Ritwik Ghatak

বিপ্লবের দুর্বিনীত ঋত্বিক

বিশেষ বিভাগ ফিচার পাতা

শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার

হেমাঙ্গ বিশ্বাস একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘শিল্পী ঋত্বিক কখনো মদ ছুঁতেন না।’ কথাটা নিশ্চয়ই ঝাঁকুনি দেবে। ঝাঁকুনিই হয়ত দিতে চেয়েছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। কারণ আম-বাঙালির আলোচনায় ঋত্বিককে ঘিরে যে কথাগুলো সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়, তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে এই বিষয়টিই। একই কথাটাই হয়ত সত্যজিৎ রায় একটু অন্যভাবে বলেছিলেন একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে, ‘আমি শুনেছি তাঁর কাজ করার সময় অনেক সময়েই সে অসুস্থ থাকত। কিন্তু আমার সবচেয়ে যেটা আশ্চর্য মনে হয়েছে, তার কোনও ছবি দেখে কখনো মনে হয়নি, তার অসুস্থতা একটুও তার ছবির মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে।’ অসুস্থতা বা সুরাসক্তি স্রষ্টা ঋত্বিকে অনুপস্থিত, এটাই বলেছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস বা সত্যজিৎ রায় এবং এটা হওয়া উচিত শতবর্ষে ঋত্বিক স্মরণের সূচনাবিন্দু। আমাদের সাধারণ ধারণায় ঋত্বিক একজন অগোছালো, সদা টালমাটাল, আবেগসর্বস্ব ফ্যান্টাসির জগতের অধিবাসী।  ঋত্বিক সম্পর্কে বলতে গেলেই আমরা শব্দের ফুলঝুড়ি উড়িয়ে ফ্যান্টাসির জগতে ঢুকে পড়ি। ঋত্বিক ফ্যান্টাসিকে শিল্পে বারবার ধারণ করেছেন, কিছু তিনি সেখানে আবদ্ধ হয়ে থাকেননি। বাস্তবের প্রতিভাসই নির্মিত হয়েছে তাঁর ফ্যান্টাসির মধ্যে। ঋত্বিক আপসহীন দুর্বিনীত ছিলেন এ সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাই তাঁর প্রধান পরিচয় হতে পারে না। প্রচলিত ধারণার চেয়ে আরও ব্যাপ্ত তাঁর গুণাবলী। ক’জন জানে যে ঋত্বিক ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত সরোদ বাদক, সুবিস্তৃত বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী একজন সুপণ্ডিত মানুষ। বিশ্ব চলচ্চিত্র সম্পর্কে ছিল তাঁর নিবিড় অধ্যয়ন। বিশ্ব সঙ্গীতের ছিলেন সত্যিকারের রসপিপাসু। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি খুবই অল্পদিন, কিন্তু এখনও পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও প্রাক্তনীরা তাঁর শিক্ষকতার সময়কে প্রতিষ্ঠানের একটি সোনালি অধ্যায় বলে মনে করে।  কুমার সাহানী, মণি কাউল বা সাঈদ মির্জার মতো পরিচালকেরা ঋত্বিকের নিজের হাতে তৈরি। সাক্ষাৎকার বা আলাপচারিতায় ঋত্বিকের বলা কথাগুলিকে শব্দার্থে গ্রহণ করেও কখনো এমনতর ধারণা তৈরি হয়েছে। তাঁর ছাত্র কুন্দন শাহ জানতে চেয়েছিলেন কী করে ভালো চলচ্চিত্র পরিচালক হওয়া যাবে। উত্তরে ঋত্বিক বলেন, ‘কুর্তার এক পকেটে একটি বোতল এবং অন্য পকেটে নিজের শৈশবকে পুরতে পারলে’। গভীরভাবে ভাবলে এর মধ্যেই রয়েছে ঋত্বিকের নন্দনভাবনা। ঋত্বিকের কাছে সবসময়ই হৃদয়ের গভীর সংবেদন ছিল শিল্প সৃষ্টির প্রাথমিক প্রেরণা। আর বলেছেন যে জীবনে বসবাস করি তার প্রতি অনুগত, দায়বদ্ধ থাকার কথা। কুন্দন শাহকে বলা ওই কথাতে হয়ত ইঙ্গিতে সেই কথাই বলতে চেয়েছেন।
