ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
আজ আমাদের গন্তব্য শিয়াগুরু কাম্পসাইট। এই ক্যাম্পসাইটটি স্পিতী উপত্যকাতে। শিয়াগুরু কথার অর্থ হলো ঠাণ্ডার উপত্যকা। নামকরণের সার্থকতা আমরা পৌঁছতেই টের পেলাম। ভয়ংকর হিম শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে গোটা উপত্যকা জুড়ে। আর আমাদের শরীর পথশ্রমে ক্লান্ত এবং অবসন্ন। তবে ধুসরের এত সুন্দর রূপও যে হতে পারে, আমি এই ক্যাম্পসাইট না দেখলে ভাবতে পারতাম না।
ধূসর পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট ক্যাম্পসাইট আমাদের। সামনে এবং পেছনে বরফ চূড়া। আকাশের রং ঘনো নীল। যে মেঘ আমরা হাম্প্টা টপে দেখেছিলাম, তার লেশ মাত্র এখানে নেই। আর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বরফগলা জলে বলীয়ান এক খরস্রোতা নাম না জানা নদী। জল তার যেমন দামাল, তেমনি ঠাণ্ডা।দেবরাজ বলল কাল এই নদীটা ক্রস করতে হবে আমাদের। শুনেই আমাদের হাত পা পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে গেলো।
যাই হোক ক্লান্ত শরীর চাঙ্গা করলাম আমরা স্যুপ খেয়ে। তারপর সবাই আমরা আজকের যাত্রাপথ নিয়ে গল্প করতে বসলাম। সময়ের কাজ কেটে যাওয়া। সে নিজের মতো চলতে থাকলো আর আমি? এই অদ্ভুত পাহাড় চূড়া , এই নীল আকাশ, এই ধুসরতার মধ্যে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম অবিরত। শহরের কোলাহল, আমার অফিস, আমার স্রোতহীন রোজনামচা যেনো অলীক মনে হতে থাকলো। মনে হলো যেন এটাই জীবন, এ অন্তবিহীন পথচলার শেষ নেই। শুধু যদি কিছু থাকে, তো হলো এই সহস্রাব্দ প্রাচীন পর্বতমালা আর এই ধূসর পাথুরে উপত্যকা।
একসময় সুজ্জি মামা পাটে গেলেন। নিশিরাতে বাঁকা চাঁদ উঠলো। সে রাতে তারা ভরা আকাশের নিচে হারিয়ে গেছিলাম আমরা। হয়তো সে দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করা সম্ভব হয়নি, তবে সে দৃশ্য বড় মনোমোহিনী। অদ্ভুত এক মায়াময় পরিবেশ হয়ে উঠেছিল সেদিন।
ধীরে ধীরে আমরা রাতের খাবার খেয়ে তাবুতে এসে ঢুকলাম। পথশ্রমের ক্লান্তি ঘুম জড়িয়ে দিলো চোখে।
Comments :0