স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ক্রমশ কমানো হচ্ছে সিইএসসি-তে, ফলে কমছে কাজের মানও। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চূড়ান্ত অভাব দেখা দিয়েছে রক্ষণাবেক্ষণে। গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সরকার এবং সিইএসসি গ্রাহকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রযোজনীয় যথাযথ ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো ক্যালকাটা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠল সংগঠনের তরফে। সম্প্রতি জলমগ্ন অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ক্যালকাটা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সংগঠন সভাপতি অনাদি সাহু ও সম্পাদক অনীশ ঘোষ বলেছেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং ফলশ্রুতিতে কলকাতা এবং শহরতলি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দশজন নিরীহ নাগরিকের দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে আটজন নিহত নাগরিকই সিইএসসি এলাকার বাসিন্দা। প্রতিটি মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। অনুমান ৭জনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। প্রতিটি দুর্ঘটনা, যেগুলি উপরোক্ত তারিখে ঘটেছে, তার মূল কারণ রাস্তার আলোর খুঁটি, কিয়স্ক, তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ পরিবহণ তার সমেত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই সমস্ত কিছুরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারি সংস্থাগুলির।
তাঁরা বলেন, সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়ার সামনে একটি মনগড়া গল্প উপস্থাপন করে পুরো দায়ভার পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকার এবং বিশেষ করে সিইএসসি কর্মচারীদের উপর চাপিয়ে দিলেন। ফলে, কর্মীরা যাঁরা আউটডোরে কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁরা যে কোনও সময়ে শারীরিক এবং মানসিক আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে পড়লেন। এই আচরণের নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ এই বিপর্যয়ের জন্য তাদের গুরুদায়িত্ব এড়াতে পারে না। ঘটনার পরপরই প্রথমত, গণমাধ্যমের সামনে সিইএসসি কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিবৃতিতে শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উপেক্ষা করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোম্পানি গ্রাহকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রযোজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নেতৃবৃন্দ বলেন, সিইএসসি কর্তৃপক্ষের সরকারি সংস্থার বিতরণ ব্যবস্থার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এরা সিইএসসি থেকে কেবল বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করেন। বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্ব তাঁদের নিজস্ব। যেমন কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, সিএমডিএ, কলকাতা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ইত্যাদি। এমনকি, এঁদের নিজস্ব খোলা বিদ্যুৎ বাক্স থেকে চুরি প্রতিরোধ করারও কোনও ব্যবস্থা নেই।
এছাড়াও, ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, এলটি বণ্টন ব্যবস্থার ফিউজিং সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়া হয়েছে। খরচ কমানোর নামে, এলটি ওভারহেড রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগগুলিকে প্রযোজনের তুলনায় অনেক কম কাজ এবং উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। এইচভি গ্রাহকদের সুইচ রক্ষণাবেক্ষণও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে এইচভি এবং এলভি বণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত সরঞ্জামগুলিরও কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
শুধু তাই নয়, নেতৃবৃন্দের মতে সিইএসসি’তে দিনদিন স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা অবাধে হ্রাস করা হচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে কাজের মানের অবনমিত হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় সরবরাহ ব্যর্থতার কারণে কল সেন্টার ‘১৯১২’এর কার্যকারিতা অচল হয়ে পড়ে। বিপদের সম্মুখীন হলেও গ্রাহক বা সাধারণ মানুষ বারংবার ফোন করে কোনও সাড়া পান না।
সংগঠনের তরফে বক্তব্য, যথাযথ কাজের মান বজায় রাখতে উপরে উল্লিখিত অবহেলা এবং যথাযথ উপভোক্তা পরিষেবা বজায় রাখতে অনীহার কারণে বর্তমানে সাধারণ নাগরিকরা অসম্ভব দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। বেপরোয়া ব্যয়সঙ্কোচ, কাজের উন্নত মানের সঙ্গে নিরন্তর আপস নাগরিকদের জীবনকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষের এই আচরণের প্রতি জনমানসে ক্ষোভ ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
বিবৃতিতে সংগঠন সভাপতি অনাদি সাহু ও সম্পাদক অনীশ ঘোষ বলেন, পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বতন্ত্র উন্নয়নমূলক অগ্রগতি না ঘটালে, সাধারণ নাগরিক এবং গ্রাহকস্বার্থকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করার এই প্রবণতা যদি সিইএসসি কর্তৃপক্ষ ত্যাগ না করে, রাজ্য সরকার উদাসীন থাকেন, তাহলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে এবং নাগরিকদের জীবন বিপর্যস্ত হবে। কলকাতা কর্পোরেশন, সিএমডিএ, কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন হওয়া দরকার। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর এই বিষয়গুলিতে আরও দৃষ্টি দিতে হবে।
CESC
বিদ্যুতে পরপর মত্যু, সিইএসসি'র ভমিকায় ক্ষোভ কর্মী সংগঠনের

×
Comments :0