Sagar Mela

কোভিড হলেও গঙ্গাসাগর মেলা হবে, সাফ কথা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য

কোভিড হলেও গঙ্গাসাগর মেলা হবেই, জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। 
রূপ বদল করে করোনার নয়া চেহারা নিয়ে ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্ব। এদিনই প্রধানমন্ত্রী কোভিড নিয়ে বৈঠক করেছেন। এরাজ্যেও স্বাস্থ্য সচিব সকালে বৈঠক করেন জেলাশাসক ও সিএমওএইচ’দের নিয়ে। সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে মুখ্য সচিব নিজে স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষকর্তা ও এরাজ্যের কোভিড মোকাবিলায় গঠিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আরও একদফা বৈঠক করেন। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই কোভিডের নয়া বিপদ নিয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ গেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকেও। 


এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও কোভিডের বিপদকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। এদিন সন্ধ্যায় রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘আমার তো মনে হয়েছিল, করোনা শেষ হয়ে গেছে। তারপরও আবার সেই করোনা চায়নাতে হচ্ছে। দিল্লি, কেরালায় তো হয়েছে। সুতরাং দিল্লি থেকে এখানে আসতে কতদূর লাগবে!’’ 
বিপদের আশঙ্কার কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনার পর সাংবাদিকরা তাঁর কাছে এই উৎসবের মরশুম ও গঙ্গাসাগর মেলা আয়োজন নিয়ে সরকার কী ভাবছে জানাতে চায়। তার উত্তরেও মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘কোভিড হলেও গঙ্গাসাগর মেলা হবে। সিস্টেম মেনেই হবে।’’ 

 


সামনে বর্ষশেষের উৎসব। সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলা। গত বুধবারই নবান্ন সভাঘর থেকে মেলা প্রস্তুতির বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন, এবার সাগর মেলায় ৩০ লক্ষের ওপর মানুষ আসতে পারে। এদিন রাজভবনে রাজ্যপালের কাছে বড়দিন ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে সাংবাদিকদের কাছে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ আমাদের এখানে করোনা হচ্ছে না। লোকেরা খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদি করোনা আসে, তখন নিশ্চয় বলবো, মাস্ক পরুন। ব্যবস্থা নিন। গঙ্গাসাগর মেলায় লক্ষ, লক্ষ মানুষ যায়। এত লোককে তো নিয়ম মানার কথা বলা সম্ভব নয়।’’ মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যেই পরিষ্কার করোনার নতুন বিপদ এরাজ্যে না আসা পর্যন্ত রাজ্য সরকার কোনোরকম বিধি তৈরি করতে নারাজ। 


কোভিডের নয়া বিপদ সম্পর্কে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের বক্তব্য,‘‘এবারের সংক্রমণ সবসময় জ্বর দিয়ে শুরু হয় না। গলায় ব্যাথা নাও হতে পারে। কারণ, এই ভাইরাস গলায় সবসময় বাসা বাঁধে না। সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়। সেইজন্য চিরাচরিত কোভিড আক্রান্তদের মতো সংক্রমিতদের জ্বর নাও হতে পারে। কিন্তু সংক্রমিত হলে দুর্বল হয়ে পড়বে। গা-হাত পা ব্যাথা, কাশি, জ্বরের উপসর্গ থাকলেই কোভিড পরীক্ষার করা দরকার।’’ কোভিডের নতুন যে প্রজাতি এবার হানা দিয়েছে তার সংক্রমণ ক্ষমতা আগের প্রজাতির থেকে ঢের বেশি। 


বিশিষ্ট চিকিৎসক ও রাজ্যের কোভিড কমিটির অন্যতম সদস্য ডা সুকুমার মুখার্জির বক্তব্য,‘‘ তিনটি বিষয়ের ওপর এখনই জোর দেওয়া দরকার। প্রথমত টেস্টিং। নমুনা পরীক্ষা না বাড়ানো হলে আমরা কিছুতেই সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাবো না। দ্বিতীয়ত, বুস্টিং। বুস্টার ডোজ নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়াতে হবে। এখনও পর্যন্ত যারা বুস্টার ডোজ যারা নেননি তাদের নিতে হবে। তৃতীয়ত, জিন সিকোয়েন্সিং। সিকোয়েন্সিং করলে জানা যাবে, বিএফ ৭ প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ কী না।’’ 
স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এদিনই কোভিডের নয়া সংক্রমণ নিয়ে জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতেও স্পষ্ট করা হয়েছে এরাজ্যে কোভিড আক্রান্তে নমুনাকে পাঠাতে হবে জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য।  এমনকি গত এক মাসে আরটি-পিসিআর টেস্ট হওয়া সব রিপোর্টকে একত্র করে জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন আরটি-পিসিআর সরকারি ল্যাবরেটরি কোথায় জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠাবে তারও তালিকা করে দেওয়া হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে গত এক মাসের সংক্রমিতদের ‘সিটি ভ্যালু’ সহ আরটি-পিসিআর রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন সেন্টারে। একইভাবে কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু হাসপাতালেও থাকছে জিনোম সিকোয়েন্স টেস্টের ব্যবস্থা। 

 


রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি রোগীদের আরটি-পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোভিডের আগামী সংক্রমণ রুখতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে জেলা হাসপাতাল, জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক, আরটি-পিসিআর ল্যাবরটরিকে তৈরি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে কোভিডের নয়া সংক্রমণ যে আগামী দিনে এরাজ্যেও আছড়ে পড়তে পারে তারজন্য প্রশাসনিক তৎপরতা আছে। কিন্তু তারপরেও এরাজ্যে বর্ষবরণের আনন্দ কিংবা গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন নিয়ে সরকার কোনও পদক্ষেপ এখনই নিতে চাইছে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন,‘‘ যদি কোভিড আসে আমরা দেখব। ট্যাকল করব।’’

Comments :0

Login to leave a comment