Uttarkashi Tunnel

বাধার মুখে বাড়ল শ্রমিকদের সুড়ঙ্গবাস

জাতীয়

শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না আতঙ্কের প্রহর। গোদী মিডিয়া বিরাট বিরাট ‘ব্রেক থ্রু’ করলেও ১২ দিনের দিনও উত্তরকাশীর সিলকিয়ারা টানেলের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে আটকে পড়া শ্রমিকরা খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও তাঁদের সুস্থ অবস্থায় বের করে আনা যায়নি। যদিও এদিন সকাল থেকে গত কয়েকদিনের মতোই একই ঢঙে ‘লাইভ আপডেট’-এ ভারী হয়ে ওঠে সংবাদ মাধ্যমগুলির ওয়েবসাইট। প্রধানমন্ত্রী কতবার ফোন করলেন, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী টানেলের বাইরে এলেন কি না, এমনই রকমারি খবরে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে দিনভর। সেইসঙ্গে আর মাত্র ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা, ফের আশ্বাসে বুক বাঁধেন শ্রমিক-পরিজনরা। কিন্তু সুখবরের চিঠি আসেনি রাত পর্যন্ত। পাহাড় কেটে বানানো সুড়ঙ্গের ভিতর ধসে আটকে যাওয়া শ্রমিকদের উদ্ধার করে আনা যে খুব সামান্য কাজ নয়, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু প্রথম দিন থেকে ‘তুড়ি মেরে বের করে আনব’ মেজাজ দেখানো বিজেপি প্রশাসন লেজে গোবরে হয়ে ‘আর মাত্র কয়েকঘণ্টা...’ কাউন্টডাউনের আশ্রয় নেওয়ায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। শ্রমিকদের জীবনকে বাজি রেখে মোদীর আত্মপ্রচারের কায়দাও চূড়ান্ত নিন্দিত হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ষদ (এনডিএমএ) এদিন সন্ধ্যায় বলেছে, ‘‘হয় কয়েক ঘণ্টায়, নয়তো আগামীকাল শ্রমিকদের বাইরে আনা যাবে।’’ তার আগে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা আটটার মধ্যে শ্রমিকদের বের করে আনা হবে। কিন্তু সাড়ে আটটা নাগাদ খবর পাওয়া যায়, উদ্ধারকাজ ফের থমকে গিয়েছে। সুড়ঙ্গের ভিতর লোহার খোলস ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যা আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। 
উদ্ধারের মন্থর গতি, পদে পদে বাধা, শ্রমিকদের ‘আমরা খুব খারাপ আছি’ আর্তনাদ বারবার মোদী বাহিনীর ব্যর্থতাকে প্রকট করে তোলায় সংবাদমাধ্যমে এই খবরও প্রচার করা হচ্ছে, শ্রমিকরা টানেলের ভিতর কতটা মজায় আছেন! তাঁরা তিন পাত্তি খেলছেন, পাইপের ভিতর দিয়ে জল, খাবারের সঙ্গে তাঁদের তাসও পাঠানো হয়েছে— প্রচারের বহর ঠিক এতটাই তুঙ্গে। ৪১ জন নির্মাণ শ্রমিকের প্রাণ যেখানে সুতোয় ঝুলছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর গায়ে যাতে একটুও আঁচড় না পড়ে তার জন্য সবরকমের সুবন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু এদিন রাত পর্যন্তও সেই ১২ মিটার পথ ফুঁড়ে বের করে আনা যায়নি শ্রমিকদের। বুধবার রাতেও একইভাবে বলা হয়েছিল, আর মাত্র ১২মিটার, শ্রমিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এদিকে, আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স এদিন বলেন, ‘‘আড়াআড়িভাবে খননের জন্যও আমরা প্রস্তুত। শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর রাস্তাগুলি একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত।’’ 
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রাক্তন উপদেষ্টা ভাস্কর খুলবে ঘটনাস্থল থেকে সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য যে অংশে ড্রিলিংয়ের কাজ চলছে, সেখানে হঠাৎই কিছু লোহার জাল দেখা যায়। যার জেরে ড্রিলিং বন্ধ করে দিতে হয় এবং থমকে যায় উদ্ধারের প্রক্রিয়াও। প্রায় ছ’ঘণ্টা বন্ধ ছিল খোঁড়ার কাজ। বুধবার রাতে ৪৫ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে বন্ধ করে দিতে হয় ড্রিলিং। ৫৭ মিটার পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ ফুঁড়ে প্যাসেজ তৈরি না করতে পারলে শ্রমিকদের বের করে আনা অসম্ভব। এদিন দুপুর দু’টো নাগাদ মাত্র ১.৮ মিটার ড্রিলিং করা গিয়েছে। খুলবে জানান, লোহার যে জালগুলি পথ আটকে রেখেছিল তা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে কেটে ফেলা হয়। অগার মেশিন দিয়ে ড্রিল করে ধাপে ধাপে স্টিলের পাইপ ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করছে। সম্পূর্ণ ফুঁড়ে ফেলতে পারলেই এনডিআরএফ কর্মীরা সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢুকে বের করে আনতে পারবেন শ্রমিকদের। কম উচ্চতার হুইলড স্ট্রেচারে তাঁদের বের করে আনা হবে। 
এনডিএমএ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সঈদ হাসনাইন দাবি করেন, ‘‘লম্বালম্বিভাবে খনন কাজের সময় আরও তিন-চারবার বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু উদ্ধারের টাইমলাইন বেঁধে ফেলা কঠিন।’’ এদিন সকালে সরকারি বুলেটিনে জানানো হয়, ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এনএইচআইডিসিএল) সিলকিয়ারার দিক দিয়েই ফের লম্বালম্বিভাবে ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু করে। সেইসময় পাইপের সামনে ধাতব বস্তু চলে আসায় তা ফের আটকে যায়। আরও আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর ওই ধাতব বস্তু সরানো গিয়েছে। উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা কয়েকজন নিজেরাই পাইপের ভিতর নেমে যান এবং উলটো দিকের মুখ সাফ হয়েছে কি না যাচাই করে আসেন। 
টানেলের ভিতর শ্রমিকদের অক্সিজেনের কোনোরকম ঘাটতি হচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারের যেগুলি কর্তব্য বা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যেমন, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা, অস্থায়ী হাসপাতাল— সেগুলির বন্দোবস্ত নিয়েও বিস্তর দামামা বাজানো হয়েছে এদিনও।

Comments :0

Login to leave a comment