গণনাট্য সঙ্ঘের সাথে যুক্ত হওয়ার অনেক আগেই ঋত্বিক ছিলেন একজন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী। ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনীতিতে আসা। মার্কসবাদ নিয়ে তখন থেকেই তাঁর পড়াশোনার শুরু। কমিউনিস্ট আন্দোলনে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়বেন বলেই স্নাতকোত্তর বিভাগে ভর্তি হয়েও পড়া শেষ করেননি। মানুষের কাছে রাজনীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার তাগিদেই তাঁর গণনাট্যে আসা। কবিতা চর্চায় কিছুদিন মগ্ন থাকার পর ঋত্বিকের মনে হয়েছিল গল্প লেখার মাধ্যমেই বিপ্লবের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে। এভাবেই গল্প উপন্যাস চর্চা চলতে চলতেই তিনি বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটকের অভিনয় দেখেন। তখন তাঁর মনে হয়, সাহিত্য চর্চার চেয়ে নাটকের মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এভাবেই গল্প উপন্যাস ত্যাগ করে তাঁর নাটকে আসা। গণনাট্য সঙ্ঘের কেন্দ্রীয় স্কোয়াডে জড়িত হয়ে তিনি একের পর এক নাটক লেখেন। বহু নাটকে নিজে অভিনয় করেন। তাঁর বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে ছিল ‘জ্বালা’, ‘দলিল’, ‘অফিসার’, ‘ভাঙা বন্দর’, ‘সাঁকো’ ইত্যাদি। ১৯৫১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পি সি যোশী এলাহাবাদ থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়ান ওয়ে’ সাময়িকীর জন্যে সংবাদ প্রতিনিধির কাজ করার অনুরোধ করেন ঋত্বিককে। তখন কলকাতা শহরে এক নাগাড়ে প্রায় ৩১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে তিনি ওই সাময়িকীর জন্যে যে প্রতিবেদন পাঠান সেখান থেকেই আত্মহত্যার ছ’টি ঘটনা নিয়ে লেখেন নাটক ‘জ্বালা’। নাট্যচর্চার মধ্যে থাকতে থাকতেই তিনি অনুভব করেন যে কয়েক শত মানুষের মধ্যে কিছু সময়ের জন্যে যে অভিঘাত তৈরি হয় নাটকের মাধ্যমে তার তুলনায় চলচ্চিত্র অনেক বেশি মানুষের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে বার্তা বহন করে যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই তাঁর চলচ্চিত্রে আসা। ফলে গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র সবই ছিল তাঁর কাছে এক অর্থে গৌণ, প্রধান বিষয় ছিল রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। ঋত্বিক নানা লেখায়, নানা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যেদিন চলচ্চিত্রের চেয়ে আরও বেশি কার্যকরী কোনও শিল্প মাধ্যম আসবে তখন তিনি চলচ্চিত্রের মুখে লাথি মেরে নতুন শিল্প মাধ্যমের কাছে পৌঁছে যাবেন। কোনও বিশেষ শিল্প মাধ্যমের জন্যে তাঁর বাড়তি দুর্বলতা ছিল না। তবে এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে চলচ্চিত্রের সাথে ঋত্বিকের কোনও পূর্বপরিচয় ছিল না। ঋত্বিকের একজন দাদা ছিলেন বিদেশ ফেরত চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক। তাঁর সূত্রেই প্রমথেশ বরুয়া সহ আরও নানা মানুষের যাতায়াত ছিল তাঁদের বাড়িতে। তাঁদের আলাপ আলোচনার সূত্রেই চলচ্চিত্র বিষয়ে ঋত্বিকের প্রাথমিক ধারণা তৈরি হওয়া। একটি সাক্ষাৎকারে ঋত্বিক বলেছিলেন, তাঁর অনুমান ভবিষ্যৎ সময়ে টেলিভিশন চলচ্চিত্রের চেয়েও দ্রুততার সাথে মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম একটি মাধ্যম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ঋত্বিকের দূরদর্শিতা নিঃসন্দেহে লক্ষণীয়। শতবর্ষে ঋত্বিক বেঁচে থাকলে হয়ত আজ সোশাল মিডিয়া বা শর্টফিল্ম বা রিলসকেও তাঁর শিল্পমাধ্যম করে নিতেন। একটা সময়ের পর কমিউনিস্ট পার্টি বা গণনাট্য