Md Salim Siliguri

রুজি-রুটির সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই ভাঙবে ‘বাইনারি’: সেলিম

রাজ্য

সোমবার শিলিগুড়িতে কমরেড অনিল বিশ্বাস ভবনে মহম্মদ সেলিম, সমন পাঠক এবং জীবেশ সরকার।

অনিন্দিতা দত্ত

‘‘নির্বাচনী ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম থেমে থাকবে না। জনতাকে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ করছি। শ্রমিক-কৃষক-যুবক-ছাত্র-মহিলা তাঁরাই রুজি-রুজির দাবিকে সামনে রেখে এই বাইনারি ভাঙবেন।’’
সোমবার দার্জিলিঙে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি জানান উত্তরবঙ্গেও চা-বাগান বা নদীর চর থেকে উচ্ছেদ, নদী ধ্বংস করার মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার করা হবে।   
তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সত্যকথন সব জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞাপন, টাকা, প্রচারে অনেক সময় ভুল ধারণা হয়। পরে আমরা যখন যাচ্ছি অনেকেই তা বলছেন।’’ 
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণ রয়েছে নির্বাচনী ফলাফলের। নির্বাচনে প্রক্রিয়াকে এমনভাবে কারসাজি করা হয়েছে যাতে যাদের রেফারি হওয়ার কথা তারা গোলকিপার হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে পুলিশ রয়েছে , নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কর্মী, কাউন্টিং স্টাফ রয়েছে। দুই, ভয়-ভীতি। বোঝানো হয়েছে আমাদের সরকার রয়েছে ভোটের পর আমরা দেখে নেব। এই যে বুলডোজার নিয়ে এখন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, হকার উচ্ছেদ হচ্ছে, ঘরবাড়ি ভাঙা হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তারাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষ যাতে মতদান না করতে পারেন তার জন্য ভয় দেখানো।  তিন, লোভ দেখানো হয়েছে।  চার, সরকারি প্রকল্পকে দলের কর্মসূচি বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। নবান্ন থেকে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। আর দলের সভা থেকে সরকারের প্রকল্প ঘোষণা করা হচ্ছে। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যা হয়, সরকার এবং দলের ফারাক কিছু নেই।’’
সেলিম জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে  নির্বাচনী পর্যালোচনা চূড়ান্ত করা হবে। 
সেলিম বলেন, ‘‘আমাদেরও কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। আসন সমঝোতায় দেরি হয়েছে। জনতার কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। আবার যেখানে জয়ের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার জন্য যতটা পৌঁছানো দরকার ছিল, সেখানে রামনবমীকে কেন্দ্র করে যেভাবে বিজেপি এবং তৃণমূল দাঙ্গা সংগঠিত করল, পুলিশের সাহচর্যে, ভোটকে হিন্দু-মুসলিমে বিভাজিত করল। গোটা দেশে এই বিভাজন হলো না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অনেকাংশেই ধর্মাশ্রিত ভোট করা হলো।’’ 
উত্তরবঙ্গ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা প্রচার করেছি, লড়াই করেছি। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জমির লুট, মানুষকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে  গরিব মানুষ, আদিবাসী মানুষ উচ্ছেদ হচ্ছেন। সরকারি জমি, বাঁধের জমি, চরের জমি নিলাম করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এই অন্যায় রুখতে, চা বাগান থেকে নদীর জমি বিক্রি রুখতে লড়াই হবে। নদীগুলিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। নদীবুকে বেআইনি খনন চলছে। যে কোনও সময় হড়পা বান এলে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত করেছি প্রকৃতি এবং পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই জোরদার করা হবে।’’   
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘যে ফল আশা করেছিলাম তা হয়নি। গত কয়েকটি নির্বাচনে একই অভিজ্ঞতা। আবার আন্দোলন ও সংগ্রাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমর্থন কিছুটা বাড়ছে। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূল যভাবে ধর্ম, ধর্মীয় উৎসব ব্যবহার করে প্রতিটি ঘটনাকে চুরি থেকে ধর্ষণ প্রতিটি ঘটনাকে ধর্মীয় চেহারায় হাজির করছে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক দিক থেকে না দেখে তা করা হচ্ছে। আমরা দেখেচি অযোধ্যা, বেনারস, প্রয়াগরাজে বুলডোজার বা ধর্মীয় উন্মাদনার প্রচার করেও শেষরক্ষা করতে পারেনি বিজেপি। এখানে মমতা ব্যানার্জি আরএসএস’র সঙ্গে থেকে তা করেছেন। মমতা ব্যানার্জি ধর্মকে ব্যবহার করছেন। সেই সঙ্গে ভাষা, জাতি, জনজাতির মতো পরিচয়ও ব্যবহার করছেন। আরএসএস’র পরিকল্পনায় এই ভাগাভাগিও করছেন। যাতে মানুষের কন্ঠস্বর দুর্বল হয়। দুর্নীতি বাড়ে। এই রাজনীতিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে।’’ 
সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment