Women's cricket world cup & manuwad

মনুবাদী শাসকের মুখে সপাটে চড় হরমনপ্রীতদের জয়ে

খেলা জাতীয়

প্রতীম দে

নভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল অ্যাকাডেমি স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যরা। যে রাজ্যের বুকে দাঁড়িয়ে তৈরি হলো ইতিহাস, সেই রাজ্যের নাগপুরেই আরএসএসের সদর দপ্তর।
সেই আরএসএস যারা মনুবাদে বিশ্বাসী। মনু সংহিতায় বলা আছে  “বাল্যে পিতুর্বশে তিষ্ঠেৎ পাণিগ্রাহস্য যৌবনে।
পুত্রাণাং ভর্তরি প্রেতে ন ভজেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্রতাম।" (৫/১৪৮)
নারী বাল্যে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রদের অধীন; কখনও স্বাধীনভাবে থাকবেন না। এখানেই শেষ নয়। মনুবাদে বিশ্বাসী মানুষ মনে করেন মহিলাদের জন্ম শুধমাত্র ঘরের কাজ করার জন্য। রান্না ঘরেই তারা আবদ্ধ থাকবে। এই সব ধারনাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে হরমনপ্রীত কৌর, রিচা ঘোষরা।
জয় শাহের হাত থেকে যখন ট্রফি নিচ্ছিলেন হরমনপ্রীত, তারপর তাদের উচ্ছ্বাস যেন দেখিয়ে দিচ্ছিল বার বার যে, আজ কোন অর্ধেক আকাশ নয় গোটা বিশ্ব আমাদের। যারা মহিলাদের দমিয়ে রাখতে চায় তাদের আজ মাথা নিচু করার দিন।
ঝুলন গোস্বামী, মিতালী রাজরা লড়াই করেছিলেন। তবে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সেই কাজ গতকাল করেছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বর্তমান সদস্যরা। আর তাই ট্রফি হাতে ঝুলনের চোখের জল এখনও ভুলতে পারছেন না অনেকে।
সাধারণত একটা বিশ্বকাপ ফাইনালে দল উঠলে একটা জিনিস লক্ষ করা যায়। তা হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় বড় জাতীয় পতাকা এবং খেলোয়াড়দের ছবি দেওয়া পোস্টার। ক্রিকেটে ভারত, ফুটবলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা যে দলই ফাইনাল বা সেমি ফাইনালে উঠেছে তার জন্য গলা ফাটিয়েছে কলকাতা। হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাচার। কিন্তু গতকালের ফাইনালটা ছিল একটু আলাদা। সেমি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর যেন শুরু হলো সব আচলোনা। তার আগে সেই ভাবে কোন আলোচনা ছিল না। আসলে বিশ্বাসই তো ছিল না যে ‘মেয়েরা পারে’। 
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যে কাজ এখনও করে উঠতে পারেনি। সেই কাজটা করে দেখিয়ে দিল ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কাজটা কখনও সহজ ছিল না। এই দেশে মহিলাদের এখনও কোন চোখে দেখা হয় তা আমরা ভালো ভাবে জানি। রাতের বেলায় মহিলারা কোন কাজ করতে পারবে না এমন নিদান এখনও এই দেশে চলে। পশ্চিমবঙ্গের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এই নিদান দিয়েছেন। রাত ১০টার পর মহিলাদের বাইরে বেরনো উচিত নয়। কিন্তু কী দেখা গেলো রবিবার। ঘড়ির কাঁটা যখন প্রায় মধ্যরাত তখন নাগপুর থেকে অদূরে নতুন ইতিহাস লিখছেন মহিলারা। নাগপুরের প্রিয় ছাত্রী হিসাবে সেই ইতিহাস রচনা দেখছেন মমতা।
আমাদের দেশে এখনও মহিলা ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কোন ভালো অ্যাকাডেমি নেই, নেই ভালো কোচিং। সরকারি ইচ্ছার কথা বাদ দিলাম। কিন্তু এই সবের মধ্যে দাঁড়িয়ে সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসে মেয়েরা ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চের যেই লড়াই দেখালো তা কুর্নিশ কুড়িয়েছে গোটা বিশ্বের। 
একটা সময় যেই মহিলা ক্রিকেটকে পাত্তা দেওয়া হতো না। সেই ধারণা বদলে গিয়েছে। ফাইনালেও দেখা গিয়েছে গোটা স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক। টিভির পর্দায় একবারও মনে হয়নি যে এটা আইসিসি বিশ্বকাপ (পুরুষ) থেকে কম কিছু। 
দেশের মান রেখেছে দেশের মেয়েরা। ১৯৮৩ সালের জয় ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে ছিল। এই জয় মহিলা ক্রিকেটের মোড় ঘোরায় কি না সেটাই এখন দেখার।
তবে গতকালের খেলা শুধু মেয়েরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে তা নয়। একজন পুরুষও নিজের যোগ্যতা গতকাল প্রমাণ করেছেন। তিনি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের কোচ। অমল মুজুমদার। ভারতীয় দলে কোনদিন সুযোগ পাননি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ধারাবিহক সাফল্যের পরও। ২০২৩ সালে মহিলা দলের দায়িত্ব নিয়ে নিজের বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment