মালবাজার ব্লকের তেশিমলা, কুমলাই, রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার। বিজেপি,তৃণমূল, সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ নির্দল প্রার্থীরা সারাদিন ধরেই নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকলেন মঙ্গলবার। কোথাও মিছিল, কোথাও পথসভা কোথাও বা উঠোন সভায় প্রার্থীরা নিজেদের প্রচার অভিযান করে বেড়ালেন।
গত রবিবার বিজেপির তরফে জলপাইগুড়ি জেলার সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায় দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মিনগ্লাস ডামডিম, রাঙ্গামাটি চা বাগানের বিভিন্ন এলাকায় এসেছিলেন। সাংসদকে শুনতে হয়, ‘এলাকার উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কোথায়? এতদিন কোথায় ছিলেন?’- এমন একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্ন।
আরেকদিকে তেশিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ১৮ নম্বর আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী গোলেজান সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা জলপাইগুড়ি জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপের লড়াই আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে বেছে বেছে তৃণমূল শিক্ষা সেল ও কর্মচারী সংগঠনের সদস্যদেরই নাকি এই জেলা পরিষদ আসনের ভোট কেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হচ্ছে ভোট কর্মী করে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক লড়াইয়ের ময়দানে ঘাম ঝড়াচ্ছেন সিপিআই (এম) নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবাহিনী। পঞ্চায়েত থেকে চোর তাড়িয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে সকলকে এগিয়ে এসে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিআই (এম) নেতৃবৃন্দ।
সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি। তবে প্রার্থীরা প্রচারে নিজেদের ব্যস্ত থাকলেন সারাদিন। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ১৮ নম্বর আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী গোলেজান সরকার এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নমূলক কাজই হবে আমাদের অগ্রাধিকার। ১০০ দিনের কাজ, এলাকায় সকলের জন্য পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত, নিকাশি ব্যবস্থা সহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আমাদের বিশেষ নজরে।’’
কোথাও টোটোর মধ্যে মাইক বেঁধে মেলোডি গানের সুরে নির্বাচনী প্রচার কাজ চলছে, আবার কোথাও মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। গোলেজান সরকারকে মাঝ বয়সের চা শ্রমিক সোমারু মানকি মুন্ডা বলেন, ‘‘এলাকায় কাজ নেই ১০০দিনের কাজের টাকা বকেয়া। সেই সুযোগে পাহাড়ি নদী থেকে বালি, পাথর চুরি, জঙ্গল থেকে বনজ সম্পদ চুরির জন্য এলাকার গরিব মানুষকে ব্যবহার করছে দুষ্কৃতীরা সামান্য পয়সার বিনিময়ে।’’
সরকার চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির লড়াইকে গুরুত্ব না দিয়ে শাসক দলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের তোলাবাজিতে মদত দেওয়া ম্যানেজমেন্ট বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়াচ্ছে শ্রমিকদের। চা শ্রমিক পরিবারের শিক্ষিত বেকার যুবক রুমন তামাং জানান, ‘‘চা বাগানের জমি পর্যটনের ব্যবহারের নামে লিজ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আগামীতে চা বাগান তুলে দেওয়া হবে। বাগান ম্যানেজমেন্ট রাস্তাঘাটের দায়িত্ব নেয় না, পঞ্চায়েত রাস্তা সারাই করে না।’’
কমবয়সীরা এমন এলাকায় কেউ পাথর তোলার কাজ করেন, শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা গাড়িতে কেউ আবার প্রতিবেশী দেশ ভুটানে যাযন কাজের তাগিদে। রোগ হলে মালবাজার আর একটু বাড়াবাড়ি হলে জলপাইগুড়ি গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়, আগে এরকম ছিল না। তৃণমূল এবং বিজেপি নজর অন্যদিকে যতই ঘোরানোর চেষ্টা করুন, এমন কথা কিন্ত উঠে আসছে এলাকায়।
এই জেলা পরিষদ আসনে গতবার প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তৃণমূল নেতা দুলাল দেবনাথ। এবারের প্রার্থী তৃণমূলের জেলা সভাপতি নিজে। দলীয় কর্মীদের ভাগাভাগি ঠেকানো তাঁর কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সিপিআই(এম) প্রার্থী যদিও জানাচ্ছেন, বখরার লড়াইয়ে ভাগাভাগির ভরসায় তিনি লড়ছেন না। স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পক্ষে চালিয়েছেন প্রচার। ধারাবাহিক আন্দোলন হয়েছে জনতার জীবন জীবিকার প্রশ্নে। সেই ভরসাতেই সমর্থনের আশা করছেন তিনি।
Comments :0