Buxa Fort

খুব শীর্ঘই খুলে যাবে বক্সাফোর্টের দরজা

রাজ্য

Buxa Fort

জয়ন্ত সাহা

উৎসবের মুখেই পর্যটকদের জন্য খুশির খবর! খুলে দেওয়া হবে বক্সাফোর্টের দরজা। শুধু পর্যটকরাই নন জয়ন্তী পাহাড় এলাকার পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। ট্রেকার চালক অনীত সুব্বার গলায়ও খুশির মেজাজ। বক্সাফোর্টের টানে শুধু দেশের নয়, বিদেশের পর্যটকেরাও ভীড় করেন জয়ন্তী পাহাড়ে। ধসে পড়া ফোর্টকে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছিল অনেকদিন। সংস্কারের কাজ চলায় পর্যটকদের পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখেই ফিরে যেতে হত। বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা কমে গিয়েছিল অনেকটাই।
আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সংস্কারের প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হলেও বৃষ্টির ফলে গতি কমেছিল। পূর্ত দপ্তরের (নির্মাণ) বাস্তকার অমিত টুডুর বক্তব্য, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যেই পর্যটকেরা বক্সাফোর্ট ঘুরে দেখতে পারবেন।
প্রায় আড়াই বছর ধরে বক্সাফোর্টে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। তার আগে লকডাউনেও পর্যটকেরা আসতে পারেনি। ফলে এবারে বক্সাফোর্ট খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা হতেই উৎসাহের পরিবেশ ডুয়ার্সে। 
২০২০ সালের আগষ্ট মাসে দূর্গের সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। সংস্কারের সময়
মাটির নিচ থেকে মিলেছে বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন। মিলেছে প্রাচীন মুদ্রাও। এখানে বৌদ্ধস্তূপ ছিল বলেও মনে করা হচ্ছে। মাটির নিচে মিলেছে লামা ও নানদের প্রার্থনাবেদিও।


প্রায় ৩ কোটি টাকায় দূর্গের অফিস, বন্দি শিবির, সৈন্য ব্যারাক সংস্কার হয়েছে। দূর্গের তিনটি রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থাও সংস্কার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস্তুকার অমিত টুডু। দুই ধাপে সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই দূর্গ উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। প্রথমে ভুটান রাজ থেকে ইংরেজ রাজ, স্বাধীন ভারত, তিব্বতি শরনার্থী শিবিরের সাক্ষী এই দূর্গ। ১৮৬৫ সালে এই দূর্গ ব্রিটিশদের দখলে এসেছিল। ১৭৭৩ সালে প্রথম ইংরেজদের নজরে আসে  বক্সাফোর্ট। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের বিপ্লবীদের বন্দী করে এখানে রাখা হত। পঞ্চাশের দশকে বিনয় চৌধুরি, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র পাকড়াশি, ননী ভৌমিক, পারভেজ শাহেদি, চিন্মোহন সেহানবীশ প্রমুখ কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও বুদ্ধিজীবীকে এখানে বন্দী রাখা হয়। বক্সা দূর্গর ইতিহাস ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী ১৬৬১ সাল নাগাদ বাংলার সুবেদার যিনি আওরঙ্গজেবের গভর্নর ছিলেন তিনি কোচবিহার রাজ্য আক্রমণ করলে কোচবিহারের রাজা প্রাণ নারায়ণ এখানে আত্মগোপন করেছিলেন। বক্সাফোর্ট গড়েছিলেন ভুটানের রাজারা। মূলত ডুয়ার্সে আক্রমণ চালাতে এই ফোর্ট নির্মাণ করা হয়েছিল। এই দূর্গ তখন জং নামে পরিচিত ছিল।
বুধবার বক্সা ফোর্ট এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা সকলেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বক্সা সদর বাজারের হোম স্টে মালিক ইন্দ্রশংকর থাপা জানান,বক্সায় আসতে রাজাভাতখাওয়ায় প্রশাসন গেট ফি বাড়ানোয় পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে। এই গেট ফি কমানোর দাবি উঠেছে। দুই দফায় ফোর্টের সংস্কার হলেও আরো সংস্কার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
 

Comments :0

Login to leave a comment