জানা অজানা — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
সত্যজিৎ রায়ের পিতা
তপন কুমার বৈরাগ্য
সত্যজিৎ রায়ের পিতা ছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎ
রায় ছিলেন একমাত্র পুত্র। সত্যজিৎ রায়ের মা ছিলেন
সুপ্রভা দেবী।ছেলেবেলায় সত্যজিৎ রায়ের ডাক নাম ছিলো
প্রসাদ ।।সত্যজিৎ রায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২রা মে উত্তর
কলকাতার বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতামহের নাম ছিলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
সত্যজিৎ রায়ের বয়েস যখন মাত্র দুই বছর তখন তাঁর
পিতা সুকুমার রায় মারা যান।
সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা ছড়ার জগতে ননসেন্স ধারার প্রবর্তক ।
তিনি একাধারে নতুন ধারার ছড়ার প্রবর্তক,শিশুসাহিত্যিক,
রম্যরচনাকার।তিনি লিখে গেছেন শিশুদের জন্য হাসির
এবং মজার মজার বই।যেমন খাইখাই,আবোল তাবোল, পাগলাদাশু,হ-য-ব-র-ল ইত্যাদি।তাঁর ননসেন্স ছড়ার বই
আবোল তাবোল।মৃত্যুর একশো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।
কিন্তু আজো তিনি শিশু সাহিত্যিক হিসাবে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন
আছেন। ১৮৮৭খ্রিস্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর তিনি কলকাতায়
জন্মগ্রহণ করেন।পিতার নাম ছিলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
১৯২৩খ্রিস্টাব্দে সুকুমার রায় কালাজ্বরে আক্রান্ত হন।
তখন কালাজ্বরের কোনো চিকিৎসা ছিল না।তবে ১৯২২খ্রিস্টাব্দে
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী মহাশয় কালাজ্বর নিরাময়ে ইউরিয়া
স্টিবামাইন নামক অব্যর্থ ওষুধ আবিষ্কার করেন। কিন্তু ইংরেজ
সরকার চাননি আবিষ্কারক হিসাবে একজন বাঙালির নাম থাক ।
তাই তখন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের লিওনার্ডো রজার্স
বাজারে এই ওষুধের ছাড়পত্র দিলেন না। মেয়ো হাসপাতালের ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র সুকুমার রায়ের উপর ইউরিয়া স্টিবামাইন প্রয়োগ করতে পারলেন না।তাছাড়া ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রও চাননি সুকুমার রায়ের উপর ইউরিয়া
স্টিবামাইন প্রয়োগ করতে।তিনি তাঁর পরিবারকে সুকুমার
রায়ের জন্য বায়ু পরিবর্তনের কথা বলেন। সুকুমার রায়ের
স্ত্রী সুপ্রভা রায় শুনেছিলেন এই ওষুধ প্রয়োগে আসামের শত শত রোগী আরোগ্য লাভ করেছে।তাই তিনিও চাইছিলেন স্বামীর
উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক।
কিন্তু ডাক্তার মৈত্র কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চাইলেন না।
যা হবার তাই হলো।আমরা হারালাম প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক
সুকুমার রায়কে।তারিখটা ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯২৩খ্রিস্টাব্দ।
এর দশদিন পর অর্থাৎ২০শে সেপ্টেম্বর ডাঃ নীলরতন সরকার
যিনি সমাজ হিতৈষী,চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারে সর্বতোভাবে
ব্রতী হয়েছিলেন তিনি বললেন---ইউরিয়া স্টিবামাইন
কালাজ্বরের সত্যিই একটা ভালো ঔষধ।আমাদের ভুল সুকুমার
রায়ের উপর এই ঔষধ প্রয়োগ করা হলো না।যদি প্রয়োগ করা
হতো তবে আমরা তাঁকে ৩৫বছর বয়েসে অকালে হারাতাম না।
আর ছোট্ট দুবছরের সত্যজিৎ রায় অকালে পিতৃহারা হতেন না।
Comments :0