চন্দন দাস
আগস্টে আমাদের দুই ভাষ্যে পৃথক করার চেষ্টা হয়েছে। যদি তুমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হও তবে তুমি আওয়ামি লিগের পক্ষে। নয়তো তার বিরুদ্ধে। আবার আর একটি ভাষ্য ছিল, আওয়ামি লিগের শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানেই সংগ্রামী জনতার পক্ষে থাকা।
মুক্তিযুদ্ধ মানে শুধুই আওয়ামি লিগ নয়। আবার সব পরিবর্তনই উত্তরণ নয়। ‘জনতা’ কিংবা ‘জনসাধারণ’-র নামে কিছু পরিবর্তন শেষ পর্যন্ত সেই জনসাধারণের বাসভূমিকে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির অনুকূল এলাকায় পরিণত করে, এমন সত্য পশ্চিমবঙ্গের থেকে আর ভালো কে জানে?
এখন হাজির করা হয়েছে একটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকে। এখন বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে — যদি তুমি আক্রান্ত মানুষের পক্ষে হও, তবে তুমি ইসকনের সেই গেরুয়াধারীর পক্ষে। নয়তো তুমি বিরুদ্ধে, জামাতপন্থী। এবার প্রচারের কৌশল আরও নির্দিষ্ট। কোনও সংগঠন, ব্যক্তি নয় — ‘আক্রান্ত হিন্দুরা’। আক্রান্তদের আর কোনও পরিচয় নেই। আর আক্রমণকারীরা মুসলমান। এবং সব মুসলমানই মৌলবাদী। কিন্তু বেলঘরিয়ার যে যুবক ঢাকায় ঘুরতে গিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী, মৌলবাদী মানসিকতার হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাঁর বন্ধু। সেই বন্ধু মুসলমান ধর্মাবলম্বী। তাঁর বাড়ির লোকই যুবককে থাকতে দিয়েছে বেশ কয়েকদিন, যখন বাংলাদেশের ঘটনার ভিত্তিতে দুই দেশের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছিল।
ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ‘বনাম’, ‘দুটি পক্ষ’— এটি একটি ভাষ্য। যা আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের যাবতীয় যন্ত্রণা, স্বপ্নভঙ্গের একমাত্র মাপকাঠি করে তোলার প্রবল চেষ্টা হচ্ছে। অবশ্যই মূল সমস্যা থেকে নজর সরিয়ে দিতে।
প্রথম কথা, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশভাগ। যা দীর্ঘস্থায়ী সাম্প্রদায়িক বাতাবরণের উপাদান হিসাবে থেকে গেছে। আমাদের দেশভাগের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে দেওয়া হয় না। বারবার দেশভাগকে সাম্প্রদায়িক শক্তি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যেমন এদেশ থেকে ওদেশে যাওয়া বিহার, উত্তর প্রদেশের হিন্দিভাষী মুসলমানরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ‘রাজাকার’, ‘আলবদর’দের সংগঠিত বাহিনী হিসাবে অনেক খুনোখুনিতে ব্যবহৃত হয়েছেন, কিন্তু তাঁদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এপারে বাস্তুহারাদেরও ‘হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও নাগরিকত্বর নামে, এনআরসি, সিএএ-র নামে। আবার কখনও ‘মুসলমানদের অত্যাচারের’ বিবরণ তুলে ধরে। এখন শুনতে হয়, বাংলাভাষী মানেই নাকি বাংলাদেশি! বাংলাদেশের আজকের ঘটনাবলির সময়ে এই ধরনের বিভাজনকে প্রবলভাবে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে সঙ্ঘ পরিবার।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, গত ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছাড়লেন। ৮ আগস্ট মুহম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টার আসন নিলেন। আর ৯ আগস্ট তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত থেকে প্রথম বার্তা পাঠালেন সঙ্ঘের ‘সাক্ষাৎ দুর্গা’ মমতা ব্যানার্জি। যে মার্কিন প্রশাসন হিলারি ক্লিন্টনকে পাঠিয়েছিল মহাকরণে ভারতে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির অগ্রবর্তী ঘাঁটিকে দুর্বল করায় অভিনন্দন জানাতে, বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করার জন্য অন্তরের গভীরতম উষ্ণতা জানাতে, সেই মার্কিন প্রশাসনই মোদীর সরকার এবং দলের বন্ধু। আবার তারাই জামাত সহ মৌলবাদীদের সমর্থনপুষ্ট ইউনুস সরকারের মিত্র। মমতা ব্যানার্জি সম্প্রতি বলেছেন,‘বিদেশের নীতির বিষয় আমাদের কিছু বলার নেই। দেশের সরকার যা পদক্ষেপ নেবে আমরা তার পক্ষে।’ তাহলে কোন শর্তে, কার নির্দেশে তিনি উপযাচক হয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করা ইউনুসকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন? সঙ্ঘের নির্দেশে? নাকি মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশে? নাকি দু’য়েরই নির্দেশে? এখন আবার তিনিই বিধানসভায় বলেছেন বাংলাদেশে শান্তি বাহিনী পাঠানো উচিত!
