের জন্য সরকারি প্রকল্প তাদের পাবার জো নেই। সর্বত্র হা করে বসে আছে চরম লোভী তৃণমূল নেতা কর্মীরা। গরিবদের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হলেই এরা হামলে পড়ে সেই অর্থ হাতিয়ে নিজেদের পকেটে পুরতে। আবাস যোজনায় গ্রামে গ্রামে ব্লকে ব্লকে প্রকৃত গরিব, যাদের সত্যিই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাদের আবেদন নাকচ করে দিয়ে সর্বত্র তৃণমূল নেতারা নিজের, পরিবারের ও আত্মীয় স্বজনদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে শাসক দলের ধনী, অবস্থাপন্ন নেতাদের লোকজনই বাড়ি পাননি, পেয়েছেন কোটি পতিরাও। মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে অবশ্য এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। আপাদমস্তক চোরেদের কোনও সরকার এমনটাই করবে সেটাই দস্তুর। আয়লা ঝড়ে সুন্দরবন ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে যাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, যারা সর্বহারা অসহায় তারা আয়লার জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। সেই টাকা হাতিয়ে পকেটে পুরেছেন শাসকদলের নেতারা। এমনকি পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যরা কোথাও নিজের নামে, কোথায় পরিবারের অন্যদের নামে টাকা মেরেছেন। অর্থাৎ টাকা তারাই পেয়েছেন যাদের কোনও ক্ষতি হয়নি বা সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আবার ক্ষতিপূরণের টাকা তারাই হাতিয়েছে যাদের একতলা বা দোতলা পাকা বাড়ি আছে।
আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও তাই। আয়লা ছিল রাজ্যে একাংশে। আবাস যোজনা রাজ্যের সর্বত্র। সর্বগ্রাসী এক দুর্নীতি বাংলাকে গ্রাস করেছে আবাস যোজনাকে সামনে রেখে। শাসক তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবং তাদের ঘনিষ্টরা আবাস যোজনার শত শত কোটি টাকা হজম করে ফেলে নিঃশব্দে। এত ভয়ানক দুর্নীতি চলছে অথচ খোদ মুখ্যমন্ত্রী, থেকে শুরু করে সরকারের কোন স্তরে কোনও তাপ উত্তাপ নেই। নীরবতার মধ্যদিয়েই মদত দেওয়া হচ্ছে দুর্নীতিতে। সরকারি আমলার মেরুদণ্ডহীনের মতো দুর্নীতিবাজদের সাহায্য করছে। কেউ ভয়ে, আবার কেউ লুটের ভাগ পাবার আশায়। পুলিশ তো চোরদের নিরাপত্তারক্ষী।
এর বিরুদ্ধেই রাজ্যে উত্তাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই ব্লকে ব্লকে চলছে মিছিল, অবস্থান, অবরোধ, ডেপুটেশন। দাবি একটাই চোর, চিটিংবাজ, দালাল, ধান্ধাবাজদের নাম বাতিল করে প্রকৃত গরিব গৃহহীনদের বাড়ি দিতে হবে। এই দাবিতে যত বিক্ষোভ বাড়ছে ততই তৃণমূলীদের ভয়-আতঙ্ক বাড়ছে। গণরোষে পড়ার ভয়ে তারা হিংস্র ও বেপরোয়া হামলা চালাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশকেও লেলিয়ে দিচ্ছে। নন্দকুমারে পুলিশ চোরদের বাঁচাতে প্রতিবাদীদের ওপর হিংস্র জানোয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বেপরোয়া লাঠিপেটা করে আহত করেছে শতাধিক প্রতিবাদীকে। আহতদের অনেককে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
Comments :0