সঙ্ঘের সাথে তাঁর সম্পর্কের ছেদ হয়। প্রকৃতপক্ষে, তিনিই নিষ্কাশিত হন সংগঠন থেকে। এতদসত্বেও, হাজারো ক্ষোভ ও অভিযোগ লালন করেও ঋত্বিক একদিনের জন্যেও তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে চ্যুত হননি। তিনি বিশ্বাস করতেন অরাজনৈতিক বলে কিছু হয় না। সমস্ত সৃষ্টি, সমস্ত অবস্থানই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক। কখনো কোনও একটি মতের সপক্ষ অথবা বিপক্ষ, প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন যেভাবেই হোক। লেনিন জন্মশতবর্ষে তাঁর নির্মিত ‘আমার লেনিন’ তথ্যচিত্রতে তিনি তাঁর রাজনৈতিক দায়বদ্ধতাকেই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। পার্টির বিভাজন বা সংস্কৃতি বিষয়ে পার্টির তৎকালীন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা ছিল অনেকই। তবু রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন গভীরভাবে দায়বদ্ধ।
দেশভাগ ও বাংলা বিভাজন নিয়ে ঋত্বিকের আমৃত্যু আবেগ ও যন্ত্রণাকে সাধারণত তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাঁর স্মৃতিমেদুরতা ও হৃদয়ের গভীর সংবেদের দিক থেকে বিবেচনা করা হয়। দেশভাগ বা বাংলা বিভাজন নিয়ে ঋত্বিকের যন্ত্রণাটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানেরই অভিব্যক্তি। ঋত্বিক শুধু যন্ত্রণার কথা বলেননি। তিনি দেশভাগ ও বাংলা বিভাজনকে রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তাঁর চলচ্চিত্রে বা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। ধর্মের ভিত্তিতে পৃথকত্বকে তিনি তীব্র বিরোধিতা করে বারবার বলেছেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতার কথা। তাঁর ‘কোমল গান্ধার’ চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে রেললাইন যেখানে গিয়ে বিভাজিত ভূখন্ডের শেষ সীমায় পৌছয় তখন আবহে শোনা যায় মাঝিদের ‘দোহাই আলি’ ‘দোহাই আলি’ সমবেত ধ্বনি। ওপার থেকে আসা একটি হিন্দু উদ্বাস্তুর হাহাকারের সাথে মুসলিম মাঝিদের ‘দোহাই আলি’ স্বরের মিশে যাওয়া আসলে দেশভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ বয়ানের প্রতিচ্ছবি। এখানে উদ্বাস্তু মানে শুধু পূর্ব থেকে পশ্চিম নয়, পশ্চিম থেকেও পূর্ব, এমন একটি ইঙ্গিত রেখে যায় যা রাজনৈতিক ঋত্বিকের সৃষ্টিকে দেশভাগ সম্পর্কিত অন্য অনেক সৃষ্টি থেকে আলাদা করে দেয়। ঋত্বিকের দুই বাংলা এক করার আকুলতাকেও অনেকে মনে করে ভৌগোলিক সংযুক্তির জন্যে আকুলতা হিসাবে। ঋত্বিক তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাঁর কাছে দুই বাংলা এক করা মানে রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক সংযুক্তি নয়, তিনি চান সাংস্কৃতিকভাবে এক হওয়া। এভাবে সাংস্কৃতিকভাবে এক হতে চাওয়ার অর্থ হয়ত দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতিকল্পে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐক্যের কথা যা শুধু এপার ওপার বাংলা নয়, দু’টি বাংলার অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক রাজনীতির জন্যেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে ঋত্বিক ঢাকার চলচ্চিত্রের নিজস্ব পথের কথাও বলেছেন, অর্থাৎ বাঙালিত্বের ঐক্যের মধ্যেও বৈচিত্রের সম্পর্কেও তাঁর সচেতনতা এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। শিল্পে ঐতিহ্য ও পরম্পরার কথা বলতে গিয়ে ঋত্বিক বার্গম্যানের চলচ্চিত্রের কঠোর সমালোচনা করেছেন এই বলে যে বার্গম্যান যখন অতীতের বিষয় নিয়ে আসেন তখন তার সাথে ঘটমান বর্তমানের কোনও সংলাপ রচনা করেন না। এটাকে তিনি বলেছেন অতীতে ফিরে যাওয়া বলে। তিনি শিল্পে ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে সমকালের সাথে সম্পর্কিত করে উপস্থাপন করার সপক্ষেই থেকেছেন। এভাবেই তাঁর বিভিন্ন চলচ্চিত্রে যেভাবে আর্কিটাইপাল মাতৃপ্রতিমা ফিরে ফিরে এসেছে তা এসেছে সমকালের সন্দর্ভেই।  