সত্যিই এক আজব দেশ আমেরিকা। দেশে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আছেন, নির্বাচিত আইন সভা অর্থাৎ কংগ্রেস ও সেনেট আছে। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কার্যত কোনও সরকার নেই। সরকারি পরিভাষায় যাকে বলে শাটডাউন, সেটাই চলছে। শাট ডাউন মানে রাষ্ট্রপতি এবং সেনেট কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধের জেরে অচলাবস্থা। সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করে দিলেও মার্কিন কংগ্রেস সেটা অনুমোদন করেনি। ফলে বিল আটকে গেছে। সরকারি অর্থ ব্যয় বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থমকে গেছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কাজ নেই। এক মাস কোনও সরকারি কর্মীর বেতন জোটেনি। ভাবা যায় বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে সরকারি কর্মীরা একমাস বেতন পাননি। কবে থেকে অবস্থা স্বাভাবিক হবে নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে একদিকে শাসক রিপাবলিকান অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রাটদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ আর রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের একগুঁয়ে মনোভাব যথার্থ অর্থেই এক অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
আমেরিকায় মোট সরকারি কর্মী ২১লক্ষ। ১ অক্টোবর থেকে শাটডাউন শুরু হওয়ায় কেউ কোনও বেতন পাননি। এদের একটা অংশ স্থায়ী। বাকিটা অস্থায়ী বা ঠিকা কর্মী। সাড়ে সাত লক্ষ ঠিকা কর্মীকে ইতিমধ্যেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭ লক্ষ কাজ করলেও বেতন মিলছে না। শাটডাউনে শুধু সরকারি কর্মচারীদের কাজ ও বেতন বন্ধ হয়নি, পৌর পরিষেবা এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবাও কার্যত বন্ধের মধ্যে। অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় সর্বত্র অস্থায়ী কর্মীদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকায় এমন শাটডাউনের ঘটনা অতীতেও বহুবার ঘটেছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে সামগ্রিকভাবে দেশের স্বার্থের কথা ভেবে। কিন্তু ট্রাম্প জমানায় উদার গণতন্ত্রের অবশিষ্ট টুকুও যখন মিলিয়ে যেতে বসেছে অতি দক্ষিণপন্থার দাপটে তখন কেউই জমি ছাড়তে রাজি নয়। ফলে নীতি, আদর্শ ও অবস্থানকে ঘিরে বিভাজন ও মেরুকরণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষ ভয়ানক সঙ্কটে পড়লেও ট্রাম্প মাথা নোয়াতে রাজি নন। ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসে দু’পক্ষের মধ্যে একদফা বৈঠক হলেও বোঝাপড়া হয়নি।
সমস্যার মূলে ট্রাম্প প্রশাসনের জনবিরোধী অতি দক্ষিণপন্থী নীতি। তিনি বড় আকারের সরকার চান না। গুচ্ছ গুচ্ছ জনকল্যাণকর প্রকল্প পছন্দ করেন না। ক্ষমতায় এসেই তিনি বিশ্বের ধনীতম কর্পোরেট মালিক ইলন মাস্ককে মাথায় বসিয়ে নতুন দপ্তর খুললেন সরকারি কর্মী ও সরকারি ব্যয় ছাঁটাই দপ্তর। কয়েক মাসের মধ্যে বহু কর্মী ছাঁটাই করে এবং সরকারি বরাদ্দ কমানোর সুপারিশ করে তিনি দপ্তর ছেড়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত অবস্থান হলো সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয় বন্ধ করতে। আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষদের জন্য সরকারি ব্যয়কে তিনি অপচয় মনে করেন। তাই শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, বার্ধক্য ভাতায় ব্যয় কমিয়ে ফেলতে চান। বিপরীতে তাঁর লক্ষ্য বিত্তবানদের কর এবং কর্পোরেট কর কমানো। সাম্রাজ্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী মানসিকতা থেকে চান প্রতিরক্ষা, পুলিশ, রাষ্ট্রীয় নজরদারি, ইমিগ্রেশন রোধ ইত্যাদিতে ব্যয় বাড়াতে। এই কারণেই শুধু বিরোধী ডেমোক্রাটদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তীব্র হচ্ছে তাই নয়, তাঁর দলের অনেকের সঙ্গেও তাঁর বিরোধ বাড়ছে। বস্তুত তার বিল সেনেটে আটকে গেছে কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য বিরোধিতা করায়।
Editorial
অচল সরকার
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0