Women harassment

বিলকিস বানোর ভারতে প্রাপ্তি কিছু নতুন রায়

জাতীয়

বর্ষশেষের সালতামামি

সঞ্চারি চট্টোপাধ্যায়

দেশে প্রতি ১৮মিনিটে ধর্ষণের শিকার একজন। ২০২১’র তুলনায় ২০২২সালে রাজধানী শহর দিল্লিতে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। উত্তর প্রদেশ সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। যোগী রাজ্যে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩ বছরের নাবালিকা। মোদী রাজত্বে আট থেকে আশি— মহিলাদের নিরাপদ জীবন যাপনের আশা দুরাশা মাত্র। বছর বছর ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, অ্যাসিড হামলা, গার্হস্থ্য হিংসা সহ অত্যাচার বেড়েই চলেছে। অথচ ধর্ষকদের শাস্তিতে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেয় না বিজেপি সরকার। উলটে ধর্ষকদের মুক্তির দাবিতে বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরা মিছিলে হাঁটেন। প্রমাণ লোপাটে যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যান। নতুন বছর মহিলাদের প্রতি আরও কী কী নৃশংসতা নিয়ে আসবে, সেই আশঙ্কার মাঝেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক, মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ বছর সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি নজিরবিহীন রায়ে। 
স্ত্রীর অনিচ্ছায় স্বামী জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করলে তা-ও ধর্ষণের মধ্যেই পড়ছে। অর্থাৎ বৈবাহিক ধর্ষণও যে ধর্ষণ, তা স্পষ্ট বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বছর সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ এই রায় দেয় শীর্ষ আদালত। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, জে বি পারদিওয়ালা, এ এস বোপান্নার বেঞ্চ বলেছে, বিবাহিত মহিলারাও জোর করে যৌন সম্পর্ক বা ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। ধর্ষণের সাধারণ অর্থ হলো সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক। স্বামীর হাতেও এই বলপূর্বক ঘটনা ঘটতে পারে এবং বিবাহিতা মহিলারাও অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন। 
গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত ওইদিনই জানায় গর্ভপাতের অধিকার বিবাহিত, অবিবাহিত সকল মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মহিলাদের শরীরের স্বাধীনতা একমাত্র তাঁদেরই। বিচারপতিরা বলেন, ভ্রূণকে বেঁচে থাকতে হয় মহিলাদের শরীরে। সুতরাং গর্ভপাত করানোর অধিকার নিজের শরীরের ওপরে অধিকারের অংশ। একজন মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর গর্ভাবস্থাকে পূর্ণতা দিতে বাধ্য করা হলে, তা তাঁর সম্ভ্রমে আঘাত করার সমান। কোনও মহিলা গর্ভপাত করাতে চাইলে পরিবারের সম্মতিরও প্রয়োজন নেই। 
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়ে শীর্ষ আদালত বলে, কোনও শিশুর পদবি কী হবে, তা ঠিক করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে মায়ের। স্বাভাবিকভাবে যেহেতু মা-ই শিশুর অভিভাবক, তাই তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমনকী, প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর সেই মা যদি বিয়ে করেন, তাহলে নতুন পরিবারে তিনি তাঁর সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন। তাতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। 


ধর্ষণ বা যৌন হেনস্তার প্রমাণে নির্যাতিতার ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বাধ্যতামূলক ছিল। এবছর অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই পরীক্ষা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে দেশে। ধর্ষিতার ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন, চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘এই পরীক্ষা শুধু পশ্চাদমুখী নয়, একজন মহিলার মর্যাদায় আঘাত করার মতোই। একজন নির্যাতিতা নিয়মিত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন কি না, তা যাচাই করতে চাওয়ার এই অভ্যাসের মধ্যেও যৌন বিকৃতি রয়েছে।’’ বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং হিমা কোহলির বেঞ্চ সেদিন বলে, যদি কেউ এই পরীক্ষা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ দায়ের হবে। দেশের সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিয়ে কী পড়ানো হয় এবং কী কী বই বা নোট ব্যবহৃত হয়, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একজন নির্যাতিতার সঙ্গে কীভাবে কথা বলা হবে তা নিয়ে ওয়ার্কশপ করানোর নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালতের এই বেঞ্চ।
মহিলাদের অধিকারের লড়াইয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়গুলি উল্লেখযোগ্য হলেও এই বছর স্বাধীনতা দিবসের দিনই ঘটে গিয়েছে চূড়ান্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। ওইদিন বিলকিস বানোর ধর্ষক, গণহত্যাকারীদের মুক্তি দিয়ে দেয় গুজরাটের বিজেপি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেদিন লালকেল্লা থেকে মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষার বুলি আওড়াচ্ছিলেন, আর ১১ জন আসামি গোধরার জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। বিলকিস সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও কোনও লাভ হয়নি।

Comments :0

Login to leave a comment