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সারদায় লুট করা টাকা চোরাপথে বাংলাদেশে জামাতের তহবিলে পৌঁছেছিল বলে অভিযোগ। সেই কাজে তৃণমূলের এক তৎকালীন জামাতপন্থী সাংসদের ভূমিকা ছিল। সারদা কেলেঙ্কারি, নারদ স্টিং অপারেশন সহ অনেকগুলি তদন্তের কাজ বিশ বাঁও জলে আছে সিবিআই, ইডি-র দৌলতে। ফলে জামাতের হাতে সারদার টাকা পৌঁছানোর অভিযোগের নিষ্পত্তিও আজ পর্যন্ত হয়নি। হিন্দুদের মন্দির খুঁজে বের করতে যারা আজমেঢ় শরীফে সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিয়ে ফেলে, সেই সঙ্ঘের পরিচালনায় চলা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের পুতুলে পরিণত হওয়া গোয়েন্দা সংস্থা সারদার টাকার সীমান্তপারের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না ১২ বছরে? আশ্চর্য!
সম্প্রতি আমেরিকায় ট্রাম্প জেতার পরে বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের বিরোধী একাংশের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ট্রাম্পের ছবি হাতে দেখা গেছে। যেন রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থানের প্রবল ফারাক। আদপে তা নয়। সৃষ্টির সময় অবিভক্ত পাকিস্তান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে হেলে ছিল। স্বভাবতই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। পৃথিবীতে সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার অবস্থান হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভূমিকা পালনকারী কমিউনিস্ট, বামপন্থী শক্তিগুলি ছিল প্রবল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। বারবার তারা বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখন ‘মুক্তিযুদ্ধ’র যাবতীয় ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা আসলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মননে জড়িয়ে থাকা বাম, প্রগতিশীল এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী পরিমণ্ডলকে ধ্বংস করা।
বাংলাদেশের এখনকার ঘটনাবলির পিছনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আছে। বিগত দিনগুলিতে কাশ্মীর, বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের আরও কিছু জায়গায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অস্থিরতা তৈরিতে লাগাতার মদত দিয়েছে। চট্টগ্রামের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিজেদের ঘাঁটি বানাতে চায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। দেশ ছাড়ার আগে সেখ হাসিনা মার্কিন প্রশাসনের সেই কৌশলের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির পিছনে এবারও মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা আছে। চীন, ভারত, মায়ানমারের সীমান্তে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একটি ঘাঁটি চাই। বাংলাদেশ কী তবে মিশর হতে চলেছে? মিশরে অনেকটা এই পথেই মার্কিন মদতে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ক্ষমতায় এসেছে ২০১২-তে। তারপর সামরিক শাসন এসেছে। তারপর বসেছে সামরিক কর্তাদের পছন্দের শাসক। বাংলাদেশ সেই পথে কিনা সময় বলবে।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মতোই বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের একাধিক ধারা ছিল। স্বাধীন ভারতের মতোই বাংলাদেশেও মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া, গণতন্ত্রের দাবিতে বারবার সোচ্চার হয়েছেন মানুষ। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বিপন্ন হয়েছে। একাধিকবার সামরিক শাসন হয়েছে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭-এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র তুলে দিয়েছিলেন, ১৯৮৮-তে এরশাদ যেমন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময়েও বাংলাদেশের বামপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, মানুষ তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু সেখানেও একসময় শাসক ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে আপস করেছে। এই সুযোগ ব্যবহার করেছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। বাংলাদেশে শাসক দলে নিশ্চিত পুনর্বাসন জোটে রাজাকারদের, তারা সংসদ পর্যন্তও পৌঁছে যেতে পারেন, দেশজুড়ে তাদের ব্যাঙ্ক সহ নানা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পারে শাসকেরই বদান্যতায়। আবার এপারে, আমরা দেখি বাবরি মসজিদের দরজা খুলে দেওয়ার সুযোগ নিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। সঙ্ঘের সহায়তায় রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সৃষ্টি। আমরা শুনতে পাই মমতা ব্যানার্জির কথা—‘স্বয়ংসেবকরা দেশপ্রেমিক’, ‘বিজেপি অচ্ছুৎ নয়’ ইত্যাদি।
