CBI Probe

সিবিআই জবাব খুঁজে পাবে? প্রশ্ন কংগ্রেসের

জাতীয়

CBI Probe

মঙ্গলবার সিবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ ও  গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে দেশে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এদিনও দফায় দফায় সিবিআই তদন্তের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেছেন, ‘‘সরকারের গাফিলতির কারণেই দেশে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কার্যত বন্ধ। সেজন্যই ইন্টারলকিং এবং সিগনালিং ব্যবস্থার ব্যর্থতায় ওডিশায় রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। এই আসল কারণ আড়ালে রাখতেই মোদী সরকার এখন সিবিআই’কে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছে।’’
রেলওয়ে সুরক্ষা, সিগনাল ব্যবস্থা, রেলের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতির প্রযুক্তি সম্পর্কে যে সংস্থার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, সেই সিবিআই’কে দিয়ে তদন্তের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সোমবারই সোচ্চার হয়েছিলেন বিরোধীরা। সিপিআই(এম), কংগ্রেসের মতো বিভিন্ন দলের সন্দিহান প্রশ্ন ছিল, রেলের রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের বিরাট গাফিলতি থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরানোর জন্যই কি সিবিআই’কে তদন্ত করতে বলছে মোদী সরকার? তাদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, রেল দুর্ঘটনার পিছনে প্রযুক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা চিহ্নিত করা সিবিআই’র পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।

এদিন কংগ্রেস মুখপাত্র বলেন, ‘‘বালেশ্বরে দুর্ঘটনার পরে ৯৬ ঘণ্টা কেটে গেল। প্রায় ৩০০ জন যাত্রী প্রাণ হারালেন। তবুও কারুর দায়বদ্ধতা বা দায়িত্ব চিহ্নিত করা গেল না! তার বদলে সরকার এখন জনমানসে ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’ ঢুকিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে! রেলওয়ে এবং ট্রেনযাত্রীদের সুরক্ষার প্রশ্নটি আড়াল করে নানা কিসিমের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আওড়াচ্ছে! দুর্ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে যখন রেলমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত, তখন দেশবাসীর নজর ঘোরাতে নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করা হচ্ছে!’’ দায়বদ্ধতার ‘দ’ও নেই মোদী সরকারের, বলেছেন তিনি।
কংগ্রেস নেত্রীর বক্তব্য, ‘‘রেল দুর্ঘটনার আসল কারণ আড়াল করতে চায় বলেই এনআইএ বা সিবিআই’কে তদন্তে ডাকে মোদী সরকার। বালেশ্বরের দুর্ঘটনার পরে আবারও একই কৌশলে নিজেদের ব্যর্থতা থেকে, রেলমন্ত্রকের ব্যর্থতা থেকে সকলের নজর ঘোরাতে চাইছে সরকার। দেশের নাগরিকদের জীবনের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ সরকার কিভাবে অস্বীকার করে চলেছে, সেটাই এখন ঢাকতে চান মোদীরা।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রেলমন্ত্রী বৈষ্ণবের আচরণের সমালোচনা করে সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘ওঁরা দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর এমন নাটক হলো যেন স্বয়ং দেবতারা এসেছেন! আসলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ আড়াল করতেই চেষ্টা চালাচ্ছেন ওঁরা।’’ 
রাজনৈতিক বাধ্যতার জন্যই সিবিআই যে আদৌ রেল দুর্ঘটনার আসল কারণের মধ্যে ঢুকতে পারবে না, তা স্পষ্ট করে এদিন পরপর প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া। তিনি বলেন, রেললাইন সারানো এবং নতুন লাইন বসানোর জন্য ২০১৮-১৯’র সরকারি বরাদ্দ ৯,৬০৭ কোটি টাকা কেন ২০১৯-২০ সালে কমিয়ে ৭,৪১৭ কোটি টাকা হলো, জবাব খুঁজে পাবে সিবিআই? রেল চিন্তন শিবিরে রেলের সুরক্ষার প্রশ্নে সকলে বলতে ইচ্ছুক থাকলেও কেন একটিমাত্র জোনকে বলার অনুমতি দেওয়া হলো, জবাব খুঁজে পাবে সিবিআই? গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু বাদ দিয়ে কেন ওই শিবিরে শুধু ‘বন্দে ভারত’ নিয়ে পরিকল্পনা হলো, জবাব খুঁজে পাবে সিবিআই?
কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০টি রেল দুর্ঘটনার ৭টিই হয়েছে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে, জানিয়েছে ক্যাগ। ইস্ট কোস্ট রেলওয়েতে সুরক্ষার লক্ষ্যে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আদৌ হয়নি কেন? এসবের জবাব খুঁজে পাবে সিবিআই? রেলে ৩লক্ষাধিক পদ কেন দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে রয়েছে? শূন্যপদের কারণে ট্রেন চালকদেরই বা কেন বিশ্রাম ছাড়াই কাজ করে যেতে হচ্ছে? জবাব খুঁজে পাবে সিবিআই? রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল কেন ২৩শতাংশ ছাঁটাই করা হয়েছে? জাতীয় রেল সুরক্ষা তহবিলের বরাদ্দ কেন ৭৯শতাংশ কমানো হয়েছে? জাতীয় রেল সুরক্ষা তহবিলে বার্ষিক বাজেট থেকে ২০হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি কেন রাখেনি মোদী সরকার? কংগ্রেস নেত্রীর কটাক্ষ, এসব কোনও প্রশ্নেরই জবাব আদৌ খুঁজে পাবে না সিবিআই!

রেল দুর্ঘটনার তদন্তে পারদর্শী ‘সিআরএস’ বা কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি’র মতো সংস্থাকে নিয়ন্ত্রিত রেখে মোদী সরকার কেন বারেবারে এনআইএ বা সিবিআই’কে ডাকছে? সরাসরি এই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিয়া শ্রীনতে এদিন বলেন, ‘‘দেশের মোট রেল দুর্ঘটনার মাত্র ৮-১০ শতাংশের তদন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে সিআরএস’কে। অথচ এর আগেও ২০১৬ সালে কানপুর ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে একটি কারণও খুঁজে বের করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ! সেবারের দুর্ঘটনায়  ১৫০ জন রেলযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। অন্ধ্র প্রদেশের কুনেরুতে আরেকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ৪০ জন যাত্রী। সেই দুর্ঘটনার তদন্তের পরে চার্জশিটও জমা দিতে ব্যর্থ হয় এনআইএ!’’
প্রসঙ্গত, গত ২ জুন সন্ধ্যায় ওডিশার বালেশ্বরে বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এপর্যন্ত ২৮৮ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম হয়েছেন ১১০০ জনেরও বেশি। বালেশ্বরের এই দুর্ঘটনাকে ‘ভারতে ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনাগুলির অন্যতম’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বালেশ্বরের দুর্ঘটনার পরেই রেলযাত্রীদের সুরক্ষা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের নিস্পৃহতা নিয়ে বহুদিনের জোরালো অভিযোগ ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রেল সুরক্ষা কমিশনারের তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই গত রবিবার সিবিআই তদন্তের কথা ঘোষণা করে দেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেই মতো সোমবার বালেশ্বরে পৌঁছায় সিবিআই’র যুগ্ম অধিকর্তা বিপ্লব চৌধুরির নেতৃত্বাধীন একটি দল। ‘ফৌজদারি গাফিলতি’র নানা ধারায় এফআইআর দায়ের করে মঙ্গলবার থেকেই তদন্ত শুরু করেছে তারা। এদিকে এদিনই দিল্লিতে রেলমন্ত্রী রেলের সুরক্ষা নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment