DYFI RALLY

‘ইনসাফ যাত্রা’ শুরু আজ, শামিল হবেন সব অংশের যুবরা

রাজ্য

জয়ন্ত সাহা: কোচবিহার

যাঁরা একদিন শিল্পের জন্য হেঁটেছিলেন, যাঁরা রক্ত দিয়েছিলেন একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান নিয়ে তাঁদের উত্তরাধিকার শুক্রবার শুরু করবে পদযাত্রা।
হলদিয়া আর বক্রেশ্বর নির্মাণের জন্য যে যুবদের তেজ দেখেছিল দেশ গত শতকের ন‍‌য়ের দশকে। ১৯৮৫-র ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল হলদিয়ায় শিল্পের জন্য ছাত্র-যুবদের পদযাত্রা। আজ রাজ্যে যখন কাজ নেই, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক, শিল্প হচ্ছে না, সরকারের নেতা, মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে মগ্ন, বিজেপি-আরএসএস এবং তৃণমূল রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, তখন সেই রাজ্যের যৌবন কোচবিহার থেকে শুরু করবে ‘ইনসাফ যাত্রা’। ২২টি জেলার ২হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ জুড়বে যৌবনের আহ্বানে।
যদি তৃণমূল আর বিজেপি’র চক্রান্ত ও অপশাসনে বাংলার বিক্ষুব্ধ এই সময়ের মূল দিশা হয়, তবে সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের অগ্রসেন ভবন ছিল ‘মিনি পশ্চিমবঙ্গ’।
কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার— বিভিন্ন জেলার নানা অঞ্চলের ডিওয়াইএফ(আই)’র প্রতিনিধিরা হাজির অগ্রসেন ভবনে। তাৎপর্যপূর্ণ হলো— শ্রমজীবী যুবক যেমন আছেন, তেমনই আছেন যুবতী, কাজের খোঁজে থাকা তরুণ। 
‘ইনসাফ যাত্রা’ সম্পর্কে ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন কলকাতায় বলেছেন, ‘‘১৯৮০ সালের ৩ নভেম্বর ডিওয়াইএফআই’র প্রতিষ্ঠা। তাই ৩ নভেম্বরই যুবরা কোচবিহার থেকে ইনসাফ যাত্রার সূচনা করছে। যুবদের মুরোদ আছে, দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি তাঁরা অতিক্রম করবেন। পথে হাজারের বেশি সভা করবেন ২ মাস। তারপরে ব্রিগেডে সমাবেশ করবেন। এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থানের। যুবদের কাজ নেই, আয়ের সুযোগ নেই। সেই জন্য তাঁরা সোচ্চার হবেন। ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন নেতা হিসাবে আমাকেও ওরা অনেক জায়গায় বক্তা হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমিও যাবো, আরও অনেক প্রাক্তন যুবনেতা যাবেন।’’
কোচবিহারে এদিন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ইনসাফ যাত্রার প্রস্তুতির প্রচারে রাজ্যের যেখানেই আমরা গেছি, সেখানেই সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে আমাদের বলেছেন, এরকম একটা আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল। সাধারণ মানুষ দু’হাত তুলে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ইনসাফ যাত্রা শুরুর আগে শুধু এটুকুই বলব, দুর্নীতির দুঃসহ রাতের জাল ছিঁড়ে নতুন সকাল আনবে রাজ্যের স্পর্ধিত যৌবন।’’
ষাট দিনের পথ চলায় মানুষের যন্ত্রণার কথা শুনবেন পদযাত্রীরা। জানাবেন লড়াই করে হক আদায় করে নেওয়ার আহ্বান। কাজের দাবি আর কাজ না পাওয়ার কথা সামনে আসতেই শত্রুরা বিভেদের জাল বুনেছে ধর্মের নামে জাতের নামে। সেই বিভেদের জাল ছিঁড়তেই কোচবিহার অগ্রসেন ভবনে হাজির সুমনা আহমেদ, দেবপ্রিয়া আচার্যী আর রোকেয়া পারভীনরা। পূর্ব বর্ধমানের অন্তরা দত্ত পথ হাঁটতে হাজির কোচবিহারে। নিমো ২গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই ভোটে জিতে এখন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা। উত্তর দিনাজপুরের শোনগাঁ-র মামুন আলী রসিদ কৃষক পরিবারের ছেলে। বেশ বড় পরিবার। অগ্রসেন ভবনে বসে মামুন শোনাচ্ছিল তাঁদের কৃষিজীবী পরিবারে ৮ জন চাকরির যোগ্যতা নিয়ে বসে আছেন। দাদা ফিরোজ রহমান পিএইচডি করে বসে আছেন। আরেক খুড়তুতো ভাই জাহিদ ইসলাম ডাবল এমএ করেছেন। কারও কাজ নেই। বোনও আছেন। তবে তিনি পড়ছেন। তাঁদের এলাকায় আগে পাট, গম হতো। দাম না পেয়ে সে আবাদ ছেড়েছে সবাই। এখন ধান আর ভুট্টা হয়। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা করতে খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। ভুট্টা বেচতে হয়েছে ১৭০০ টাকা কুইন্টাল দরে। ফড়েরা সেই ভুট্টা কিনে নিয়ে মজুত করে এখন বেচছে ২২০০ টাকা কুইন্টাল দরে। লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছে ফড়ের দল। ঘামের দামের জন্য মামুন আল রসিদ ইনসাফ যাত্রায় শামিল হতে উদগ্রীব। মামুন আল রসিদের সঙ্গে অগ্রসেন ভবনে এক ঘরে রয়েছেন রায়গঞ্জের চন্দন হালদার। চন্দন পেশায় ফটোগ্রাফার। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস ওর কাজের মরশুম। কাজ ধরেছিল ৬-৭ মাস আগে তখনও ইনসাফ যাত্রার কথা ঘোষণা হয়নি। হাতের সব কাজ ফেলে চন্দন চলে এসেছেন পথ হাঁটতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো হাতের কাজ করে সংসার সামলাচ্ছি কোনও রকমে। কিন্তু পরের প্রজন্মের কী হবে? সব তো লুটেপুটে খেয়ে নিচ্ছে নেতা-মন্ত্রীরা!’’ 
হুগলীর ওলা চালক তন্ময় ভৌমিক হাজির কোচবিহারে। ওলা নিয়ে সংসারের খিদে মেটাতে হাতে স্টিয়ারিং তুলে নেওয়া এই যুবক আগামী কদিন পথে পথে স্লোগান তুলে রাজ্যের সুখ-শান্তি উজার করা চোর-ডাকাতের দলের বিরুদ্ধে স্পর্ধার মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে দেবে আকাশের দিকে। বর্ধমানের সূর্যেন্দু বোস পেশায় আইনজীবী। যুবক পেশা ছেড়ে শামিল ইনসাফ যাত্রায়। তিনিও চাইছেন দুর্নীতির দুঃসহ রাত কেটে যাক। 
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, কলতান দাশগুপ্তরা দিনভর কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের ইনসাফ যাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন। 
বুধবার রাতে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় আক্রান্ত যুবনেতা শুভ্রালোক দাসের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। ছিলেন যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত, সুধাংশু প্রামাণিক, ছাত্রনেতা কৌশিক ঘোষ প্রমুখ। গত সোমবার রাতে কোচবিহার জেলার সিতাইয়ে দুই যুব নেতা শুভ্রালোক দাস এবং ইউসুফ আলিকে খুন করার চেষ্টার করে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার ছেলে কুন্তল বর্মা বসুনিয়া সহ আরও দুই তৃণমূল দুষ্কৃতী। অভিযোগ এমনই, যদিও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। 
ইনসাফ যাত্রার সমর্থনে সেদিন সন্ধ্যায় সিতাই চৌপথি এলাকায় পথসভা ছিল ডিওয়াইএফআই’র। এই সভার বক্তা ছিলেন এই দুই যুবনেতা। সেদিন সভা শেষ করে বাইকে চেপে তাঁরা দিনহাটার উদ্দেশে রওনা হন। সিতাইয়ের শেওড়াতলা পেট্রোল পাম্পের সামনে তাঁরা আক্রান্ত হন।

Comments :0

Login to leave a comment