R G Kar CM

নাটক

সম্পাদকীয় বিভাগ


আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে যখন গোটা রাজ্য উত্তাল তখন সবদিক থেকে বেকায়দায় পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ধর্ষণের ক্ষেত্রে কঠোর সাজার আইন প্রণয়ণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দু’-দু’বার চিঠি লিখেছেন। পাশাপাশি রাজ্যের অনুরূপ কড়া আইন তৈরি করতে বিধানসভার বিশেষ জরুরি অধিবেশন ডেকেছেন। সেই পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি থেকে শুরু করে মমতা জমানায় সহস্রাধিক ভয়ঙ্কর ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, সম্মানহানি, অমর্যাদা, অপমানের ঘটনা প্রতিদিন যে কত শত সহস্র ঘটে চলেছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। প্রায় প্রতিটি ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেছে দায় এড়িয়ে যেতে। ছোট ঘটনা, ছোট ছেলের দুষ্টুমি ইত্যাদি বলে লঘু করে দিয়েছেন। আর ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে আগ বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও যথাযথ তদন্ত করে ধর্ষকদের সাজা দেবার ক্ষেত্রে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। গত ১৩ বছরে কখনো মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি ধর্ষক-খুনিদের সাজার জন্য কঠোর আইনের দাবি করতে শুরু করেছেন। একইভাবে যার কাছে এমন দাবি করে তিনি চিঠি লিখেছেন সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেও গত দশ বছরে ধর্ষক-খুনি তথা নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনও মন্তব্য শোনা যায়নি। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালেই গুজরাট দাঙ্গার সময় মুসলিম গণহত্যা অভিযানে বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ‍নিয়ে তাঁকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এমনকি দীর্ঘবিচার প্রক্রিয়ায় সেই ধর্ষকদের ১১ জনের যাবজ্জীবন জেল হলেও বিজেপি শাসিত গুজরাট সরকারের সুপারিশে এবং কেন্দ্রের মোদী সরকারের অনুমোদনে ধর্ষকরা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। এছাড়া দেশ তোলপাড় হওয়া কয়েক ডজন ভয়ঙ্কর ধর্ষণ-নির্যাতন-খুনের ঘটনায় মোদীকে কোনোদিন টুশব্দটি উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। সেই মোদী আচমকা আর জি করের ঘটনার পর এক পক্ষকালের মধ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে তিনবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের দ্রুত বিচারের কথা বলেছেন।
বর্তমানে দেশে বা বিভিন্ন রাজ্যে ধর্ষণের বিরুদ্ধে যে আইন আছে তাকে একেবারে দুর্বল বলার সুযোগ নেই। এই আইনেই একাধিক ধর্ষক-খুনির কড়া সাজা হয়েছে এবং ফাঁসিও হয়েছে। তাই ধর্ষণ-খুনের বাড় বাড়ন্তের জন্য শুধু আইনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আইন যেমনই হোক তার সার্থকতা নির্ভর করে প্রয়োগের ওপর। আইনের প্রয়োগ নির্ভর করে সরকারের সততা, সদিচ্ছা ও দায়বদ্ধতার ওপর এবং তদন্তকারী সংস্থার দক্ষতার ওপর। সরকার চাইলে সময়মত সঠিক পথে তদন্ত হবেই এবং অপরাধী সাজা পাবেই। এখন সরকার যদি চায় যাবজ্জীবনের জায়গায় ফাঁসির আইন করতেই পারে। কিন্তু মমতা-মোদীর মতো মুখ্যমন্ত্রীরা যদি নীরব থাকেন, তাদের নিয়ন্ত্রিত তদন্ত সংস্থা যদি অপরাধী ধরার বদলে তাদের আড়াল করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর আইন আর লঘু আইন কোনোটাই কোনও কাজে আসবে না।
মানুষ দেখতে পাচ্ছেন কি কেন্দ্র কি রাজ্য কোনও তদন্ত সংস্থাই প্রত্যাশা মাফিক ঠিকঠাক তদন্ত করে না। অদৃশ্য চাপ তাদের বাধ্য করে বিপথে চালিত হতে। অপরাধীকে সাজা দেবার বদলে তাদের প্রধান কাজ হয়ে ওঠে সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত হতে না দেওয়া। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা সাজা পায় না। এই অবস্থায় কড়া আইন বা দ্রুত বিচারের কথা বলা মুখ রক্ষা না দায় এড়ানো কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া মনে রাখতে হবে ধর্ষক-খুনির ফাঁসি চাই বলে ভাষণ দিলে চায় মুক্ত হওয়া যায় না। ফাঁসির সাজা হয়ত আদালত দেবে। কিন্তু আদালত কঠোর সাজা তখনই দিতে পারে যখন পুলিশ-সিবিআই ঠিকঠাক তদন্ত করে নথি প্রমাণ হাজির করবে। তদন্তের দায় বর্তায় কিন্তু সরকারের ওপর। মোদী-মমতাদের ওপর। তাঁরা কি তাঁদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন? সততার পরিচয় দিচ্ছেন? স্বচ্ছতার পরিচয় দিচ্ছেন? প্রমাণ লোপাটের ব্যবস্থা করে অপরাধীদের আড়াল করে যারা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ বা কড়া আইনের দাবি সবটা গুলিয়ে দেবার নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment