অন্যকথা
শিক্ষকের পাশে ছাত্রের আসন
তপন কুমার বৈরাগ্য
মুক্তধারা
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারী
কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ
বসু এবং মায়ের নাম আমোদিনী দেবী।সাত সন্তানের
মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন
অসাধারণ বুদ্ধিমান।তাঁর প্রতিভার অনেক পরিচয়
আমরা পেয়েছি। তিনি ১৯২৪খ্রিস্টাব্দে বোস পরিসংখ্যান
পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।এতোবড়ো একটা আবিষ্কারের
পরেও আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান নি।
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভর্তি হলেন কলকাতার
স্বনামধন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে।এই কলেজের বিজ্ঞানের
অধ্যাপক ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। প্রফুল্লচন্দ্র রায়
এই কলেজে নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় গড়ে তোলেন একটা
অত্যাধুনিক ল্যাবোরেটারি। এর আগে তিনি ডক্টর অব
সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং গৌরবময় হোপ পুরস্কার
পান।১৮৯৬ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রেট আবিষ্কার
করেন। এই রকম একজন পৃথিবী বিখ্যাত রসায়ণ বিজ্ঞানীকে
শিক্ষক হিসাবে সত্যেন্দ্রনাথ পান।
প্রথমদিন সত্যেন্দ্রনাথ ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্র আসনেই বসে
ছিলেন।সেদিন প্রফুল্লচন্দ্র চন্দ্র ছাত্রদের বেশ কিছু শক্ত শক্ত
প্রশ্ন ধরলেন।কোনো ছাত্রই সঠিক উত্তর দিতে পারলেন না।
সত্যেন্দ্রনাথ একে একে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেন।
তারপর তিনি প্রফুল্লচন্দ্রকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন।
প্রফুল্লচন্দ্রকেও ভেবেচিন্তে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো।
সেদিন তিনি বুঝেছিলেন এই ছাত্র সাধারণ ছাত্র নয়।
এর আসন তাঁর পাশেই দিতে হবে। তিনি আরও ভাবলেন
ছাত্রদের আসনে সত্যেন্দ্রনাথ বসে থাকলে তাঁকে নানারকম
প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুলবেন।তাই তাঁর পাশেই তাঁর বসার
জন্য আলাদা একটা আসনের ব্যবস্থা করলেন।প্রফুল্লচন্দ্র
চাননি কোনোভাবে এমন প্রতিভাধর ছাত্রের কাছে বিব্রত হতে।
প্রফুল্লচন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথকে নিজের সন্তানতুল্য মনে করতেন।
তিনি সবসময় মনে করতেন তাঁর যোগ্যতা একজন শিক্ষকের
চেয়েও শতগুণ বেশি।সত্যেন্দ্রনাথের নতুন করে শেখবার
কিছু দরকার নেই। তিনি যতোদিন এই কলেজে পড়েছেন
ততোদিন প্রফুল্লচন্দ্রর পাশেই বসতেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
তিনি এই কলেজ থেকে আই,এস,সি পরীক্ষায় প্রথম হন।
Comments :0