Editorial

উচিত শিক্ষা

সম্পাদকীয় বিভাগ

এরাজ্যে বিশেষ করে গ্রাম বাংলার গরিব মানুষকে তাদের কাজের অধিকার ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের যাবতীয় ছলাকলা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। মোদী সরকারের আবেদনকে পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প চালু করতে হবে, কোনও অবস্থাতেই বন্ধ রাখা যাবে না। এই মর্মে ১ আগস্ট থেকে প্রকল্প চালু করা যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট আগে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট তাতে হস্তক্ষেপ না করে বহাল রেখেছে।
তৃণমূল বনাম বিজেপি তথা মমতার সরকার বনাম মোদীর সরকারের লোক দেখানো নকল যুদ্ধে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছিল ঠিকই কিন্তু তাতে ১০০ দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল গরিব পরিবারের রুজি রোজগারের সঙ্কটের কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। এমনকি ইতিমধ্যে কাজ করার পর বকেয়া টাকাও মিলছিল না। অথচ বছরের যে সময়টায় কৃষিক্ষেত্রে কাজ কমে যায় সেই সময় রুজিহীন গরিব মনুষের জন্যই চালু হয় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। এই প্রকল্প প্রয়োজন নির্ভর। অর্থাৎ কেউ কাজ চাইলে তাকে কাজ দেওয়া সরকারের বাধ্যতামূলক। সর্বোচ্চ ১০০ দিন কাজ পাবার গ্যারান্টি আছে এই প্রকল্পে। অথচ সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোদী সরকার পুরোপুরি বেআইনিভাবে এবং অসাংবিধানিকভাবে গ্রাম বাংলার গরিব মানুষের কাজ পাবার অধিকার, রুজির অধিকার কেড়ে নিয়েছে সেই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে।
এমন পরিস্থিতিতে গরিব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১০০ দিনের কাজ ফের চালু করার দাবিতে ময়দানে নামে বামপন্থী কৃষক-খেতমজুর সংগঠন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন এবং সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্যকমিটি। রাজ্যজুড়ে ব্লকে ব্লকে আন্দোলন সংগঠিত করার পাশাপাশি তারা কলকাতা হাইকোর্টে রেগা বন্ধ করার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে। সেই মামলায় গত ১৮জুন হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় ১ আগস্টের মধ্যে রেগা চালু করার জন্য। কিন্তু যথারীতি গরিব মানুষের শত্রু বিজেপি সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। কোর্ট সেই আবেদন একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করে।
কৌতুকের বিষয় এই রায় জানার পর ভাইপো সহ তৃণমূলী নেতারা উদ্বাহু নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করছে এটা তাদের দলের ও সরকারের জয়। দু’কানকাটা না হলে এমন হ্যাংলামি সম্ভব নয়। জয়ের এমন নির্লজ্জ দাবির আগে ওদের উচিত কৃষকসভা ও খেতমজুর ইউনিয়নের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মামলাটা তৃণমূল বা ওদের সরকার করেনি। করেছে খেতমজুর ইউনিয়ন। জয়, সাফল্য বা কৃতিত্ব সবটাই কৃষক-খেতমজুরদের।
প্রসঙ্গত, সরকারের দুর্নীতি ও নেতা-মন্ত্রীদের চুরি, লুট আড়াল করতে রাজ্য সরকার মুড়িমুড়কির মতো মামলা করে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে। তাতে দেশের সবচেয়ে নামী দামি উকিলদের নিয়োগ করে জনগণের করের টাকায়। অথচ লক্ষ লক্ষ গরিব পরিবারের রুজির স্বার্থে মামলা করার প্রয়োজন মনে করেনি। একইভাবে গরিব মানুষের কাজের অধিকার হরণ করতে তৃণমূলী কায়দাতেই কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছে মোদী সরকার।
এবিষয়ে সন্দেহ নেই, রেগায় দুর্নীতি আকাশ ছোঁয়া। মৃত ব্যক্তির নামে এবং হাজারো কায়দায় ভুয়ো জবকার্ড বানিয়ে শত শত কোটি টাকা লুট করেছে নেতা ও সরকারি আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় তদন্তে ও হাইকোর্টের তদন্তে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ মিলেছে। আর এই দুর্নীতির অজুহাতে প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। এটা অনেকটা মাথায় ব্যথা হচ্ছে বলে মাথাটাই কেটে বাদ দেবার মতো। দুর্নীতি হলে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ সাজা হোক। দুর্নীতির কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাই বলে প্রকল্প বন্ধ হবে কেন? এই ন্যায্য ও সঙ্গত প্রশ্ন খেতমজুর ইউনিয়ন ও কৃষকসভার। এবার স্বীকৃতি পেল কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে।

 

Comments :0

Login to leave a comment