Maoist attack

মাওবাদী বিস্ফোরণে উড়ে গেল গাড়ি, মৃত দশ পুলিশকর্মী

জাতীয়

কাছের দারভা ডিভিসনে মাওবাদীদের লুকিয়ে থাকার খবর পেয়েই তাঁরা অভিযানে বেরিয়েছিলেন। ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় একটি ভাড়ার মিনিভ্যানে চেপে মাওবাদী মোকাবিলায় গিয়েছিলেন ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি)-র দশ জওয়ান। বুধবার সে সময় মাওবাদীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ে থাকা সেই ভ্যানটিকে উড়িয়ে দিলে ওই দশ পুলিশকর্মীর সঙ্গেই মৃত্যু হয়েছে ওই ভাড়াগাড়ির চালকেরও। গত দু’বছরের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর মাওবাদীদের এটাই সবচেয়ে বড় হামলা বলে পুলিশের দাবি।
দুপুর একটা নাগাদ জেলার আরানপুর থানা এলাকায় আইইডি ব্যবহার করে মাওবাদীরা বিস্ফোরণটি ঘটায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে ভাড়া করা ওই মিনিভ্যানটি অন্তত ২০ফুট উচ্চতায় উড়ে যায়। রাস্তার একদিকে প্রায় কুড়ি ফুট জায়গা জুড়ে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানটায় গর্তের গভীরতা প্রায় ১০ ফুট। বস্তার রেঞ্জের আইজি সুন্দররাজ পি জানিয়েছেন, দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে আরানপুর ও সামেলি গ্রামের মাঝে ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই দশ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছে মালটি-ইউটিলিটি ভেহিকেলের ড্রাইভারও। 
ঘটনাস্থল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাওবাদীরা প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল। গাড়িটির ধ্বংসাবশেষ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পুলিশকর্মীদের ছিন্নভিন্ন দেহাংশ। পুলিশ সূত্রের খবর, অন্তত ৪০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল। টেরিটোরিয়াল আর্মির প্রাক্তন প্রধান মেজর জেনারেল অশ্বিনী সিওয়াচের ধারণা, হিসেব কষেই মাওবাদীরা প্রায় ১০গুন বেশি বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। পরে তল্লাশির সময় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা তারযুক্ত একটা আইইডি-র ট্রিগার পাওয়া গিয়েছে। 
ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের মোকাবিলায় মূলত এরাই কমব্যাট ফোর্স। স্থানীয় আদিবাসীদের থেকে বাছাই করে নিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি হয়েছে রাজ্য পুলিশের এই ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি)। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদেরও এই বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দান্তেওয়াড়ায় রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই এলাকার দারভা ডিভিসনে মাওবাদীদের থাকার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই দান্তেওয়াড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ২০০ পুলিশ জওয়ান অভিযানে বেরিয়েছিল। বুধবার সকালে আরানপুর থেকে প্রায় ৭কিলোমিটার দূরের নাহাদি গ্রামের কাছে মাওবাদীদের সঙ্গে টহলদারি বাহিনীর একবার গুলির লড়াই হয়। সেখান থেকে বাহিনী দুই মাওয়াদীকে পাকড়াও করেছিল। এর পরেই নিরাপত্তা বাহিনী গাড়ির কনভয় করে বেসক্যাম্পে ফিরছিল। নিয়ম অনুযায়ী, কনভয়ে থাকা গাড়িগুলির মধ্যে মোটামুটি ১০০-১৫০ মিটারের ব্যবধান থাকে। এদিন বিস্ফোরণ ঘটাতে মাওবাদীরা কনভয়ের ওই দ্বিতীয় গাড়িটিকে টার্গেট করেছিল। ভাড়া করা সেই মালবাহী মিনি ভ্যানেই ছিল স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে তৈরি ডিআরজি-র দশ জওয়ান। ঘটনাস্থলেই সকলের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের পরপর কনভয়ে থাকা নিরাপত্তা বাহিনী জওয়ানরা দুপাশের জঙ্গল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
ঘটনার পরই পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে রায়পুরে মাওবাদ-বিরোধী অভিযানে বহাল আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল অশোক জুনেজা। এমন নাশকতায় প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই এখন শেষ পর্যায়ে। তাঁর দাবি, কোনো পরিস্থিতিতেই মাওবাদীদের বরদাস্ত করা হবে না। আমরা সমন্বয়ে ভিত্তিতে কাজ করে মাওবাদীদের নির্মূল করব। এদিন এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ টেলিফোনে বাঘেলের সঙ্গে কথা বলে। সবরকম সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যকে। 
বিস্ফোরণের পরই দ্রুত আশপাশ থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পৌঁছে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকর্মী ও গাড়ির চালকের দেহ উদ্ধার করে দান্তেওবাড়া নিয়ে আসা হয়েছে। নিহতদের শনাক্তও করা হয়ে গিয়েছে। তাঁরা হলেন হেড কনস্টেবল লোগা সোদি, মুন্বা রাম কাডতি, সন্তোষ তামো, কনস্টেবল দুলগো মাণ্ডবী, লাকমু মারকাম, জোগা কাওয়াসি, হরিরাম মাণ্ডবী এবং ‘সিক্টেট পুলিশ’ রাজু রাম কারটাম, জয়রাম পোডিয়াম ও জগদীশ কাওয়াসি। ভাড়া গাড়িটির চালকের নাম ধনীরাম যাদব। এঁদের বেশিরভাগই দান্তেওয়াড়া জেলার বাসিন্দা।
মাওবাদী কার্যকলাপ কি ফের বেড়ে গিয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তামরাধ্বজ সাহু সাংবাদিকদের বলেন, গত চার বছরের কংগ্রেস শাসনে মাওবাদী কার্যকলাপ ৪০শতাংশ কমে গেছে। সরকার ওদের দমিয়ে রাখতে পেরেছে। প্রতি বছরই চারশোরও বেশি মাওবাদী আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। সাহুর দাবি, মাঝে মধ্যে নিজেদের উপস্থিতি জাহির করতে মাওবাদীরা এই ধরনের দু-একটি ঘটনা ঘটায়।
এর দু’বছর আগে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সুকমা ও বিজাপুর সীমান্ত বরাবর এক মাওবাদী হামলায় ২২জন নিরাপত্তা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে ২০২০ সালের ২১ মার্ষ সুকমার মিনপা এলাকায় মাওবাদী হামলায় মৃত্যু হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর ১৭ জওয়ানের। ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে নৃশংসতম মাওবাদী হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল। সেই তাদমেটলা হামলায় ৭৬জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। -পিটিআই

Comments :0

Login to leave a comment