যাকে এতদিন পরম প্রিয় বন্ধু হিসাবে জাহির করেছেন, দেখা হলেই গলাগলি, কোলাকুলিতে মেতে উঠতেন, যাকে ভোটে জেতানোর জন্য ভারত থেকে আমেরিকায় গিয়ে প্রচার করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন অব কি বার ট্রাম্প সরকার, যাকে গুজরাটে এনে সংবর্ধনার জোয়ারে ভাসিয়েছেন, আজ সেই ট্রাম্পের ভয়ে রীতিমতো থমহরিকম্প চলছে বিশ্বগুরুর বুকে। ট্রামাতঙ্কে তিনি এতটাই বিব্রত ও ভীত হয়ে পড়েছেন যে ট্রাম্পের মুখোমুখি হবার ভয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জোট ‘আসিয়ান’-র শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে হাজির থাকার বাসনাও পরিত্যাগ করেছেন। যদিও বেশ কিছুদিন ধরে হাওয়ায় ভাসছিল ভারতের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে মোদী অংশ নেবেন। সেখানে হাজির থাকার কথা ট্রাম্পেরও। এমন সম্ভাবনাও জোরালো হয়ে ওঠে যে অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথম মোদী-ট্রাম্পের বৈঠক হবে কুয়ালালামপুরে। শেষ মুহূর্তে জানা গেল মোদী যাচ্ছেন না। বদলে দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল ভাষণ দেবেন। কিন্তু কেন যাচ্ছেন না তার কোনও কারণ জানানো হলো না।
যে কারণে মোদী ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন সেটা মোদীর পক্ষে ব্যক্ত করা সম্ভব না হলেও দেশ-দুনিয়ার রাজনৈতিক মহলের কাছে সেটা অজানা নয়। ট্রাম্পকে মোদীর ভয় প্রধানত দুটি কারণে। অপারেশন সিঁদুর এবং রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে মোদীকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের অনর্গল বাক্যবাণ। যে সিঁদুর পাকিস্তানকে নতজানু করিয়েছে বলে মোদীরা সাফল্যের জয়ঢাক বাজাচ্ছেন সেখানেই নিজের হস্তক্ষেপের কৃতিত্ব দাবি করে চোনা ঢেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। একবার দু’বার নয়, অন্তত ৬০ বার ট্রাম্প দাবি করেছেন পাক-ভারত যুদ্ধ থামিয়েছেন তিনি। বস্তুত যুদ্ধ থামার কয়েক ঘণ্টা আগে ওয়াশিংটন থেকে ট্রাম্পই যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। মোদীর মুখে নয়, ভারতবাসী ও দুনিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকেই জানতে পারে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। মোদীর নাম করে ট্রাম্প বারবার এই দাবি করে গেলে একবারের জন্যও মোদী মুখ খুলে প্রতিবাদ করেননি বা আসলে কি ঘটেছিল দেশবাসীকে জানাননি। প্রতিবার নীরবে ট্রাম্পের অপমান-অসম্মান হজম করেছেন। ট্রাম্পকে তাঁর এতটাই ভয় যে সাহস করে মাথা উঁচু করে, বুক ফুলিয়ে বলতে পারেননি ট্রাম্প মিথ্যা কথা বলছেন।
একইভাবে হালে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েও ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনও জবাব তিনি দিচ্ছেন না। ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন মোদীর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। মোদী নাকি তাঁকে বলেছেন রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মোদী কিন্তু একবারের জন্যও বলেননি এমন কথা ট্রাম্পের সঙ্গে তার হয়নি। ট্রাম্প মিথ্যে কথা বলছেন। মোদীর এই নীরবতা ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি সম্মতির লক্ষণ নয় কি? ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি বানিয়ে মিথ্যে কথা বলতেন তাহলে অবশ্য মোদী তার তার বিরোধিতা করতেন এবং অপমানের জবাব দিতেন। মোদী কিছু বললে ট্রাম্প আরও জোরে চেপে ধরতে পারেন সেই ভয়ে মোদী মৌনব্রত পালন করছেন। আসিয়ানে গরহাজির থাকার পেছনেও সেই ভয় কাজ করছে। মোদীকে সামনে বসিয়ে ট্রাম্প যদি এই কথাগুলি আবার বলতে শুরু করেন তখন মোদী যাবেন কোথায়। ট্রাম্পের কাছে অপদস্থ হবার দৃশ্য দেখবে গোটা দুনিয়া। বিশ্বগুরু পথে বসবেন। আর দেশবাসীর কাছে মুখ দেখাবার জোর থাকবে না। প্রমাণ হয়ে যাবে দ্বিচারিতার কথা, ভণ্ডামির কথা, বিশ্বাসঘাতকতার কথা।
Trump Phobia
ট্রামাতঙ্ক
×
Comments :0