editorial

ফের দুর্নীতির পথে

সম্পাদকীয় বিভাগ

‍‌নিয়োগ প্রক্রিয়ার সর্বস্তরে দুর্নীতির দায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিল করে দিয়েছে তারা যাতে ঘরে বসে বসে মাসে মাসে সরকারি কোষাগার থেকে বেতনের মতো করে ভাতা পেতে পারেন তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গ্রুপ-সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের জন্য মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্যবাসীর দেওয়া করের টাকা থেকে।
২০১৬ সালে এসএসসি’র নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২২ লক্ষ প্রার্থী থেকে তৈরি প্যানেল এবং প্যানেলের বাইরে থেকে দুর্নীতিমূলক প্রক্রিয়ায় যাদের নিয়োগ করা হয়েছে সেই ২৬ হাজারের মতো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এদের মধ্যে শিক্ষাকর্মী রয়েছে সাত হাজারের ওপর। পরবর্তীকালে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন চালু রাখার স্বার্থে যারা অযোগ্য ‍চিহ্নিত হয়নি কেবলমাত্র সেই শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যাবার ছাড়পত্র দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষকদের কয়েক মাসের জন্য স্কুলে যাবার এবং বেতন পাবার ছাড়পত্র দিলেও শিক্ষাকর্মীদের জন্য কোনও ছাড় দেয়নি। আদালতের মতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে। দেদার টাকার বিনিময়ে নিয়োগপত্র বিক্রি হয়েছে। এসএসসি যত জনের নিয়োগের সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে পর্ষদ নিয়োগ করেছে তার থেকে অনেক বেশি। তৃণমূল নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে হরিলুটের মতো চাকরি বিলিয়েছে। অবৈধ উপায়ে পাওয়া সেইসব চাকরিই বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী সেই চাকরি যাওয়া লোকদেরকেই চাকরির বেতনের মতো মাসে মাসে ভাতা দেবেন। চাকরি করতে হবে না, স্কুলে যেতে হবে না, অথচ মাসে টাকা পেয়ে যাবেন। ভাবখানা এমন সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিল করেছে কি হয়েছে রাজ্য সরকার মাসে মাসে তাদের টাকা ঠিক দিয়ে দেবেন।
চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য অবশ্য তিনি এখনও সেই বন্দোবস্ত করেননি। শিক্ষকদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই অযোগ্য বলে চিহ্নিত তারা স্কুলে যাবার অধিকার পাননি। তাদের বেতন বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী তাদের জন্য ভাতা ঘোষণা করেননি। এখন প্রশ্ন হলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাদের নিয়োগে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে, যেখানে যোগ্য-অযোগ্য ভাগ করা কার্যত অসম্ভব সেই চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দরদ সর্বাধিক কেন? সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি মানে সবচেয়ে বেশি টাকা তুলে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। যারা ধার করে, জমি বেচে বা অন্যান্য উপায়ে টাকা জোগাড় করে তৃণমূল নেতা তথা নেত্রীর ঘনিষ্ঠদের দিয়ে চাকরি জুটিয়েছিলেন তারা দলে দলে সেই নেতাদের ধাওয়া করবেন। রাজ্যজুড়ে এক অরাজক অবস্থা তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী চোখে সরষে ফুল দেখবেন। সেই ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে নিজে বাঁচতে এবং দলের নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে এই ভাতা দানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আইনের চোখে এই ব্যবস্থা আরও বড় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। হতে পারে আদালত অবমাননার মামলা। ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল হবার পর সেই প্যানেলের কেউ যদি সরকারি সুবিধা পায় তবে সঙ্গতভাবে প্রশ্ন উঠবে তাহলে পরীক্ষায় বসা ২২ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী সেই সুবিধা পাবে না কেন? নিয়োগ বাতিল, প্যানেল বাতিলের পর ২২ লক্ষ প্রার্থীই সেই স্তরে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে সরকার ভাতা দিতে পারে না বলেই আইনজ্ঞদের মত। টাকা তোলার জন্য আগে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। এবার দুর্নীতিতে জেরবার সরকার পিঠ বাঁচাতে ফের দুর্নীতিকেই বেছে নিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment