DYFI Brigade Rally

সঙ্ঘকে রুখতে সঙ্ঘেরই ‘দুর্গা’?

রাজ্য

আরএসএস-কে রুখতে, আরএসএস’র দুর্গা?
সাদা কাগজের ওপর বড় বড় করে লাল-কালো রঙ দিয়ে লেখা পোস্টারকে দুজন মিলে ধরে গোটা ব্রিগেডকে জানান দিয়ে ভিক্টোরিয়ার দিক থেকে মাঠে ঢুকছিল ভিড়টা। লেখাটা চোখে দেখার পর থামাতেই হলো তাঁদের। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার সময় পোস্টারের চারপাশে দাঁড়িয়ে গেল ভিড়টা। 
শুরু হলো কথাবার্তা।
আরএসএস-কে রুখবেন কেন? প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত। আজকের ব্রিগেডে এই প্রশ্ন করাটাই যেন সব থেকে বড় আহাম্মকের কাজ। নোটবই আর পেন দেখে এক যুবক সাবধান করে দিলেন দলটাকে। আরে সাংবাদিক, আমাদের কেউ নয় এরা। ‘‘বেশ তবে শুনুন, আরএসএস আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শত্রু। গোটা দেশে যে ধর্মীয় বিভাজন দেখছেন, ওটা আরএসএস করায় বিজেপি-কে দিয়ে,’’ বলে থামলেন যুবক। 
উস্তি থেকে এদিন এসেছেন ব্রিগেডে। প্যারামেডিক্যালের দ্বিতীয় বর্ষের পাঠরত সোহেল ইসলামেরই এক হাতে ধরা ছিল পোস্টারটি। এবারই প্রথম ব্রিগেডে। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সংস্রব রাখেন না জানাতে দ্বিধা করেননি। তারপরেও এদিন কেন ব্রিগেডে?
নির্দ্বিধায় পড়ুয়া জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আজকের ব্রিগেডে আমি নিশ্চিত যে আরএসএস, বিজেপি’র বিপদের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তোলা হবে। আজকের মাঠে যাঁরা আসবেন তাঁদের একজনও আরএসএস-বিজেপি’র ধর্মীয় বিভাজনের পথকে সমর্থন করবে না। এতটাই নিশ্চিত যে, পোস্টারে তাই লিখে এনেছেন, আরএএসকে রুখতে, আরএসএস’র দুর্গা?’’ 
‘‘এ মাঠে লড়াইয়ের শর্ত ধর্ম হবে না। ভাষা হবে না। বর্ণ হবে না। লড়াইয়ের শর্ত হবে কাজ, রুটি, রুজি আর স্বচ্ছতা। সেই শর্তেই আজ আমরা গোটা ব্রিগেড ময়দানের দখল নেব।’’ যুবকদের নিশ্চিন্ত করে একথা ভরা ব্রিগেডকে জানিয়ে দিয়েছেন ডিওয়াইএফআই সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি।
আসলে এরাজ্যে রামনবমীতে কখনও অস্ত্র মিছিল দেখাতে অভ্যস্ত ছিল না। ছিল না রামনবমীর মিছিল থেকে সংখ্যালঘু মহল্লায় দাঙ্গার ঘটনা ঘটতে দেখা। 
মাঠের ভিড় তখনও জমেনি। দূরের জেলা আগে যেমন চলে আসে, তেমনই বীরভূমের মহম্মদবাজারের মুরগাবনি গ্রাম থেকে মাঠের একপাশে বসেছিল একটা দল। প্লাস্টিকের ওপর বসে আছেন মাথায় ফেজ পরা এক বৃদ্ধ। তাঁর থেকে একটু দূরে শাঁখা-পলা হাতে পরে আছেন এক মহিলা। বৃদ্ধের নাম আবুল হোসেন মিয়া। ছোট্ট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এবার। বিটির কথা বলতে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন মহিলার সঙ্গে। রাখী মৃধা। সঙ্গে এসেছেন স্বামী আনন্দ মৃধা ও নাতনি বৈশালী তুরি। কীভাবে আলাদা হবে এই একসঙ্গে বাঁচা। 
না, বিষয়টা এখন আর সহজ হচ্ছে না, বলছে ব্রিগেড। ‘গ্রামে তো দুর্গা মন্দির, কালী মন্দিত, রাধা মাধব আছে। আবার মসজিদও আছে। কিন্তু এখন যেন সমস্যা হচ্ছে। রাম মন্দির নিয়ে মাইক প্রচার হয়েছে। কিছুটা বিষ ভরেছে,’’ বলল মহম্মদবাজারের দলটি।
একই কথা বলেছে উস্তি। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা হবে সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হচ্ছে, বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে রামের মন্দির হচ্ছে। কোথায় যেন একটা চাপা উল্লাস আছে পাড়াতে, বাজারে। ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামে তো তা নিয়ে প্রচার চলছে। ‘‘ওই তো আমাদের গ্রামে যে মন্দিরটা আছে, ওখানেই এখন আরএসএস’র মিটিং হয়। ওখান থেকে আতপ চাল আর রামমন্দির নিয়ে লেখা কাগজ নিয়ে বাড়ি, বাড়ি যাচ্ছে বিজেপি’র লোকরা,’’ বলছিলেন গোয়ালতোড়ের এক যুবক। 
আরএসএস-কে নিয়ে বিপদ টের পাচ্ছে গোয়ালতোড়। ‘‘রামমন্দির নিয়ে হিন্দুদের জাগতে হবে বলছে। আবার গরিব মানুষের জন্য আমরা যেরকম কথা বলি, আরএসএস-বিজেপি’র লোকগুলো সেইভাবেই কথা বলছে। মানুষ বুঝতে পারছে না।’’ আশঙ্কা ফুটে বের হয় গোয়ালতোড়ের এক যুবকের কথায়।
আশঙ্কা আছে। আছে সতর্কতা। গত ১২ বছর ধরে তৃণমূলের লুট দেখেছে রাজ্য। এবার দেখছে বিজেপি’র বিষ প্রচার। বিপদ থেকে বাঁচার পথের সন্ধান করতেই ব্রিগেড আসা। নলহাটির কাজের জন্য বাইরে চলে যাওয়া যুবকশূন্য গ্রাম কলিঠা থেকে এদিন সমাবেশে এসে জার্মান আলি যেমন বলছিলেন, ‘‘খিদা সবাইকেই লাগছে। খিদার জন্য সবাই আন্দোলন করলে ওদের বিপদ। তাই ওরা ভাগ করতে চায়। মন্দির তৈরির কথা বলে ভোট চাইতে আসে।’’ 
গোটা মাঠজুড়ে লক্ষ মানুষের উপস্থিতি। ধর্মের পরিচয় বহন করে মাঠে এসেছে মানুষ। জাতিসত্তার পরিচয় নিয়ে স্লোগান দিয়েছে মিছিলে। পুরুষ মহিলা, যুবক-যুবতী রকমারি পোশাকে এসে ঢুকেছেন যৌবনের ডাকা জনতার ব্রিগেডে। ভাতাড় থানার আমরুন গ্রাম থেকে এক দঙ্গল মহিলা এসে ঘরের থেকে আনা খাবার ভাগ করে সমাবেশের আগে খেয়ে নিচ্ছিলেন। ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হতে হয়েছে। আসার আগে কিন্তু সেরে নিয়েছে ঘরের পুজো। ‘‘ঘরের ঠাকুরকে পুজো দিয়ে এসেছি। সকাল ৬টার মধ্যে পুজো শেষ করে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছি,’’ জানিয়েছেন এক মহিলা। 
ঘরের হিন্দুকে রাস্তায় টেনে বের করে রাজনৈতিক হিন্দু বানাতে চায় আরএসএস। ব্রিগেড থেকে কাজ, কাজ, কাজের দাবিতেই যে আগামী লড়াই তা শুনে গিয়েছেন জনতা। মাঠ থেকে ফিরে এবার বুথে ব্রিগেড গড়ে প্রতিরোধ।
 

Comments :0

Login to leave a comment