Awas gonona corruption

আবাস যোজনার দুর্নীতিতে ফুঁসছে উত্তর থেকে দক্ষিণ

রাজ্য

আবাস যোজনা প্রকল্পে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলছে। শাসক দলের অনুগামীদের নাম উঠেছে তালিকায়। তার উদাহরণ তুলে ধরছেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরাই। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ— সর্বত্র শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, চলছে ডেপুটেশন। আবাস যোজনার তালিকা অনুসন্ধান করতে গিয়ে শাসক দলের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে আইসিডিএস, আশা কর্মীদের। একদিকে তাঁদের আটকে রাখার খবর মিলছে, অন্যদিকে তাঁদের মারধরও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে রাজ্যজুড়ে। অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীদের সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও এই কাজ থেকে অবিলম্বে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ জানানো হচ্ছে।   
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে আইসিডিএস কর্মীদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হলো পঞ্চায়েত দপ্তরে। শুক্রবার সন্দেশখালি-২ নম্বর ব্লকের আইসিডিএস কর্মী সহায়িকাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আক্রান্ত হওয়ার খবর পোস্ট করে শম্পা বোস মজুমদার লেখেন, ‘আমি শম্পা বোস মজুমদার। কেন্দ্র নম্বর ১৭১। আমি আজ সকালে কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে আমাকে তারা পাড়ার আবাস যোজনার ঘরের জন্য নানারকম গালিগালাজ করেছে এবং কয়েকজন মারধর করেছে, কাপড় খুলে দিয়েছে। এর মধ্যে কেউ একজন আমার পেটে আঘাত করেছে।’ অন্যদিকে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালি-১ নম্বর ব্লকের সেহারা রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ২০ জন আইসিডিএস কর্মীদের আটকে রাখা হয়েছে। দুপুর বারোটা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। এরপর বিডিও প্রধানকে ফোন করলে তারপর পঞ্চায়েতের তালা খুলে তাঁদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। 
ওদিকে পুরুলিয়ার  ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের ইলু জারগো গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ মাহাতো ব্লক প্রশাসনের কাছে আরজি জানিয়েছেন আবাস যোজনার তালিকা থেকে যেন তাঁর নাম  বাদ দেওয়া হয়। কারণ আগে তাঁর পারিবারিক অবস্থা খারাপ ছিল। এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। এই অবস্থায় তাতে বাড়ি নেওয়া ঠিক হবে না। এই ঘটনা সামনে আসতেই আবাস যোজনার স্বজনপোষণের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। জেলার প্রতিটি ব্লকের একই চিত্র। শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। অথচ বহু যোগ্য প্রার্থী যাঁরা আবাস যোজনা পাওয়ার উপযুক্ত তাঁদের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিআই(এম) কাশিপুর পূর্ব এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রশাসনকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। দাবি, আবাস যোজনা তালিকা সর্বসম্মক্ষে প্রকাশ করতে হবে। 
   প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির তালিকায় প্রকৃত গরিব মানুষের গৃহ নির্মাণের দাবি জানিয়ে এদিন রানিগঞ্জ বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন রানিগঞ্জের বিভিন্ন পঞ্চায়েত অঞ্চলের মহিলারা। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সরস্বতী বাদ্যকর, রীতা লোহার, মীরা বাউরিদের অভিযোগ দীর্ঘ পাঁচ ছয় বছর ধরে পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করছেন। বহু আবেদনপত্র সহ নানা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জমা করেছেন। এখনও তাঁদের বাড়ি তৈরি করেনি পঞ্চায়েত। তাঁরা জানান, আবাস যোজনায় যাঁরা ঘর পেয়েছেন তাঁরাই একাধিকবার ঘর পেয়ে আসছেন। এদিন ছোট বাচ্চা নিয়েও মহিলারা বিক্ষোভে শামিল হন। 
অন্যদিকে, উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে উঠছে হুমকির অভিযোগ, চলছে বিক্ষোভ। প্রাণের ভয়ে বিডিও-কে হাত জোড় করে অব্যাহতি চাইছেন আইসিডিএস-আশা কর্মীরা। দেদার বিলি হয়েছে আবাস যোজনার ঘরের টাকা। অথচ ইটাহার ব্লকে গ্রামের আদিবাসী পাড়ার প্রায় ৪০ পরিবারে এখনও যাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই, তাঁদের একজনের নামেও ঘরের টাকা মেলেনি। যাদের গাড়ি বাড়ি আছে তাঁদের নাম সেই প্রাথমিক তালিকায় নথিভুক্ত। এমনকি একই পরিবারের চার থেকে পাঁচজনেরও নাম তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ। আশা কর্মীদের পক্ষ থেকে ইটাহারের বিডিও-কে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে সোমবার।  ইটাহার ব্লকের আশা কর্মীরা ইটাহার ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন দপ্তরের সামনে গিয়ে নিজেদের দাবি পত্র নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। 
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার গৃহপ্রাপকদের তালিকা পুনরায় সমীক্ষা করার কাজে আশা, আইসিডিএস কর্মী সহায়িকাদের নিয়োগ করার বিরুদ্ধে জলপাইগুড়িতে পথে নামলেন আশা কর্মীরা। এই কাজ তো করার কথাই নয়, উপরন্তু এ কাজ করতে গিয়ে ক্রমাগত হুমকি আসছে শাসক দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। এই অভিযোগ তুলে এদিন জেলার বিভিন্ন ব্লকে বিএমএইচ এবং জলপাইগুড়ি জেলা সদরে সিএমওএইচের কাছে প্রতিবাদ পত্র প্রদান করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
তাঁদের বক্তব্য, গৃহনির্মাণ প্রকল্পে উপভোক্তাদের খসড়া তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। একজনও গরিব মানুষকে এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্পকে আমরা কিছুতেই তৃণমূলের কাটমানি প্রকল্পে পরিণত করতে দেব না। এর বিরুদ্ধে প্রতিটি বুথে বুথে মানুষের ঐক্য গড়ে তুলুন। শুক্রবার পাইকরে এক সভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। মুরারই-২ ব্লকের পাইকরে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর, মহিলা-ছাত্র-যুব সংগঠনগুলি আগামী ২০ ডিসেম্বর আবাস যোজনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিডিও অফিস অভিযান উপলক্ষে এদিন পাইকরে এই সভা হয়। দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার খসড়া তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। সমস্ত গরিব মানুষকে বাড়ি প্রদান এবং গ্রাম সংসদ ডেকে আবাস যোজনার চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ব্যাপক লুট বন্ধ করতে হবে।
অন্যদিকে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর সহ বামপন্থী গণসংগঠনগুলির উদ্যোগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর -১ ব্লকের বিডিও’র কাছে কয়েক দফা দাবিতে এদিন ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে আবাস যোজনা ঘর প্রকৃত গরিব এবং তফসিলি জাতি, আদিবাসী অসংখ্য মানুষ কেন এখনও পর্যন্ত বঞ্চিত। আমফানে বহু ক্ষতিগ্রস্ত এখনও পর্যন্ত আবেদন করেও ক্ষতিপূরণের টাকা কিংবা ঘরের টাকা পাননি। তাঁবু খাটিয়ে সমুদ্র লাগোয়া এলাকায় এখনও বাস করছেন তাঁরা। অথচ প্রকৃত উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে তৃণমূলের লোকেদের পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। দাবি, বঞ্চিত ও প্রকৃত গরিবদের ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আবাস যোজনার প্রাপকের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনতে হবে।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment