বৃহস্পতিবার যেই নিন্দা প্রস্তাব রাষ্ট্রসঙ্ঘে পাশ হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘‘পূর্ব জেরুজালেম সহ অধিকৃত প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড ইজরায়েলের যেই দখলদারি চালানো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে।’’ এই নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়েছে সাতটি দেশের পক্ষ থেকে তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। ১৮টি দেশ ভোটে বিরত থাকে।
গাজায় ইজরায়েলি হামলার কারণে শিশু সহ প্রায় ১১ হাজার নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়েছে ইজরায়েলের পক্ষ থেকে। ইজরায়েলে সরকার ৭ অক্টোবর পর থেকে বিভিন্ন সময় দাবি করে এসেছে যে গাজা গুঁড়িয়ে দেবে তারা, সেই মতো একের পর এক প্রাণঘাতি হামলা চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক পশ্চিমী দেশ এর কোন নিন্দা করে বরং সমর্থন করেছে। তাদের কথায় আত্মরক্ষার তাগিদে গাজায় আক্রমণ চালাচ্ছে ইজরায়েল।
উল্লেখ্য কয়েকদিন পূর্বে রাষ্ট্রসঙ্ঘে যখন যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল তখন ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারত। এবার ইজরায়েলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কারণ হিসাবে ভারতের যুক্তি তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রথম থেকেই যখন ইজরায়েলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে তখন নিজের বন্ধুর পাশে থেকেছেন মোদী।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিশ্ব জনমত থেকেছে প্যালেস্তাইনের পক্ষেই। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভা ২৯ নভেম্বর প্যালেস্তাইনের জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস হিসাবে বার্ষিক পালনের আহ্বান জানায়। আর চলতি বছরের ১৫ মে প্রথমবারের মতো, রাষ্ট্রসঙ্ঘ আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করেছে ইজরায়েলের দখলদারিতে ঘর হারানো প্যালেস্তাইনের নাগরিকদের।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যদিও বরাবরের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ব্রিটেনের মতো পশ্চিমী দেশ বসতি হারানোর ৭৫ তম বছর পালনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। যারা এবার যুদ্ধে সমর্থন করছে ইজরায়েলকে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ ইজরায়েলের দখলদারিকে নিন্দা করেছে বারবার। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এবারের অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছিল ইজরায়েল। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের প্রতিনিধি গিলাদ এরদান বলেছিলেন, ‘‘এই ঘৃণ্য অনুষ্ঠানে যোগদানের অর্থ হল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে একটি বিপর্যয় বলে অভিহিত করে প্যালিস্তিনিয় ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে শান্তির যে কোন সুযোগকে ধ্বংস করা।’’
ইহুদিদের জন্য আরবের ভূখণ্ড থেকে বের করা হয়েছিল ইজরায়েলকে। আসলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন দখলদারির রাস্তা বাধাহীন করতে তৈরি হয়েছিল এই রাষ্ট্র। বারবার সংঘর্ষে ঘর ছাড়া হয়েছেন প্যালেস্তাইন সহ আরব দুনিয়ার মানুষ। এই বিপর্যয়কে তাঁরা বলেন ‘নকবা’।
‘দ্যা হান্ডড্রেড ইয়ার্স ওয়ার অন প্যালেস্তাইন’ বইয়ের লেখক রশিদ খালিদি ২০২১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয় যার নাম ইজরায়েল। আরেকদিকে প্যালেস্তাইনকে প্রতি মুহূর্তে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্যালেস্তিনিয়দের জন্য, এটি তাঁদের সমাজের ধ্বংস, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নেওয়া। তাঁদের অধিকাংশের বহিষ্কার এবং তাদের অধিকাংশের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা।’’
কেন এই সংঘাত? স্পষ্ট হবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের অবস্থান দেখলেই।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৮১ তম প্রস্তাবনায় প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব এবং ১৯৪ তম প্রস্তাবনার প্যালেস্তাইন শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবকে মান্যতাই দেয়নি ইজরায়েল। প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রপতি ক্ষোভে দাবি করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলের সদস্যপদ বাতিল করার।
রাষ্ট্রসঙ্ঘেরই পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে প্যালেস্তাইনের ৫৩০টি গ্রাম, ঘর বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার জন মানুষ। রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিশ্ব জনমত মান্যতা দেয়নি ইজরায়েলকে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, এমনকি পশ্চিমী বিশ্বের বহু মানুষের কাছে ইজরায়েল আসলে একটি দখলদার রাষ্ট্র।
Comments :0