‘‘সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা কখনও সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে করা যায় না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন মানুষে ঐক্যের।’’
কাশ্মীরের ঘটনা প্রসঙ্গে সোমবার একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক প্রচারে ব্যস্ত বিজেপি এবং তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
সোমবার কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তিনি। সেলিম বলেছেন যে তৃণমূলের চুরি, দুর্নীতির মোকাবিলা রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে হবে না। রাজ্যের সচেতন মানুষের প্রতিরোধই পথ।
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এদিন কলকাতায় আসে বিজেপি নেতারা।
সেই প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম বলেন, ‘‘হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসের পরিবারকে নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল টানাটানি করছে। যখন ঘটনা ঘটলো তখন এরা কেউ যায়নি। এখন টাকার জোর দেখিয়ে এই সব করছে। এটা পরিবারের প্রতি সমবেদনা নয়, ওরা রাজনীতি করছে। মমতা আজও বলেছেন টাকা দেওয়ার কথা। শুভেন্দু একইরকম মনে করছেন।’’
সেলিম প্রশ্ন তোলেন হাঁসখালির ঘটনার পর কেন বিজেপি নেতারা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেনি। কেন মুর্শিদাবাদে আধা সেনা মোতায়েন করেও তুলে নেওয়া হলো তা নিয়েও এদিন তৃণমূলকে প্রশ্ন তোলেন সেলিম।
তিনি বলেন, ‘‘ওয়াকফ নিয়ে মিছিলের পর সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায় মুর্শিদাবাদে। আধা সেনা নামানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও রাতারাতি তা তুলে নেওয়া হয়। কার নির্দেশে তোলা হয় আধা সেনা? সেনা তুলে নেওয়ার পর ফের নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয় মুর্শিদাবাদে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এতদিন পর আজ মমতা মুর্শিদাবাদ গিয়েছেন। বিডিও দপ্তরে ডেকে টাকা দেওয়ার ছক করেছেন। নিজের অহংকার দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনি দাঙ্গাবাজদের ‘ক্রিমিনাল’ বলছেন, সাম্প্রদায়িক বলছেন না। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা থাবা বসাচ্ছে। বাংলাদেশ বা পহেলগামের ঘটনার পর দেখা যাচ্ছে কী ভাবে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদের ঘটনা প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আমরা আজও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি। দিঘার মন্দির উদ্বোধন করে আজ গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল বলছেন রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা। মানুষকে বুঝতে হবে এরা দু’পক্ষই রাজ্যের ক্ষতি করছে, সম্প্রীতি নষ্ট করছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে গোটা দেশে বিজেপি ও তাদের আইটি সেল মানুষকে ভাগ করছে। ওর খুনের বিরুদ্ধে নয়, দেশের মানুষকে ভাগ করছে ধর্মের নামে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য সীমানা পার করে যুদ্ধ দেশে আনা। ওরা দেশের মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। আর বিজেপি এবং আরএসএস একই উদ্দেশ্যে দেশের মানুষকে ভাগ করার, বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে এক করার বদলে ভাগ করছে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের জনগণ এই ঘটনার বিরুদ্ধে। নিহতদের পরিবার, দেশের বিপুল অংশের মানুষ ঐক্যের কথা বলছেন। আর তখন তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে বিজেপির পক্ষ থেকে। নিজেদের রাজনীতির রুটি সেঁকছে।’’
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক প্রচার করছে, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। আমাদের সব মানুষকে এর বিরুদ্ধে এক করতে হবে। সব মানুষকে এক করতে হবে এই বিভাজনের বিরুদ্ধে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্র নজরুলের কথা মাথায় রেখে বলছি, যারা দেশকে ভালোবাসেন তাঁরা এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে এক হোন। গোটা রাজ্যে এই সময়কালে এর বিরুদ্ধে নানান কর্মসূচি হবে। আরজি কর আন্দোলনের সময় সবাই নেমেছিলেন। আজ আবার নামতে হবে। রবীন্দ্র নজরুলকে সামনে রেখে আমাদের মানুষের কাছে নিজেদের কথা নিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িকদের চিহ্নিত করতে হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘মমতা আরএসএসের মতো নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিচ্ছেন। ধর্ম কেন নিজের পরিচয় হিসাবে দেখানো হবে? কোন স্বার্থে?’’
রাজ্যপালের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা বলছেন রাজ্যপাল। সেই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাজ্যপাল যা করছে তার বিরুদ্ধে এক হতে হবে রাজ্যের মানুষকে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ৩৫৬, ৫৬ অনেক দেখেছি। তৃণমূলের খুন, দুর্নীতি, চুরির মোকাবিলা রাজ্যের মানুষকেই সচেতন ভাবে করতে হবে। ৩৫৬-র কী মানে তা বাংলার মানুষ জানেন। মণিপুরে দেখা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসনের ফলাফল। ডবল ইঞ্জিন সরকারের চেহারা বোঝা গিয়েছে।’’
সেলিম আরও বলেন, ‘‘সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের সব ক্ষমতা কেন্দ্র নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তাও পহেলগামের ঘটনা হলো। তা নিয়ে প্রশ্ন করলে বলবে দেশদ্রোহী। ২০১৪ সালে মোদী বলেছিল তার সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আজ প্রশ্ন করলে বলছে দেশদ্রোহী। পাকিস্তান সব সময় চেয়েছে কাশ্মীরের মানুষের ক্ষোভকে ধর্মীয় রূপ দিতে। আজ বিজেপি-আরএসএস সেই কাজ করছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি আরএসএসের কাজ দিয়ে বোঝা যাচ্ছে ওদের বিভাজনের রাজনীতি। সাম্প্রদায়িকতা সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি ভূমি তৈরি করে। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন খুন হয়েছেন তাঁদের বাড়ির লোক এই রাজনীতির সামনে মাথা নত করেননি। যুদ্ধ জিগির তোলা হচ্ছে, কিন্তু আমেরিকা বলেছে কিছু করা যাবে না এখন। আর ট্রাম্প না বললে মোদী কিছু করবে না। আমেরিকা করের বোঝা চাপাচ্ছে ভারতের দম নেই এর বিরুদ্ধে কিছু করার।’’
MD SALIM against Communalism
সাম্প্রদায়িকতা নয়, জনতার ঐক্য গড়েই মোকাবিলা সন্ত্রাসবাদের: বললেন সেলিম

×
Comments :0