MONDA MITHI — SOUMAYDIP JANA — MAY DAY — NATUNPATA — 4 MAY 2025, 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই — সৌম্যদীপ জানা — আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে-ডে — নতুনপাতা — ৪ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  SOUMAYDIP JANA  MAY DAY  NATUNPATA  4 MAY 2025 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাইনতুনপাতা, বর্ষ ৩

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস — মে-ডে 

সৌম্যদীপ জানা

 

"ওরা চিরকাল
টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল,
ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে,
ওরা কাজ করে নগরে প্রান্তরে।"
         -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওরা কাজ করে, কিন্তু কারা ওরা? ওরা শ্রমিক ওরা কৃষক, যে শ্রম দান করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, শরীরের সব বল কাজে লাগিয়ে, শুধু দুটো খাদ্যের বিনিময় আমাদের সব কাজ করে ওরা শ্রমিক, ওরা কারিগর ওরাই সমাজের প্রধান স্তম্ভ। আমরা ভাবতেও পারিনা শ্রমিক ছাড়া কিভাবে আমাদের সমাজ এক মুহূর্তও চলবে। কিন্তু আমরা মনে করি শ্রমিকরা অভদ্র, অশিক্ষিত -মূর্খ, ওদের মধ্যে কোন পরিছন্নতা নেই। কিন্তু খাদ্যের পিরণ যে একটা মানুষকে কোন পর্যায়ে ঠেলে দিতে পারে তা একজন ইটভাটার শ্রমিক বা দিনমজুরের জীবনের গল্প শুনলে বোঝা যায়। তাই বাহ্যিক চেহারা দেখে শ্রমিকের কষ্ট বোঝা আমাদের মত বিলাসী মানুষের মাথায় ঢুকবে না। কিন্তু এই শ্রমিকরাই একদিন গড়ে তুলেছিল মহৎ আন্দোলন যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে-ডে।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মে-ডে নামে অধিক পরিচিত, প্রতি বছর ১ মে তারিখে সারা বিশ্বে পালন করা হয়। এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং সমাজে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিবসটি শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং অধিকার আদায়ের ইতিহাস বহন করে।

এই দিবসের পেছনে রয়েছে ১৮৮৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের বিখ্যাত হে মার্কেট আন্দোলন। সে সময় শ্রমিকরা প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতেন, কিন্তু তাদের মজুরি ছিল অপ্রতুল এবং কর্মপরিবেশ ছিল অমানবিক। আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে হাজারো শ্রমিক রাস্তায় নামে, যার পরিণতিতে ঘটে রক্তাক্ত সংঘর্ষ। অনেক শ্রমিক নিহত হন, গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত হন অনেক নেতা। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও স্মরণে ১ মে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়।

মে-ডে শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি এক বাস্তব বার্তা বহন করে—শ্রমিকরা সমাজের চালিকাশক্তি, এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠারই অংশ। এই দিবসটি শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং সমাজে ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক আচরণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।

বর্তমান বিশ্বে যদিও অনেক দেশে শ্রমিকদের অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত, তবুও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষার অভাব এখনও লক্ষ করা যায়। সেই জন্য মে-ডে এখনো প্রাসঙ্গিক এবং এর মূল শিক্ষা ও চেতনা আমাদের মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মে-ডে আমাদের শিক্ষা দেয় যে, শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে, শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একটি ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত এবং মানবিক সমাজ গঠনে এই দিবস আমাদের বারবার সচেতন করে তোলে।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস কেবল অতীতের আন্দোলনের স্মৃতি নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শ্রমিক শ্রেণির সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মে-ডে উদযাপন হোক সচেতনতা, সম্মান ও সমতার প্রতীক।
      

 

Comments :0

Login to leave a comment