V Shivadasan

আসল রাজনৈতিক কারণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে ৪-৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্তরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী মহাসম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলের তিন শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন বর্তমান সময়ে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে। আমন্ত্রণ পেয়ে ভারত থেকে এই সম্মেলনে থাকার কথা সিপিআই(এম) সাংসদ ভি শিবদাসনের। সেই মতো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রথামাফিক ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন শিবদাসন। আবেদনপত্র দেখে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেতও দিয়ে দেওয়া হয়। শিবদাসনও সেই মতো যাবার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিস্ময়করভাবে বিদেশ মন্ত্রক তাঁর যাবার অনুমোদন বাতিল করে দেয়। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে মোদী সরকারকে নিতে হলো কেন তা জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে যাবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু সেই রাজনৈতিক কারণ সেটাও খোলসা করা হয়নি।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের নানা বিরোধী বিতর্ক আছে। গত দেড় বছর ধরে কানাডার সঙ্গে তিক্ততা চলছে। কিন্তু ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ভারতের কোনও বিষয়ে সামান্যতম কোনও বিরোধের কথা কোনোদনি শোনা যায়নি। তাহলে হঠাৎ করে ভেনেজুয়েলা সরকার আয়োজিত আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদ‍‌ বিরোধী সম্মেলনে সিপিআই(এম) সাংসদের যোগদানে কোনও রাজনৈতিক কারণ উদয় হয় কি করে? ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বহুদিনের। আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে বহুদিন ধরে দুই দেশ এক সঙ্গে পা ফেলেছে। সম্প্রতি রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে এক সঙ্গে বসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি। কয়েকদিন আগেও ভেনেজুয়েলার উপরাষ্ট্রপতি ভারত সফর করে গেছেন। এরপর সেই দে‍‌শের আয়োজনে কোনও সম্মেলনে ভারতের কোনও প্রতিনিধির অংশগ্রহণে আপত্তি থাকার কথা নয়।
আপত্তির কারণ লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। প্রধানত দু’টি বিষয়কে মোদী সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক কারণের আড়ালে আটকাতে চেয়েছে। একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সম্মেলন, অন্যটি সিপিআই(এম) সাংসদ। দু’টিই আরএসএস-বিজেপি’র মতাদর্শগত ভিত্তির পক্ষে ‘বিপজ্জনক’। আর একটি কারণ থাকতে পারে আমেরিকার চাপ। আমেরিকার চক্ষুশূল ভেনেজুয়েলা। সমস্ত ধরনের ষড়যন্ত্র, হস্তক্ষেপ উপেক্ষা করে বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলায় টিকে আছে বামপন্থী সরকার। ফলে ভেনেজুয়েলার তেল সহ প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে পারছে না মার্কিন পুঁজি। তাই অধঃস্তন শাগরেদ ভারতকে চাপ দিচ্ছে ভেনেজয়েলাকে এড়িয়ে চলার জন্য।
বর্তমান বিশ্বের দেশে দেশে যেভাবে অতি দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে এবং কোনও কোনও দেশে তারা ক্ষমতা দখল করছে, তখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী সম্মেলন সেই অতি দক্ষিণপন্থীদের উদ্বেগের কারণ। অতি দক্ষিণপন্থা কোথাও উগ্র জাতীয়তাবাদ, কোথাও ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদ, কোথাও ধর্মীয় মৌলবাদ, কোথাও অভিবাসন বিরোধিতাকে আশ্রয় করে শক্তিশালী হচ্ছে। এই শক্তিগুলি নব্য ফ্যাসিবাদী রূপেই নিজেদের চরিত্রকে প্রকাশ করছে। ফ্যাসিবাদী বিরোধী চেতনার পুনর্জাগরণ এই অতি দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্ত আটকে দিতে পারে। আরএসএস-বিজেপি’র মতাদর্শগত অবস্থানে মিল আছে নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের। আরএসএস বরাবরই হিটলার-মুসৌলিনির ভক্ত। তাই ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার রাজনীতি বিজেপি সহ্য করতে পারে না। শিবদাসনের যাত্রা আটকানোর আসল রাজনৈতিক কারণ এটাই।
 

Comments :0

Login to leave a comment