মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে এরাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি, জালিয়াতি, নৈরাজ্য, অরাজকতা কোন স্তর পৌঁছেছে সেটা বোধ হয় কাউকে নতুন করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। যে শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে চিরকাল সমাজ দেখে এসেছে সেই শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদাকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে এই সরকার। সাধারণ মানুষ যেটা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারবে না সেটা করে দেখিয়েছে এই সরকার। অযোগ্য, অপদার্থ, শিক্ষক নামের কলঙ্করা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি কিনেছে। বিক্রি করেছে অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত ভাইয়েরা। সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সর্বত্র নিখুঁত পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির মহাপর্ব। শিক্ষায় সরকারি ব্যয় বাড়ার বদলে কমেছে। যেটুকু ব্যয় তার অর্ধেক দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে তৃণমূলী কার্যালয়ের পাশাপাশি দুর্নীতির ও দুষ্কৃতীর আঁতুড় ঘরে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষক অধ্যাপক নিয়োগ কার্যত বন্ধ করে দিয়ে পঠনপাঠন শিকেয় তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখন এরাজ্যে নেই যেখানে সব বিষয়ের পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে। শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে অধিকাংশ স্কুল-কলেজ। ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশ। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। নতুন পরিকাঠামো দূরের কথা, পুরানো কাঠামো মেরামতির অর্থ নেই। দৈনন্দিন স্কুল চালাবার অর্থও নেই। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোচনীয় দুরবস্থা।
স্বাভাবিকভাবেই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি, এমনকি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ছেলেমেয়েরা, অভিভাবক। একাংশ অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মমতা ব্যানার্জির স্কুল ছেড়ে বেসরকারি স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জিরা তাতে পরোক্ষে উৎসাহ জোগাচ্ছে। তাতে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবসার রমরমা আর তোলাবাজির রাস্তা প্রশস্ত হয়। আবার একাংশ ছেলেমেয়েরা সরাসরি প্রশ্ন করছেন লেখাপড়া করে সময় নষ্ট ও অর্থনষ্ট না করে যাহোক কিছু রোজগারে মন দেওয়া ভালো। এরাজ্যে কোনও কাজের সুযোগ নেই। লেখাপড়া করে বেকার জীবন কাটাতে হবে। তারচেয়ে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী হয়ে রোজগারে মন দিলে অন্তত খেয়ে পরে বাঁচা যাবে। তাই সরকারি স্কুলে ছাত্রভর্তি দ্রুত কমছে। কোথাও স্কুল ছাত্র শূন্য হয়ে গেছে। ২০২৪-২৫ সালেই এরাজ্যে ৩৮১২টি স্কুলে একজন ছাত্রও ভর্তি হয়নি। এখানে বেশ কয়েক হাজার স্কুল আছে যেখানে একজন শিক্ষকও নেই। আবার লক্ষাধিক স্কুল আছে যেখানে একজন মাত্র শিক্ষক। একজন শিক্ষক চার-পাঁচটা ক্লাসে সব বিষয় পড়ালে কেমন শিক্ষা হয় সেটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। মমতা ব্যানার্জির দ্বিতীয় দফার সরকারের সময় থেকে স্কুলছুট বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা মহামারীর আকার নিয়েছে। এই সরকার শিক্ষার পেছনে অর্থ ব্যয় চায় না, তাই যোগ্য, দক্ষ স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে না বেতন খাতে বেশি খরচ হবে বলে। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করে অতিথি শিক্ষক, প্যারাশিক্ষক অর্থাৎ সিভিক শিক্ষক দিয়ে পঠন পাঠন চালাতে চায়। তাতে পাঁচ-সাত হাজার টাকা বেতন দিলেই চলে। শিক্ষাঙ্গনে পাঠাগারের জন্য টাকা নেই। ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি নেই। সর্বত্র শূন্যতা খাঁ খাঁ করছে। এখানে শাসকের বৈঠকখানা চলতে পারে, পড়াশুনা নয়।
Editorial
শিক্ষা পরিত্যক্ত রাজ্য
×
Comments :0