Wall Collapsed

দেওয়াল ধসে ৪ শিশুসহ দু’দিনে মৃত ৬

রাজ্য

Wall Collapsed


দু’দিনে রাজ্যে ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হলো ৬ জনের। তার মধ্যে রয়েছে ৪ শিশু। মাটির ঘর পাকা হয়নি। নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়ছে দেওয়াল। কাড়ছে প্রাণ।
শনিবারই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাগদহে মারা যায় তিন শিশু। রবিবার মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে পুরুলিয়ার তিন বছরের শিশু নিত্যা সহিসের। পুরুলিয়া কেন্দা থানার দরডি গ্রামে নিত্যার পরিবারের বাকিরাও ভর্তি হাসপাতালে। রবিবারই মৃত্যু হয়েছে বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের পূরবী হাঁসদার। বীরভূমের লাভপুরে এভাবেই প্রাণ হারিয়েছেন তমালকৃষ্ণ মণ্ডল। 
বাগদহে মৃত তিন শিশুর পরিবার জানিয়েছে আবেদন করলেও আবাস যোজনার টাকা পাননি তাঁরা। এখন এই মৃত্যু নিয়ে পুরোদমে রাজনীতিতে নেমে পড়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। দিল্লিতে রাজ্যের বকেয়া আদায়ের ঘোষণা করে গিয়েছে তৃণমূল। নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই পরিবারকেও। যদিও সংবাদমাধ্যমে তাঁরা জানিয়েছেন যে কার্যত জোর করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিল্লিতে।
পুরুলিয়ায় শিশু নিত্যা সহিসের পরিবারের সবাইকে দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তিন বছরের শিশু কন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের বাকি সদস্যরা সেখানেই চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে রবিবার সকালে বৃষ্টির জন্যই পুরুলিয়ার কেন্দা থানার দরডি গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শন সহিস, স্ত্রী উর্মীলা সহিস, বৃদ্ধা মা সুন্দরা সহিংস, তিন বছরের কন্যা নিত্যা এবং পাঁচ বছরের ছেলে মোহিত, পরিবারের সকলে তখন ঘরের ভেতরেই। 

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত রোহন সর্দারের মা মধুমিতা সর্দার।


এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রতিবেশীর বাড়ির একটি দেয়াল ভেঙে এই বাড়িতে পড়ে।‌ তার সেই ধাক্কায় বাড়ির দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়েন সকলে। পরিবারের পাঁচ সদস্যই চাপা পড়েন দেওয়ালের নিচে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা দ্রুত সেখানে ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই গ্রামের প্রায় ১০০ জনকে দরডি নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ছাতনা ব্লকের ঘোষেরগ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হাঁসাপাহাড়ি গ্রামে মারা গিয়েছেন পূরবী হাঁসদা (৬৮)। বৃষ্টির কারণে রাতে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধার। ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছাতনা থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ছাতনার সরবেরিবা সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। 
বীরভূমেও মাটির দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে তমালকৃষ্ণ মন্ডল (৭৮)-র। বাড়ি লাভপুরের ডাঙ্গাল গ্রামে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির পাশের মাটির দেওয়ালের কাছে যান তিনি। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ছুটে আসেন তাঁরা। দেখেন মাটির দেওয়ালের নিচে চাপা পড়ে আছেন বৃদ্ধ। লাভপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। 
বাগদহের গড়ামারা মৃতের পরিবারের দাবি করেছেন আবাস যোজনায় থাকলেও তাঁদের বাড়ি মেলেনি। গ্রাম পঞ্চায়েতে বারে বারে জানিয়েও ফল হয়নি। বরাদ্দ মিললে পাকা দেওয়াল হতে পারত। বাড়ি হওয়ার কথা হলেও আজ পর্যন্ত হয় নি। এই একই দাবি করেছেন শনিবার দেওয়াল চাপা পড়ে নিহত তিন শিশুর পরিবার।


একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার টাকা আটকে রয়েছে রাজ্যে। ভয়াবহ দুর্নীতির প্রতিবাদে এ বছরই প্রতি গ্রামে বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন করেছে সিপিআই(এম)। আবাসে বরাদ্দের দাবি জানানোয় পুলিশ লাঠিপেটা করেছে গরিব মানুষকে। এখন তৃণমূলই বঞ্চিতদের হাতিয়ার করছে রাজনীতির। 
রবিবার সকাল থেকে তৃণমূলের লোকজন বাগদহ ঘিরে রাখে। তার মাঝেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন সিপিআই(এম) নেতা স্বপন ঘোষ, অভিজিৎ নায়ক, সাত্তার মন্ডল, সুকান্ত সাউরা। গ্রামের একাধিক মানুষ জানান, তৃণমূল চাপ দিয়েই মৃত শিশুর পরিবারের লোকজনকে দিল্লিতে নিয়ে যাচ্ছে। এটা অমানবিক। মানুষ এটা মেনে নিচ্ছেন না। এদিন বিকালেও গ্রামে কান্নার রোল ছড়িয়ে পড়ে।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেন, আবাস যোজনা নিয়ে গোটা রাজ্যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। আর কেন্দ্রের বিজেপি টাকা আটকে শাস্তি দিয়েছে গরিব মানুষকে। শিশুদের মৃত্যুর জন্য দু’দলই দায়ী।

Comments :0

Login to leave a comment