‘‘আমার মেয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষিত হলো। ওকে খুন করা হলো। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়? আসলে এটা সিবিআইয়ের ব্যর্থতা। ওরাই এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে প্রমাণ করতে পারল না।’’ সিবিআই’র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ আর জি কর হাসপাতালে নিহত তরুণী ট্রেনি চিকিৎসকের বাবা, মা সোমবার এই কথা বলেছেন।
সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা আদালতে ছিলেন। বিচারপতি ১৭লক্ষ টাকা তাঁদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলে আদালতেই তাঁরা তা নিতে চান না বলে জানিয়ে দেন। বিচারপতি এই প্রসঙ্গে নিহতের বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও তাই করতাম।’’ নির্যাতিতার বাবা স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না, বিচার চাই।’’ বাইরেও তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ নেব না। বিচারককে বলেছি। আমরা তো এভাবে আমাদের মেয়েকে বিক্রি করতে পারব না। তাই টাকা নিতেই পারব না। প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।’’
নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘বিচারক এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে বিচারের দ্বিতীয় ধাপে উঠতে পারি এবং সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারি। রায়ের কপি পাওয়ার পর ভবিষ্যতে লড়াই আরও জোরদার করতে পারব। বিচারের প্রথম ধাপে পা দিয়েছি। আমার মেয়ের খুনের সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাই।’’
এদিন বাবা-মা দু’জনেই বলেন, ‘‘কে সঞ্জয়কে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিল? যেখানে আমার মেয়ে ঘুমোচ্ছিল, সেখানে কেউ ইন্ধন না দিলে সঞ্জয়ের পৌঁছানোর কথাই নয়। এই ঘটনার পিছনে আরও কারা আছে, সঞ্জয় তাদের নাম বলছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সন্দীপ ঘোষ সহ পুলিশ অফিসারদের কেউ কেউ জড়িত। ওদের মদত ছাড়া এই কাজ হয় না। আমরা প্রত্যেক অপরাধীর শাস্তির জন্য লড়াই করব।’’
এদিন আদালত থেকে সোদপুরে, নিজেদের বাড়িতে ফিরে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, ‘‘যে রায়ই আসুক আমরা কোনদিন খুশি হতে পারব না। আমার একমাত্র মেয়ে চলে গেছে। আমার মেয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমাদের স্বপ্ন সেইদিন শেষ হয়ে গেছে। খুশি আমাদের জীবনে কোনদিন আসবে না। এখন আমাদের একটাই কথা ‘লড়াই’। এই সমাজকে কালিমামুক্ত করার জন্য আমাদের লড়াই চলবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সঞ্জয় রায়কে বিচারক অনেক সুযোগ দিয়েছে। ওকে ১০৪টি প্রশ্ন করেছে। ওর আচরণ মারাত্মক ক্রিমিনালদের মতো। অনেক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। উলটোপালটা সব বলছে। ও অর্থাৎ সঞ্জয় রায় বলছে আমি গরিব বলে কি আমাকে ধরা হয়েছে। অন্য কাউকে ধরা হবে না। ও ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু নাম বলছে না। মনে হয় ওর ওপর বাইরে থেকে কোনও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।’’
নিহত ট্রেনি চিকিৎসকের বাবা আরও বলেন, ‘‘যে অপরাধী সে কোনদিন অপরাধ স্বীকার করে না। সমাজে অপরাধীরা ঘুরে বেড়ালে অপরাধ আরও বাড়বে। সঞ্জয় রায় প্রকৃত সত্যটা স্বীকার করছে না। কে ওকে ডেকেছিল? কে ওকে ওখানে পাঠিয়েছিল? আমার মেয়ে হাসপাতালের ভেতরে যেখানে ঘুমাচ্ছিল সেখানে কেউ ওকে ইন্ধন দিয়ে না পাঠালে ও যেতে পারে না। ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি একজন দোষী নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সন্দীপ ঘোষ সহ পুলিশ অফিসারদের কেউ কেউ জড়িত। ওদের মদত ছাড়া এই কাজ হয় না। বিচার প্রক্রিয়া চলবে। আসল দোষীরা সামনে আসবে। প্রকৃত দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাই।’’
তাঁর বক্তব্য,‘‘বিচার এখানেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়নি। তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। তদন্ত চলবে। বিচার প্রক্রিয়া চলবে। রাস্তার আন্দোলন জারি থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টে আইনি লড়াই চলবে। আমরা মনে করি হাসপাতালের ভেতর থেকে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে। হাসপাতালের অনেক লোক, অনেক পুলিশ বিনিত গোয়েল, সুফিয়া মল্লিক, হোমিসাইড শাখা সহ যারা আমার মেয়েকে দ্রুত এনে দাহ করার ব্যবস্থা করেছে তারাও জড়িত। আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখি সেমিনার কক্ষে লোক গিজগিজ করছে। সিপি, এসিপি ভেতরে ছিলেন। আমরা ভেতরে যাওয়ার জন্য পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি। আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। সেই সময় অভীক দে, বিরুপাক্ষ বিশ্বাস, ইন্দিরা মুখার্জিদের বিশেষজ্ঞ বলে বলা হয়েছে। এদের কাউকে ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ বলে বলা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত এখনও হয়নি। এই বিষয়ে প্রভাবশালীর হাত মাথায় আছে। সিবিআই প্রভাবিত হয়েছে। সেইজন্য তদন্তের যে দিকটায় যাওয়ার প্রয়োজন সেই দিকটায় যায়নি। আমরা ধামাচাপা পড়তে দেব না। যতদিন না আসল অপরাধী সামনে আসে, ততদিন রাস্তার লড়াইয়ের পাশাপাশি কোর্টে লড়াই চলবে।’’
rg kar
'সিবিআই’র তদন্তে অখুশি' বললেন অভয়ার বাবা, মা
×
Comments :0