রবিবার ডুরান্ড কাপের ডার্বিতে জয় পেল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল লাল হলুদ। জুলাইয়ে কলকাতা লিগের ডার্বির পর ডুরান্ডের ডার্বিতেও বাজিমাত করল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের আগের দিন শনিবারের প্রেস কনফারেন্সে কোচ অস্কার বলেছিলেন যে , অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে। রবিবার তা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়েও দিলেন তিনি। এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে দুরন্ত ফুটবল খেললেন মিগুয়েল। আর আগেও বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস দলে কোচ অস্কারের কোচিংয়ে খেলেছিলেন মিগুয়েল। ফলে তার সঙ্গে ভালোই বোঝাপড়া রয়েছে তার। সেই বোঝাপড়ারই ফসল রবিবার পেল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান মাঝমাঠের ব্লকিংয়ের অভাবকে কাজে লাগিয়েই বিচরণ করতে থাকেন গোটা মাঝমাঠই। তার ডিফেন্সচেরা পাসগুলি থেকে গোল করতে পারলে আরো বড় ব্যবধানে জিততে পারত লাল হলুদ। প্রথমার্ধে গোলের আগেই প্রায় ৩-৪টি শট মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশালকে সেভ করতে হয়েছিল। ত্রাশ হয়ে উঠেছিলেন মিগুয়েল ও বিপিন সিং। প্রাক্তন মুম্বইয়ের খেলোয়াড় বিপিনের চোখ ধাঁধানো রেকর্ড মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ডার্বিতে বাঁ দিক থেকে বারংবার পরাস্ত করছিলেন মোহনবাগানের রাইট ব্যাক আশীষ রাইকে। ম্যাচের ৩৮মিনিটে পেনাল্টিটাও তারই আদায় করা। বক্সের ভিতর ঢুকে নিজেই বডি ফেইন্টিং -র মাধ্যমেই আশীষ রাইকে ট্যাকেল করতে বাধ্য করেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন ডিয়ামেনটেকোস। ডার্বিতে ডিয়ামেনটেকসের নায়ক বনে যাওয়ার কাহিনীও এক চিত্রনাট্যের মতই আকর্ষণীয়। ম্যাচের ১৬মিনিটে স্ট্রাইকার হামিদের চোটের কারণে তার জায়গায় নামেন ডিয়ামেনটেকোস। আবারো সেই মিগুয়েল মাঝমাঠের বুদ্ধিদীপ্ত দৌড়ের কারণেই মোহনবাগানের দুই ডিফেন্ডার আলবার্তো ও টম কিছুটা নিজেদের জায়গা হারিয়ে ফেলছিলেন। সেই সুযোগই নিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রিক এই ফুটবলার। এই প্রতিযোগিতায় সেরা খেলা লিস্টনকে একপ্রকার বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন রাকিব গোটা ম্যাচেই। ডান দিক ঠিক অনভিজ্ঞ পাসাংকে রুখতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি চুংনুঙ্গার। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের দাপট এত বেশি ছিল যে একটাও গোলমুখী শট করতে পারেননি মোহনবাগানের ফুটবলাররা। একেবারে শেষের দিকে অতিরিক্ত সময়ে আপুইয়ার একটি শট একটুর জন্য বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে কামিংসকে মলিনা নামান পাসাংয়ের জায়গায়। মাঝমাঠের সাহালকে ডানদিকে ঠেলে দেন। তখন মোহনবাগানের খেলায় গতিবৃদ্ধি হতে থাকে। তবে এই গতির বিরুদ্ধে গিয়েই একটি প্রতিআক্রমণ থেকে ডিয়ামেনটেকোস ফের একটি গোল করেন। ম্যাচের ৫২মিনিট নাগাদ মোহনবাগান বক্সের মধ্যে চকিতে টার্ন নিয়ে তার শটটি আলবার্তোর গায়ে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। ব্যাপারটি এতটা আচমকা ঘটে যে বিশাল সেই বলের নাগাল পাননি। এই ম্যাচে মোহনবাগান মিস করেছে মনবীর সিংকেও। ডান দিক থেকে তার দৌড় এবং ডিফেন্সিভ কোয়ালিটির অভাব বারংবার টের পেয়েছেন মলিনা। তার লং স্লাইড দৌড়ে বিপক্ষকে প্রতিহত করার সক্ষমতা অনভিজ্ঞ পাসাংয়ের না থাকায় ডান দিকটা প্রায় অকেজো হয়ে গেছিল মোহনবাগানের। ফলে খুব বেশি বলই পাননি জেমি ম্যাকলারেন। পরবর্তীতে দিমি পেট্রাটসকে নামানো হলেও তিনি এখনো পুরো ম্যাচ খেলার মত জায়গায় নেই। তাই ম্যাচে কিছুই প্রভাব ফেলতে পারেননি তিনি। ৬৭ মিনিটে একটি বৈচিত্রকর কর্নার কিক থেকে ব্যবধান কমান অনিরুদ্ধ থাপা। লিস্টন কর্নার স্পট থেকে বলটি সেন্টার না রেখে পাস্ দেন একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা থাপার উদ্দেশ্যে। প্রায় বক্সের বাইরে থেকেই থাপার দূরপাল্লার গড়ানে শটটির কোনো জবাব দিতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক প্রভসুখন সিং গিল। এই গোলের পর আগামী ১৫মিনিট মোহনবাগান যে চাপ দিয়েছিল। সেই সময়ই সুযোগ চলে এসেছিল গোলটি সফল দেওয়ার। সেই সময়ই বোঝা গেছিল এই দলের গুণমান ও গভীরতা। সাহাল থাপা দিমিরা নিজেদের কম্বিনেশন প্লে-র দ্বারাই আক্রমণ শানাতে থাকেন। তবে গোলমুখ খুলতে সেই ব্যার্থই হল মোহনবাগান। ডুরান্ডের ডার্বি জিতে এই মরশুমে আপাতত দুটি ডার্বির রঙই লাল হলুদ করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল।
এই মরশুমে আইএসএল ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে পাখির চোখ করেছে মোহনবাগান দল। ফলে প্রি সিজন অনুশীলন তারা শুরু করেছে অনেক দেরিতে। বিদেশিরাও এসেছেন দেরি করেই। এই ম্যাচ দেখে মনে হল যেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রস্তুতি হিসেবেই এই প্রতিযোগিতাটাকে দেখছিলেন কোচ জোসে মলিনা। তবে এই ম্যাচ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দলের ক্ষতস্থানগুলিকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগেই এবার সেই ক্ষতস্থান পূরণে নামতে হবে ম্যানেজমেন্টকে। গতবার মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। তার অভাব ভালোমতই টের পাচ্ছিলেন মলিনা। সবার আগে সেই জায়গাটা মেরামত করতে হবে তাদের। লেফট ব্যাকে অভিজ্ঞ শুভাশীষ আসলে রক্ষণভাগ কিছুটা মেরামত করা যেতে পারে। শারীরিক ফিটনেস বাড়াতে আরো বেশি করে অনুশীলনে জোর দিতে হবে সকলকে। তবেই মোহনবাগানের তরফ থেকে একটা ইতিবাচক ফলাফলের আশা করা যেতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের এই দলে মাঝমাঠের তালাল যুক্ত হলে আরো শক্তিশালী হবে তাদের ব্রিগেড। গত কয়েক মরশুমের ব্যার্থতাকে পিছনে ফেলে একেবারে খোলনলচে বদলে শুরু করেছেন ইস্টবেঙ্গল। আপাতত তাদের প্রধান লক্ষ্য ডুরান্ড কাপ। সেমিফাইনালে ডায়মন্ড হারবার এফসির বিরুদ্ধে তারা নামবে যুবভারতীতে। ডুরান্ড জিততে পারলে আত্মবিশ্বাস আরো কিছুটা বৃদ্ধি পাবে ইস্টবেঙ্গলের। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে সুপার কাপ। ২০২৪-র স্মৃতি ফেরাতে এই প্রতিযোগিতাতেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই নামবে লাল হলুদ। ২০২৪সালে ওড়িশা এফসিকে হারিয়ে সুপার কাপ জিতে প্রায় ১২বছর পর কোনো জাতীয় ট্রফি জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল দল। তাই এই মরশুমে নতুন নয় , দেখা যাবে সেই চেনা পরিচিত ইস্টবেঙ্গলকেই।
Comments :0