Bulldozer Politics

বুলডোজার বিচার অসাংবিধানিক

সম্পাদকীয় বিভাগ

যে তিনটি প্রধান খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে ভারতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাঁর অন্যতম প্রধান খুঁটি বিচার ব্যবস্থা। মোদী জমানায় সেই বিচার ব্যবস্থাকেই নস্যাৎ করে দিয়ে আমলাতন্ত্রের হাতে নিরঙ্কুশ স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা তুলে দেবার প্রবণতা ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিককালে বুলডোজার বিচার বা বুলডোজার দাওয়াই বলে যে শাসন সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে সেটা এই প্রবণতারই নমুনা। বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ থেকে মধ্য প্রদেশ, আসাম থেকে রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড থেকে মহারাষ্ট্রে এখন আইনের শাসনকে শিকেয় তুলে বিচারের দায়িত্ব একতরফাভাবে হাতে তুলে নিচ্ছে সরকার। কেউ অভিযুক্ত হলে অথবা কাউকে অভিযুক্ত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে বিচার না করে সরাসরি সাজা দেবার নয়া ব্যবস্থা হলো বুলডোজার বিচার। উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় এসে প্রথম এমন তুঘলকি ব্যবস্থা চালু করে। কারো বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হলে আর কোনও দিকে না তাকিয়ে সরকার বুলডোজার পাঠিয়ে দেয় অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে ধূলিসাৎ করে দেবার জন্য। আরএসএস’র হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক বিচার ব্যবস্থাকে মানতে চায় না। তারা যাকে অপরাধী বিবেচনা করবে আগে গিয়ে তার বাড়িঘর সম্পদ ধ্বংস করে উচিত সাজার ব্যবস্থা করবে। অবশ্য এক্ষেত্রে অভিযুক্ত যদি মুসলিম হয় তাহলে তো কথায় নেই। বস্তুত অভিযুক্ত যদি মুসলিম না হয় তাহলে তাদের খানিকটা রেহাই মিলতে পারে। মুসলিম হলে সাততাড়াতাড়ি বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়াই দস্তুর।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভারতের সংবিধানে এমন তুঘলকি স্বেচ্ছাচার স্বীকৃত নয়। যে কেউ অভিযুক্ত হতেই পারে। কেউ চাইলে মিথ্যা অভিযোগেও কাউকে অভিযুক্ত করতে পারে। কিন্তু অভিযুক্ত হলেই কাউকে অপরাধী বলা যায় না। কোনও অভিযুক্ত অপরাধী সাব্যস্ত হতে পারে তখন যখন আইনি প্রক্রিয়ার তদন্তের পর আদালতে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। একমাত্র আদালতই তখন অপরাধীর সাজা ঘোষণা করে। কিন্তু যোগী রাজত্বে এই সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সরাসরি বাতিল করে মুখ্যমন্ত্রী নিয়েই সাজা ঘোষণা করে দিচ্ছেন এবং সেটা কার্যকরও করছেন। দে‍‌শের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে এটা কোনও অবস্থাতেই চলতে পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী সাব্যস্ত হলেও তার বাড়ি বা সম্পত্তি ধ্বংস করার কোনও অধিকার সরকারি কর্তৃপক্ষের নেই। অবৈধ বাড়ি বা সম্পত্তি থাকলেও একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্ছেদ করতে হয়। আগে থেকে নোটিস দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর ভাঙা যেতে পারে।
যোগীর চালু করা এই বুলডোজার বিচার অনুসরণ করছে মধ্য প্রদেশ, আসাম, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার। এমনকি দিল্লিতে অমিত শাহর পুলিশও সে কাজ করছে। সর্বত্রই মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব থেকে এই আচরণ প্রাধান্য। আসামে মুসলিমদের উচ্ছেদ করতে ঢালাও বুলডোজার ব্যবহার হচ্ছে। যে কোনও ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত যদি মুসলিম হয় তাহলে বিজেপি শাসিত সরকার প্রথমেই বুলডোজার পাঠানোর ব্যবস্থা করে। একইভাবে এনকাউন্টারের নামে অভিযুক্তকে মেরে ফেলার ব্যবস্থাও বিজেপি জমানায় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গুজরাট দাঙ্গার পর মোদী জমানায় গুজরাটে এমন ঘটনা হামেশাই পুলিশ ঘটাতো। পরে উত্তর প্রদেশে সেটা ঢালাও প্রয়োগ করে যোগী সরকার। এখন আসামে হিমন্ত সরকার সেই পথে পা বাড়িয়েছে। আরএসএস-বিজেপি মনে করে সংবিধান, আইন, নিয়ম গৌণ বিষয়, শাসকের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই শেষ কথা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে এদেশে এসব স্বেচ্ছাচারিতা চলবে না। 

Comments :0

Login to leave a comment