Ballot Box Recovered

মেমারী- বাদুড়িয়ায় ব্যালট পেপার, গাজলে ত্রিপলের নিচে উদ্ধার ব্যালট বক্স

রাজ্য

Ballot Box Recovered


বাদুড়িয়ায় শ'য়ে শ'য়ে উদ্ধার বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ছাপ দেওয়া ব্যালট পেপার। পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে যাওয়ার সাতদিন পর এই ব্যালট পেপার উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। উদ্ধার হওয়া ব্যালট পেপারগুলি সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের প্রতীকে ছাপ দেওয়া। যা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা। গননাকেন্দ্র থেকে কোন ব্যালট বাইরে আসার প্রশ্নই ওঠে বলে অভিযোগ অস্বীকার বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্না বিশ্বাসের। বিডিও'র এহেন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে বাদুড়িয়ার দিলীপ মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউশনের পিছন থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যালট উদ্ধার হয়। এই দিলীপ মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউশনটি বাদুড়িয়া ব্লকের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের গননাকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গত ১১ জুলাই এই গননাকেন্দ্রে তান্ডব চালায় তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। 

উদ্ধারকৃত ব্যালট পেপারগুলির মধ্যে কোনটি জগন্নাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কোনটি নয়াবস্তিয়া মিলনী গ্রাম পঞ্চায়েত আবার কোনটি যশাইকাটি আটঘরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। যার মধ্যে আছেন জগন্নাথপুর থেকে বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ২৩ নম্বর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী আয়েশা বিবি, নয়াবস্তিয়া মিলনী গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩নং আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী মহম্মদ আলি, যশাইকাটি আটঘরা পঞ্চায়েতের ৮৪নং বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী শাহানাজ আক্তার। জলে ভিজে যাওয়ার কারণে আপাতত এগুলিই শনাক্ত করা গেছে। যা থেকে পরিস্কার গননাকেন্দ্রে পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতেই তৃণমূল কংগ্রেস এহেন কারচুপির ঘটনা। এহেন অগণতান্ত্রিক ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ এদিন করলেন সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা।

খবর পেয়ে সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার গুলি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের দাবি কাউন্টিং সেন্টার দিলীপ মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউশনের পিছনেই পুকুর। স্কুলের জানালা দিয়ে এই পুকুরেই ফেলা হয়েছে ব্যালট পেপারগুলি এবং এই ভাবেই হারানো হয়েছে সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস প্রার্থীদের। এদিনের এই ব্যালটে পেপার উদ্ধারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) নেতা অনিমেষ মুখার্জি বলেন, নির্বাচনের প্রাক মূহুর্ত থেকে আমরা বলে আসছিলাম যে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে, মানুষ তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে পরাজিত করবেই করবে। শাসকদল এটা বুঝতে পেরে নমিনেশন প্রত্যাহার করানো, নির্বাচনের আগের দিন ভোট কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই, সারা রাতব্যাপী মোটরসাইকেল বাহিনীর দাপট, ভোটের দিন সকাল থেকে পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে দেদার ছাপ্পা ভোট দেওয়া, এতেও জয় সুনিশ্চিত হচ্ছেনা বুঝে, গণনাকেন্দ্রে  প্রতিটি কাউন্টিংহলে তৃণমূলের  দুস্কৃতীকারীরা বিরোধী এজেন্টদের  মারধর করে বের করে দেয়। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। এ সবই পি আর ও কে লিখিত জানানো হয়। কিন্তু কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা হয় না। জিতে যাওয়া আসন পরিবর্তন করা হয়। আর এখনতো যত্রতত্র বিরোধী দলের প্রার্থীদের ব্যালট  পেপার গননাকেন্দ্রের আসেপাশে পাওয়া যাচ্ছে। জনগণের মতামত আস্তাকুঁড়ে স্থান পেয়েছে।

ভোট গণনা হয়েছে ১১ জুলাই। সোমবার সন্ধ্যায় গাজোলে উদ্ধার হয় তিন তিনটি ব্যালট বক্স। ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই  তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। গাজোল হাইস্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিরোধী বিধায়ক সহ নেতাকর্মীরা।         পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডিসিআরসি এবং গণনা কেন্দ্র করা হয়েছিল গাজোল হাই স্কুলে। ভোটের দিন ডিসিআরসি থেকে স্ট্রং রুমে নিয়ে যাওয়ার মাঝ পথে উধাও হয়ে গিয়েছিল ৮৩ নম্বর জীবনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের ব্যালট বাক্স। ঘটনা নিয়ে অবস্থান করেন বাম কংগ্রেস জোট। ঘটনার জেরে ১০ জুলাই পুনর্নির্বাচন করা হয় ওই বুথে। গনণার ছদিন পর গাজোল হাইস্কুলের তালা বন্ধ একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় খোয়া যাওয়া ওই তিনটি ব্যালট বক্স।



গণনা পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও ব্লক প্রশাসন গাজোল হাই স্কুলের চারটি ঘর দখল করে রাখে। অবিলম্বে যাতে ঘরগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয় তার জন্য সোমবার বিডিও অফিসে গিয়েছিলেন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক এবং ছাত্ররা। এরপরই তড়িঘড়ি ঘর গুলি খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময়ই স্কুলের দোতলার ২০৭ নম্বর ঘরের তালা খোলা হলে দেখা যায় এক কোণে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা রয়েছে তিনটি ব্যালট বক্স। তবে ব্যালট বক্সগুলি সিল করা অবস্থায় ছিল না। ঘটনা সামনে আসতেই গতকাল রাতে গাজোল থানায় বিষয়টি জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এরপর এদিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।



এদিন মেমারীতেও মিললো ব্যালট পেপার। মেমারী কলেজের মাঠে অসংখ্য ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার মানুষ। তাতে দেখা যাচ্ছে কাস্তে হাতড়ি তারা’তে ছাপ দেওয়া ব্যালট গুলি মাটিতে গড়া গাড়ি খাচ্ছে। এমনই বাগিলা জিপির ১৭ ও ১৮ নং আসন ৪৪ টি কাস্তে, হাতুড়ি ও তারা চিহ্নে ছাপ দেওয়া ব্যালট মেমারি কলেজের মাঠে পাওয়া গেছে। তৃণমূলের ভোট লুঠের  নমুনা প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। শুধু ব্যালট পেপার নয় মেমারী কলেজের মাঠে এখানে সেখানে প্রচুর ব্যালটে ছাপ দেবার স্ট্যাম্পটিও পাওয়া গেছে। এলকারা মানুষ অভিযোগ করেছে গননা কেন্দ্রে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে বিডিও এই ব্যালটে ছাপ দেবার স্ট্যাম্প গুলি তুলে দেওয়া হয়েছিল। বাইরে থেকে সাদা ব্যালট যেমন নিয়ে আসা হয়েছিল তেমনই সিপিআই(এম) প্রার্থীর ছাপ দেওয়া ব্যালটগুলি  কলেজের মাঠে ফেলে দিয়ে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে। তৃণমূলের হয়ে প্রকাশ্যে মেমারী-১ বিডিও এবং মেমারী থানার আইসি ভোট লুটে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ মেমারী বাসীর। গননার দিন সিসি টিভি দেখলেই  সামনে আসবে কিভাবে গননায় কারচুপি করে সিপিআই(এম)কে হারানো হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment