Salim in Sahid Minar

যারা ভয় দেখাতো তারা আজ ভয় পাচ্ছে : সেলিম

রাজ্য

সরকারি কর্মীদের মহা সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম। ছবি দিলীপ সেন

‘‘মানুষের মধ্যে ভয় কাটছে। আগে যারা ভয় দেখিয়েছিল তারা আজ ভয় পাচ্ছে।’’ ভিড়ে ঠাসা শহীদ মিনার ময়দানে সরকারি কর্মীদের মহা সমাবেশের মঞ্চ থেকে বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

সরকারি কর্মীদের সভা থেকে তৃণমূল এবং বিজেপিকে সরাসরি নিশানা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘রেড রোডে যেই ধর্ণা হচ্ছে তাকে ধিক্কার জানাই। কাল ইডি সিবিআই দপ্তরে যারা হাজিরা দিতে যায় তারা এসেছিল আপনাদের (সরকারি কর্মীদে) ধমকাতে চমকাতে। আপনারা মাথা নত করেননি।’’ গতকাল রেড রোডের মঞ্চ থেকে সরকারি কর্মীদের চোর ডাকাত বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘চোরেদের রাণী মাস্টারমশাই, সরকারি কর্মচারিদের চোর বলছে। আর কাল কলকাতা শহরের রাস্তা দিয়ে যখন তৃণমূলের বাস গুলো যাচ্ছিল সেই গুলো দেখে লোকে চোর চোর বলছিল।’’

মূখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে এদিন সেলিম বলেন, ‘‘হিন্দু এবং উর্দু অভিধানে চোরের স্ত্রী লিঙ্গ আছে। কিন্তু আমাদের বাংলা অভিধানে চোরের কোন স্ত্রী লিঙ্গ নেই। আমি তাই বাংলার শিক্ষকদের অনুরোধ করছি আপনারা একটা চোরের স্ত্রী লিঙ্গ ভেবে তৈরি করুন।’’ সেলিম যখন এই কথা বলছে তখন স্লোগান হাততালিতে ফেটে পড়ছে ময়দান। রাস্তার ধারে লাগানো মমতার ধর্ণার মঞ্চের মাইকের আওয়াজ তাতে ধামা চাপা পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘‘সারদার সময় নিজেকে ঢাকতে আমরা সবাই চোর স্লোগান তুলে রাস্তায় হাঁটেন মমতা ব্যানার্জি। আজও তাই নিজেকে ঢাকতে সবাইকে চোর বলছেন।’’

বিজেপিকে নিশানা করে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘যারা (বিজেপি) আজ আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর নাটক করছে, তাদের গুরু (প্রধানমন্ত্রী) কেন্দ্রে বসে কর্মচারিদের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ফরমান জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে যে কোন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারবে না।’’

মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ রঞ্জন ভ্টাচার্য্য এবং কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য সরকারি কর্মীদের আমার প্রিয় সরকারি কর্মী বা সম্মানীয় মাস্টারমশাই বলে সম্বোধন করতেন। আর এখন মুখ্যমন্ত্রী তাদের কখনও চোর বলছেন বা কখনও সারমেয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই যত চোরেদের ভীড়। যে যত বড় চোর সে মুখ্যমন্ত্রীর তত কাছের।’’

বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন কেন্দ্র রাজ্যকে বঞ্চিত করছে, উনি ধর্ণায় কেন বসছেন সংবিধান মেনে আদালতে যাক। যেমন সরকারি কর্মীরা ডিএ’র দাবি নিয়ে আদালতে যায় এবং হাই কোর্ট তাঁদের দাবিকে মান্যতাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য জুড়ে যেই দুর্নীতি চলছে তা পরিকল্পিত দুর্নীতি। সমাবেশ থেকে দরকারি কর্মীদের প্রতি তিনি বার্তা দেন দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। তাঁর কথায় বুধবার শহীদ মিনারে তৃণমূল যুব এবল ছাত্র শাখার যেই সভা হয়েছে তার আসল পরিকল্পনা ছিল ধর্ণা মঞ্চ তুলে দেওয়ার।

 

এদিনের সমাবেশ থেকে অভিষেক ব্যানার্জির বিপুল সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। তিনি বলেন, ‘‘হার্ডওয়ারের ব্যাবসা করে কিভাবে এতো বিপুল সম্পত্তি করা যায়?’’ মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে কৌস্তভ বলেন, ‘‘২০১১ সালের আগে ফাইলে দেখিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলতেন যেই সিপিআই(এম)’র সব দুর্নীতির তদন্ত তিনি করবেন। কিন্তু হয়নি। আজ তাই চ্যালেজ্ঞ করছি সাতদিনের মধ্যে প্রমান করুন যে মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরীরা চোর। তাঁদের জেলে পাঠান। না হলে পদত্যাগ করুন।’’ 

সভায় সভাপতিত্ব করেন আন্দোলনকারিদের পক্ষ থেকে বিপুল রায়, সভার কাজ পরিচালনা করেন নির্ঋর কুণ্ডু। এছাড়া সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভাস্কর ঘোষ। 

গত ২৭ জানুয়ারি থেকে টানা শহীদ মিনারে ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। এর মধ্যে ৪২ দিন অনশন করেন তাঁরা। এদিনের সমাবেশ থেকে জানানো হয়েছে দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে, প্রয়োজনে তাঁরা বৃহত্ত্বর আন্দোলনের পথে পা বাড়াবে।  

ছবি দিলীপ সেন

Comments :0

Login to leave a comment