ধর্ষণ ও খুনের একটি নৃশংসতম ঘটনা। যাঁরাই জেনেছেন, শিউরে উঠেছেন। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা রাজ্যের একটি অন্যতম সেরা মেডিক্যাল কলেজে নিজের ডিপার্টমেন্টেই কর্তব্যরত অবস্থায় এক পড়ুয়া চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের শিকার। পুলিশের কথায় – এই ঘটনা ঘটেছে ভোররাতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনেছে সাত সকালেই। পুলিশ-সরকার সবাই সাথে সাথেই খবর পেয়েছে ধরে নেওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেবে, পুলিশ তদন্তে নামবে, সাক্ষ্য প্রমাণ নেবে, সন্দেহভাজনদের জেরা করবে, কুকুর নিয়ে খুনিদের গতিবিধির তল্লাশ নেবে – এগুলোই প্রত্যাশিত ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন - সে রাস্তায় না গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব প্রচার করল? কেন তাড়াতাড়ি পুলিশের উপস্থিতিতে কোনোক্রমে ময়নাতদন্ত সেরে ফেলতে চাইল? মৃতার বাবা-মা’র কথা না শুনে কেন পুলিশ-তৃণমূল বাহিনী তড়িঘড়ি মৃতদেহ প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে ফেলল? নির্যাতিতার বাব-মা’কে এক পুলিশ আধিকারিক শেষকৃত্যের আগেই টাকা দিয়ে সবটা রফা করে নিতে বললেন কেন? কে এই পুলিশ আধিকারিক? এসবের পর নির্যাতিতার সহপাঠি সহ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হলে, একজনকে ধরে নিয়ে এসে পুলিশ তাকেই মূল আসামি খাড়া করার চেষ্টা করল কেন? মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি তাতেই স্ট্যাম্প মারলেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো বোমা-বন্দুকের কারবারিদের নেতা – তাই স্বাভাবিকভাবে এনকাউন্টারের নিদান দিলেন। আসলে সেটা কি সাক্ষী নিকেশেরই জন্যই? বহু কুকর্মের নায়ক অধ্যক্ষ চাকরিতে ইস্তফা দিলেন সকালে, আর বিকেলেই স্বাস্থ্য দপ্তর তাকে আর এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করল কেন? বহু কুকর্মের এই নায়ককে কোন বাধ্যবাধকতায় মুখ্যমন্ত্রী দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন? সিবিআই তদন্ত হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশকে ৬ দিন সময় দিলেন কেন? ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে রাজ্যজুড়ে লক্ষ-কোটি মানুষের বিক্ষোভের মাঝেই তৃণমূলের পরিচিত দুষ্কৃতী বাহিনী পাঠিয়ে আর জি করে ভাঙচুর-আগুন লাগানো হলো কেন? ভাঙচুর-আগুন লাগানোর সময় পুলিশ খাটের তলায়-রোগীর কম্বলের নিচে লুকিয়ে এই অপকর্ম চলতে দিল কার নির্দেশে? ঘটনা ঘটিয়ে এই দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে যাবার পরে পুলিশ কমিশনার এসে সবার আগে সংবাদ মাধ্যমের ওপর হম্বিতম্বি শুরু করলেন, ওদের পাকড়াও করার বদলে – কেন? পুলিশ কমিশনার দুষ্কৃতীদের আটক করার বদলে তাদের হঠিয়ে দেওয়ার নামে চলে যেতে দিলেন কেন? লরি করে সন্ধ্যার থেকে এরা সব জড়ো হয়েছিল হাসপাতালের আশপাশে – পুলিশ খবর পায়নি? নাকি তারাই নবান্নের নির্দেশে এদের জড়ো করার বন্দোবস্ত করেছিল?
দেশের আপামর চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, মেডিক্যাল পড়ুয়া সহ দেশ ও রাজ্যের লক্ষ-কোটি মানুষ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চায়। ধামাচাপা দেওয়া রহস্যের উন্মোচন চায়। কারা ধামাচাপা দিতে চাইল, তাদের সুলুক-সন্ধান পেতে চায়। কেন রাজ্যের সরকার, পুলিশ ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল – জানতে চায়। এই হত্যার পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো জানতে চায়। দুর্নীতির উৎসমুখ জানতে চায়। হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্ত করছে। তবে সারদা-কামদুনি’র মতো দোষী ও তাদের মাথাদের আড়াল করার চেষ্টা যাতে না হয়, তার জন্যই এখন মানুষ রাস্তায় থাকছে, থাকতেই হবে।
বাংলার মানুষ বাংলার মেয়েদের নিরাপত্তা চায়, মানুষের নিরাপত্তা চায়, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অবসান চায়। মমতা ব্যানার্জিকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে সেটা আর সম্ভব নয়। তাই বাংলার মানুষ মমতা ব্যানার্জি’র পদত্যাগ চায়।
Resign Now
বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়
×
Comments :0