BENGAL FAMINE

৫০’র মন্বন্তর: কমিউনিস্ট পার্টি দায়ী করেছিল মজুতদারিকে

রাজ্য বিশেষ বিভাগ

অনিন্দ্য হাজরা

১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় দুর্ভিক্ষ এবং সেখান থেকে মন্বন্তর দেখা দেয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্যাম্পেল রিপোর্ট বলছে, সেই দুর্ভিক্ষে ৩৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। সরকারি রিপোর্ট বা উডহেড কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ১৫ লক্ষ। 
এই মৃত্যু মিছিলের জন্য অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি খাদ্যের কালোবাজারি এবং মজুতদারিকে দায়ী করা হয়। ১৯৪৩ সালের নভেম্বরে  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক ভবানী সেনের নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। জনসাধারণকে আহ্বাণ জানানো হয়, ‘‘মৃত্যু এবং মহামারীর বিরুদ্ধে-খাদ্যের জন্য লড়ো।’’
আবেদনে বলা হয়, ‘‘জনস্বার্থ বিরোধী সরকারি নীতির ফলেই বাংলার ৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ খাদ্যের অভাবে পথে নেমেছেন। চালের অভাব আর চালের দাম- এই দুটিই বাংলার মৃত্যু যন্ত্রণার কারণ। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে চালের দাম ছিল ৬ টাকা মণ। বাংলার হক মন্ত্রীসভা চালের দাম বেঁধে দিলেও সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা করেনি। ছয় মাসের মধ্যে কলকাতায় চালের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ টাকা মণ, প্রায় তিন গুন।
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি বলে, ‘‘ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগতভাবে মুনাফার জন্য চাল কিনে মজুত করছে। চালের দাম বাড়তে থাকলেও সরকার মজুত উদ্ধার করে দাম নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতায় চালের দর ছিল মণ প্রতি ২০ টাকা। ২৮’শে মার্চ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ টাকায়।’’
সরোজ মুখোপাধ্যায়ের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৪৩ সালে আগস্টে সেই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ টাকায়। আগস্ট মাস থেকে মৃত্যু এবং মহামারীর নতুন পর্যায় শুরু হয়। কমিউনিস্ট পার্টির এক আবেদনে বলা হয়,‘‘ চাল কেনা এবং সরবরাহের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা শুরু হয় সরকার এবং চোরাবাজারের মধ্যে। ফলে দাম বাড়ে।’’
কমিউনিস্ট পার্টির একটি লিফলেট অনুযায়ী, ১৯৪৩’র সালের জুন মাসে বাংলার মফঃস্বলগুলিতে ৮০ লক্ষ মণ চাল মজুত করে রাখা হয়েছিল। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সময় বাংলায় বছরে চালের চাহিদা ছিল ১০৫ লক্ষ টন। বোঝা যায়, উৎপাদনের অভাব এমন মন্বন্তরের কারণ ছিল না।
১৯৪৩’র পরে ৪৬ সালের জুন মাসেও একই পরিস্থিতি দেখা দেয়। সেই সময়কার স্টেটসম্যান পত্রিকা, স্বাধীনতা পত্রিকা, আজাদ পত্রিকায় নিয়মিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন লেখা হয়। বাংলায় ক্ষমতাসীন লিগ সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দাবি জানিয়ে, ২৬ জুন স্মারকলিপি জমা দেন বিধানসভার তিন সিপিআই সদস্য জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ এবং রূপনারায়ণ রায়। এই স্মারকলিপি পরবর্তীকালে ‘আবার আকাল’ নামে একটি ৩২ পাতার পুস্তিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। 

গ্রাফিক্স: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment