বইকথা
মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন দিক ও সমস্যা
অসিত কুমার দাস
নতুনপাতা
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০" প্রকাশিত হয়েছে ২০২০-র জুলাই মাসে। কিন্তু দেশ জুড়ে শিক্ষার সাথে যুক্ত সকল স্তরের
উপভোক্তাদের সাথে উপযুক্ত আলোচনা না করেই এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রনয়ণের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং
উপযুক্ত পরিকল্পনা না করেই ২০২৩ লাগু করার নির্দেশ জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার অধীনস্ত সংস্থাগুলো। ঠিক
একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনামা এই রাজ্যেও লাগু করার নির্দেশ জারি করে দিল।
প্রশ্ন জাগে — জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০তে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা স্তরে যে সকল রূপরেখা
প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো উপযুক্ত পরিকাঠামো কি সরকার পোষাতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আছে? যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই সেখানের পরিকাঠামো উপযুক্ত করার জন্যে সরকার কোন উদ্যোগ
গ্রহণ করেছে?
না কেন্দ্রীয় সরকার, না রাজ্য সরকার কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা করেনি! প্রশ্ন ওঠে , তাহলে কি উভয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বেসরকারিকরণে উৎসাহিত করছে? শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হবে, আর গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা
বঞ্চিত হবে !
শিক্ষাক্ষেত্রে এই বেহাল অবস্থার প্রেক্ষিতে ড. নির্মল কান্তি দত্ত মহাশয়ের লেখা ‘সেকেণ্ডারী এডুকেশন অ্যাট ক্রশ রোডস
অ্যান ইনভেস্টিগেটরি স্টাডি ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক পুস্তকটি উল্লেখ্য। অধ্যাপক দত্ত তাঁর এই ৩০৮ পৃষ্ঠার পুস্তকটিতে
মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন দিক ও সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন। বিষয়গুলো আটটি অধ্যায়ে প্রচুর তথ্যসহ বিন্যস্ত করা হয়েছে।
তবে তথ্যসূত্রগুলি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথা এ.পি.এ, বা এম.এল.এ. পদ্ধতিতে সাজানো থাকলে ভালো হতো।
প্রথম অধ্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রসঙ্গত 'ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি
কমিশন (১৯১৭-১৯) থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাগুলিকে উল্লেখ
করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ এর সাথে তুলনামূলক আলোচনা থাকলে আরও ভালো হতো।
দ্বিতীয় অধ্যায়টিতে ‘মাধ্যমিক পাঠক্রম’ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ১৮৩৩ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ অনেক
ছক ও ডায়াগ্রাম দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ছক এবং ডায়াগ্রামগুলিতে কোনও হেডিং দেওয়া হয়নি , থাকলে
বুঝতে সুবিধা হতো।
তৃতীয় অধ্যায়ে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও গণিত পাঠ্যক্রমের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পাঠ্যক্রমগুলির ইতিহাস, গুরুত্ব, সরকারি ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে এবং সমস্যা
সমাধানের দিক নির্দেশও করা হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিশিক্ষার গুরুত্ব, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী রূপরেখা প্রনয়ণের কথা
বলেছেন।
পঞ্চম অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা-প্রশাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত হান্টার কমিশন
(১৮৮২), ইউনিভার্সিটি কমিশন (১৯০২), শিক্ষানীতি (১৯১৩), সেকেন্ডারি এডুকেশন কমিশন (১৯৫২-৫৩) প্রভৃতির
সুপারিশগুলো উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র সাথে তুলনামূলক কোনও আলোচনা নেই, থাকলে
ভালো হতো বলে মনে হয়।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকার সুরক্ষার বিভিন্ন দিক-নির্দেশ করা হয়েছে।
সপ্তম অধ্যায়ে বর্তমান সময়ে মাধ্যমিক-শিক্ষার সুষম বিন্যাস ও ভারসাম্য বজায় রাখার বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করা
হয়েছে।
অষ্টম তথা শেষ অধ্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত কিছু পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে
পরিচালক মণ্ডলী এবং গবেষকদের কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ দিকনির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যদিও পুস্তকটি তথ্যসমৃদ্ধ, কিন্তু তথ্যগুলির পর্যায়ক্রমিক বিন্যাস, প্রাক্ স্বাধীনতা থেকে ২০২০ পর্যন্ত শিক্ষা
-কমিশনগুলির ক্রমবিবর্তন এবং তুলনামূলক আলোচনা থাকলে আরও সমৃদ্ধ হতো। তথ্যসূত্রগুলি আধুনিক
বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপিত করার প্রয়োজনীয়তা আছে। পরিশেষে বলব পুস্তকটি গবেষকদের কাজে সহায়তা করবে বলে
মনে হয়।
Secondary Education at Cross Roads : an Investigatory Study in WestBengal
Mrinal Kanti Dutta. Suhrid publication. College Square. Kolkata- 700 073. Rs. 800/-
Comments :0