জয়ন্ত সাহা: কোচবিহার
কোচবিহারের উত্তম ব্রজবাসীকে নিশ্চয়ই মনে আছে রাজ্যবাসীর! বিজেপি পরিচালিত আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আর এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে উত্তম ব্রজবাসীকে নিয়ে কাগুজে লড়াই শুরু হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিনহাটা-২ ব্লকের চৌধুরিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সাদিয়ারকুঠু গ্রামের বাসিন্দা উত্তম ব্রজবাসীর বিরুদ্ধে আসাম সরকার এনআরসি’র জন্য ট্রাইবুনাল নোটিস পাঠায়। সেই নোটিস কপি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তম ব্রজবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিল সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।
এরপরে জুলাই মাসে হঠাৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তার দলের নেতারা উত্তম ব্রজবাসীকে নিয়ে নরম গরম বিবৃতি দিতে শুরু করে। অন্যদিকে আসাম প্রশাসন দাবি করে উত্তম ব্রজবাসী বাংলাদেশ থেকে আসামে কাজের জন্য গিয়েছিল। তাই তাকে ট্রাইবুনালে হাজির হতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এরপর উত্তম ব্রজবাসীকে একেবারে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে নিয়ে তোলেন। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী উত্তমকে পাশে নিয়ে জানিয়ে দেন আসামের এনআরসি ট্রাইবুনালে হাজির হবে না উত্তম।
জুলাই মাসের সেই টানাপোড়েনের মাঝে দাঁড়িয়ে উত্তম বারবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তিনি জন্মসূত্রেই দিনহাটার বাসিন্দা। কাজের জন্য আসামে গিয়েছিলেন দিনহাটা থেকে।
অসহায় উত্তম ব্রজবাসীকে নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি অনেক রাজনীতি করলেও কেউই কিন্তু উত্তমের হাতে কোনও প্রমাণপত্র তুলে দেয়নি।
এবারে এসআইআর’র ঘোষণা হতেই অবশ্য উত্তম ব্রজবাসী এবং তাঁর পরিবার নিশ্চিন্ত। কারণ নির্বাচন কমিশন ২০০২ সালের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে জ্বলজ্বল করছে উত্তম ব্রজবাসী এবং তাঁর পরিবারের নাম।
দুই ভোটার তালিকাতেই নাম থাকায় স্বস্তিতে পরিবারের সবাই।
দিনহাটা ৭ নং বিধানসভা কেন্দ্রের সাদিয়ালকুঠি এপি বিদ্যালয়ের বুথ কেন্দ্রে নাম রয়েছে উত্তম ব্রজবাসীর। সময়ের ব্যবধানে শুধু বদলে গেছে বুথের নাম্বার।২০০২ সালে ওই স্কুলের বুথের নাম্বার ছিল ৯৯ নম্বর। আর ২০২৫ সালে ওই বুথের নাম্বার হয়েছে ১৮৭। উত্তম ব্রজবাসীর নাম ২০০২এর ভোটার তালিকায় ক্রমিক নম্বর ৪৩০ এ রয়েছে। এবং তাঁর পিতার নাম নরেন্দ্রনাথ ব্রজবাসী তখন জীবিত। তাঁর ক্রমিক নাম্বার ৪২৮। মা সাবিত্রী ব্রজবাসীর ক্রমিক নাম্বার ৪২৯।
এদিকে এসআইআরের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যে ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতেও উত্তম ব্রজবাসীর নাম রয়েছে ১২২ ক্রমিক নম্বরে। তাঁর ভোটার সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর হলো WB/01/007/294093
উত্তম ব্রজবাসী বলেন, দুই ভোটার তালিকার জেরক্স কপি নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। আসাম সরকারের নোটিস পেয়ে পরিবারের সবার ঘুম উবে গিয়েছিল। আমরা গরিব মানুষ। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র কোথায় পাবো? আসাম সরকার এমনভাবে চাপ দিচ্ছিল, যেন আমি বা আমার পরিবারের কেউই ভারতের নাগরিক নই। অথচ সেই সময়ে বারবার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সব দেখিয়েছি। ওরা মানতেই চায়নি সেসব এখন আবার সেই ভোটার তালিকায় নাম থাকাকেই মান্যতা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গরিব মানুষদের নিয়ে সরকারের এই ছেলেখেলা বন্ধ হওয়া দরকার।
উত্তম কুমার ব্রজবাসীর নোটিস পাবার পরেই মাথাভাঙা-২ ব্লকের লতাপাতা গ্রামের নিশিকান্ত দাস, তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বাঁশরাজা গ্রামের বাসিন্দা মমিনা বিবি এবং তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকারের কাছেও এসেছিল আসাম রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নোটিস।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নিজের এলাকায় কাজ না পেয়ে এরা আসামে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। আর আসামের বিজেপি সরকার এদের মুখে বাংলাভাষা শুনেই এদের প্রত্যেককেই বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ এতদিন পর দেখা যাচ্ছে এদের এবং এদের পরিবারের সদস্যদের নাম ২০০২ এর ভোটার তালিকায় রয়েছে। আসামের বিজেপি সরকারের ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন এরা প্রত্যেকেই।
উল্লেখ্য উত্তম ব্রজবাসীকে নিয়ে যখন আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এবং এরাজ্যের মুখমন্ত্রীর রাজনীতির দড়ি টানাটানি চলছে তখন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কোচবিহারে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকদের স্পষ্ট করে বলেছিলেন বিজেপি আর তৃণমূলের নোংরা রাজনীতির শিকার হচ্ছেন এরাজ্যের গরিব মানুষ। যারা এরাজ্যে কাজ না পেয়ে আসামের মতো ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। এই মানুষদের পাশে থাকবে লাল ঝান্ডা।
 
 
                                         
                                    
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0