এমনকী রবীন্দ্রনাথের জীবনের পুনরুত্থানবাদী ভাবনার সময়কার লেখা গান ‘কেন চেয়ে আছো গো, মা’-কে তিনি ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবিতে যেভাবে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে পুনর্জন্ম দিয়েছেন সেটাই বাঙালি শ্রোতার কাছে স্থায়ী অর্থ নিয়ে থেকে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ঋত্বিকের চলচ্চিত্রের আগে এই গানটি সাধারণভাবে শ্রুতও ছিল না।
রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে ঋত্বিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান তাঁর লেখা ‘এ থিসিস অন কালচারাল মুভমেন্ট’। যদিও ওই দলিলটি পেশ হয়েছিল তাঁদের পার্টি শাখার তরফে, কিন্তু ওই শাখারই অপর সদস্য তাঁর স্ত্রী সুরমা ঘটক বলেছেন, তাঁদের শাখার পক্ষে পেশ করা দলিলটি এককভাবে ঋত্বিকই লিখেছিলেন। বিগত শতকের নয়ের দশকে সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরে আবিষ্কৃত ওই দলিলটি সম্ভবত কখনোই সাংগঠনিক স্তরে আলোচিত হয়নি। নয়ের দশকে উদ্ধার হওয়া এই দলিলটি আজকের সংস্কৃতি আন্দোলনের জন্যে একটি মূল্যবান সহায়ক পাঠ। ঋত্বিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গী সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও তার সংগঠনের কর্মপদ্ধতি ও আদর্শ নীতিমালা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রেখেছিলেন। ঋত্বিক সেই দলিলে সমালোচনা করে বলেছিলেন যে কমিউনিস্ট পার্টি সংস্কৃতির বিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করতে পারেনি। বিগত শতকের পাঁচের দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলন মতাদর্শ বিতর্কে এতটাই দ্বিধাবিভক্ত ছিল যে তখন সাংস্কৃতিক আন্দোলন সম্পর্কিত স্বতন্ত্র নীতিমালা গ্রহণ করার মতো অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে ১৯৫৪ সালে ঋত্বিক যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব রেখেছিলেন, তার বহু বিষয় আজকের সময়ের নিরিখেও একটি নীতিগত অবস্থান ব্যক্ত করে।
এ বছর ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ, তাঁর সৃহৃদ ও সহযোদ্ধা সলিল চৌধুরিরও জন্মশতবর্ষ।  স্বতন্ত্রভাবে সঙ্গীত বা চলচ্চিত্র চর্চায় তাঁদের অবদানের চর্চার মাধ্যমে শতবর্ষ উদ্‌যাপন না করে আজকের সময়ে নয়া উদারবাদের সাংস্কৃতিক আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে সামগ্রিকভাবে বামপন্থী সাংস্কৃতিক রাজনীতির একটি বিকল্প আন্দোলন গড়ে তোলার চর্চা করাই হবে এঁদের প্রতি জন্মশতবর্ষে যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য। সেখানে নিশ্চয়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে ঋত্বিক ও সলিলের সৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিষয়ে তাঁদের উত্থাপিত নানা মতাদর্শগত প্রশ্ন।
 

Comments :0

Login to leave a comment