এখন বাংলাদেশকে শরিয়তী আইনে পরিচালনা করাই লক্ষ্য, এমন ঘোষণা করছে মৌলবাদীরা। আমাদের দেশেও আজ সংবিধান বিপন্ন। মনু সংহিতাই পথ—ইতিমধ্যেই ঘোষিত। আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রতিরোধের সংগ্রামেও সামনের সারিতে সেই সব শক্তিই, যাদের বারবার নানা কৌশলে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছে শাসক শ্রেণি। ষাটের দশকে বাংলাদেশে কৃষক এবং শ্রমিক আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ এই তিন বছরে ১০,৩০,০০০ হাজার শ্রমদিবসে শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছিলেন। ১৯৭০-এ তার পরিমাণ ছিল ৩,৬৬,৯০১। শাসকের নিষ্পেষণের পাশাপাশি মৌলবাদের বিরুদ্ধে লাগাতার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে করতে হয়েছে। তাই এবারও ‘দুর্বল’ বলে চিহ্নিত কমিউনিস্টদের পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছে এই আগস্টেই, মন্দির ভাঙার আগে। গ্রেপ্তার হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে। তাঁদের মধ্যে আছেন রাশেদ খান মেননের মতো কমিউনিস্টরাও।
এই পরিসরে আমাদের শেখানোর চেষ্টা হচ্ছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসই হিন্দুদের একমাত্র মুখপাত্র। ইসকনের এতদিন মনে পড়েনি। এখন সে জানাচ্ছে এই চিন্ময় কৃষ্ণকে তারা বহিষ্কার করেছে। ইসকনের যিনি কেউ নন, তার ডাকা সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ চলে এলেন। আয়োজনের সহায়ক তবে কারা? এই বিষয়ে কিন্তু মহম্মদ ইউনুস এবং তার সহায়করা কোনও কথা বলেননি।
সেই সূত্রে আমাদের মগজে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে পালটা প্রচারের চোরাস্রোত — জামাতই সব মুসলমানদের প্রতিনিধি। কোথায় ঠিক হলো? কোথাও নয়। বাস্তবও তা নয়। কিন্তু ভাষ্যকে এইভাবেই তৈরি করা হয়। সুফি দরগা, বাউলের আখড়া, মাজার ভাঙল যারা, তারা মুসলমান নন, আসল পরিচয় এরা মৌলবাদী। আসলে জামাত সব মুসলমানের প্রতিনিধি নয় এবং হতে পারে না।
জুলাইয়ের আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল।’ তারপর মুজিবর রহমানের মূর্তিতে জুতোর মালা দেওয়া হয়েছে, বেগম রোকেয়ার গ্রাফিটিতে কালি দেওয়া হয়েছে, ৩২নং ধানমণ্ডির বাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এখন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্তায় মারা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধর বদনাম করা হচ্ছে। ‘৭১’ মুছে দিতে বলা হচ্ছে আগস্টেই হয়েছে স্বাধীনতার সংগ্রাম। সব মুসলমানের মোটেই এটা মত নয়। আমরা এমন দেখিনি তা নয়। ইতিহাসকে ভেঙে চুরে মৌলবাদীরা নিজেদের সুবিধামতো ইতিহাস লেখার চেষ্টা করে। শ্যামাপ্রসাদকে ‘বাংলার স্রষ্টা’ বলা হয়, তাঁকে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সেলুলার জেল ফেরত কমিউনিস্ট লালমোহন সেন সন্দ্বীপে সম্প্রীতি রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৪৬-এ শহীদ হয়েছিলেন, তা ইতিহাসে লেখা হয় না। প্রকৃত দেশপ্রেমিক, ধর্মনিরপেক্ষদের কোণঠাসা করো, পারলে নিকেশ করো। তবেই তো ওপারে হিন্দুরা, এপারে মুসলমানরা, সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘুরা ‘দুধ দেওয়া গোরু’ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারবেন। আর তার ফলেই সংখ্যাগুরুদের ঠেলে দেওয়া যাবে সংখ্যালঘুর মুখোমুখি। বলা যাবে, ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ কিংবা ‘ইসলাম বিপন্ন।’
প্রশ্নটি দুটি ধর্মের নয়। শুধুমাত্র ‘সংখ্যালঘু নিরাপত্তা’রও নয়। অবশ্যই মানবাধিকারের প্রশ্ন। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন। এবং গণতন্ত্রেরও। পাশাপাশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তও স্পষ্ট করে বলার সময় এটা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে কোনও আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই হবে। তবে ভারতে বিজেপি-জমানায় সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে শুধু ‘বাংলাদেশ’ বললে, আমরা কোনও না কোনওভাবে সেই বাইনারির শিকার হয়ে পড়ব। যা সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হচ্ছে।
‘বাংলাদেশ’ মানে সেই মানুষ, যাঁরা কারখানার গেটে বিক্ষোভ করছেন কাজের জন্য, জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে সংসার কী করে চালাবেন এই দুশ্চিন্তার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন। আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের যাবতীয় সামাজিক বৈচিত্রের উপাদানগুলি। আমাদের দাঁড়াতে হবে এই সবকিছুর পাশে। কারণ, আমরা জানি ভারতেও এইভাবেও বৈচিত্রের উপাদানগুলি আক্রান্ত। বিধ্বস্ত গরিব, মধ্যবিত্ত। আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা। যদি ভারতের শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত, মহিলা, তফসিলি জাতি, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের পাশে থাকি, তবে বাংলাদেশেও তাঁদের পাশেই আমাদের ভারতবাসী হিসাবে দাঁড়াতে হবে। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হতে পারি কিন্তু তারচেয়েও বড় পরিচয়, আমরা ভারতের মানুষ— এই কথা আমাদেরই প্রমাণ করতে হবে বিশ্বে— ‘বাংলাদেশের ইস্যুতে’।
Bangladesh
বাংলাদেশ ও আমরা, আমাদের ‘বাংলাদেশ’
×
Comments :0