ট্যাংরার পর হালতু। একই পরিবারের তিন সদস্যের অস্বাভাবিক মৃত্যু। ঘটনাটি ঘটেছে হালতুর পূর্বপল্লী এলাকা। মঙ্গলবার সকালে ৪০ বছর বয়সি সোমনাথ রায় পেশায় অটোচালক। তার স্ত্রী সুমিত্রা রায় (৩৫) এবং আড়াই বছরের ছেলে রুদ্রনীল রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় পূর্বপল্লী এলাকায় তাদের বাড়ি থেকে।
স্থানীদের দাবি প্রতিদিন সকালে অটো নিয়ে বেরিয়ে যেতেন সোমনাথ কিন্তু এদিন সে বেরোয়নি। ঘরের দরজার দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল। সোমনাথ যেই বাড়িতে থাকতেন তা তার মামার বাড়ি। মায়ের অংশে সে থাকতেন পরিবার নিয়ে। আর থাকতেন মামা এবং মাসির পরিবার।
বেলা হয়ে গেলেও তাদের দেখতে না পেয়ে ডাকা ডাকি করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা কসবা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে দেখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন। আড়াই বছরের ছেলের সঙ্গে নিজের দেহ বেঁধে তারপর আত্মহত্যা করেছেন সোমনাথ। পাশে ঝূলছে তার স্ত্রীর দেহ। পুলিশ সূত্রে খবর তাদের ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে সুইসাইট নোট। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন সেখানে একজন পাওনাদার সহ মামা ও মামির নাম উল্লেখ করা আছে। তিনি জানিয়েছেন, ওই নোটে লেখা ছিল তার মামা প্রদীপ কুমার ঘোষাল এবং নীলিমা ঘোষাল তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ি। মামা, মামি দুজনেই পুলিশে কাজ করতেন।
রামলাল বাজার গড়িয়াহাট রুটে অটো চালাতেন ওই ব্যাক্তি। দুটি অটো ছিল তার। একটি নিজে চালাতেন, অন্যটি ভাড়া দিতেন। ওই রুটের কয়েকজন চালক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন তারা জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য বাইরে থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন সোমনাথ। সেই পাওনাদার বার বার টাকা চাইতে বাড়িতে আসতেন। এছাড়া তিনি নাকি ওই অটো চালকদের বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন সম্পত্তি নিয়ে তার মামা মামির সাথে ঝামেলা চলছে।
সোমনাথে অটো ভাড়ায় যিনি চালাতেন সেই মুরারি পাইক বলেন, ‘‘আমাকে কাল দুই হাজার টাকা দিয়েছিল গাড়ির জন্য। তারপর আর কোন কথা হয়নি। ভালো মানুষ ছিলেন।’’
মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে আসেন সুমিত্রা রায়ের বাবা বিশ্বনাথ ভৌমিক ও মা পূর্ণিমা ভৌমিক। তারা জানান, সম্পত্তি নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে অশান্তি চলছিল। বিশ্বনাথ ভৌমিক জানান, ‘‘সোমনাথের বাবা-মা থাকার জন্য জমি দিয়ে গিয়েছিলেন। মামা-মামি এসে দাবি করেন, ওই জমি ভাগ হবে। তিন-চার বছর ধরে মেয়ে-জামাইয়ের উপর অত্যাচার করত মামা-মামি।’’
সূত্রের খবর সোমনাথ ছোট বেলা থেকেই মামার বাড়িতে মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন সোমনাথের বিয়েও তার মামা মামি দিয়েছিলেন। কোন সেই ভাবে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়নি বলে জানাচ্ছেন তারা।
তবে সুইসাইট নোটে দুজনের নাম থাকায় মামা, মাসি এবং মামিকে আটক করেছে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মামা মামি জানিয়েছন দেনার দায় সোমনাথ ও তার পরিবার আত্মহত্যা করেছে। পাওনাদারের নাম এখনও জানা যায়নি। গোটা বিষয়ের তদন্ত করছে কসবা থানা।
Comments :0