একবার দু’বার নয়, ইতিমধ্যে অন্তত ৬০বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে শুধু অপমান করেই ক্ষান্ত হননি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, রীতিমতো মোদীকে হাসির খোরাক ও উপহাসের পাত্র বানিয়ে ফেলতে চাইছেন। অপ্রতিহত গতিতে তিনি দাবি করেই চলেছেন পাক-ভারত সামরিক সংঘাত বন্ধের মূল নেপথ্য কারিগর তিনিই। তারই মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ ভারতের বহুল প্রচারিত অপারেশন সিঁদুর মোদীরা করতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাম্পের চাপের ফলে। গোটা দুনিয়ার সামনে তাঁর কৃতিত্ব জাহির করে তিনি দাবি করছেন তিনি সেরা শান্তির দূত। কয়েক মাসের মধ্যে ৮টি যুদ্ধ তিনি থামিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক পাক-ভারত যুদ্ধ। কারণ দু’টো দেশই পরমাণু অস্ত্রে সুসজ্জিত। অতএব নোবেল শান্তি পুরস্কার একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সহ আরও কয়েকজন ট্রাম্পের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের পক্ষে জোরালো দাবি তুলেছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো ট্রাম্প তাঁর এই মধ্যস্থতার দাবি ঘরোয়া পরিসরে আলাপচারিতায় বলছেন না। বলছেন খোদ ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে বসে সাংবাদিক সম্মেলনে, তাঁর সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে, এমনকি বিভিন্ন দেশ সফরকালে এবং বহুদেশীয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে, যেখানে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকেন। সর্বশেষ তিনি এই দাবি সর্বাধিক জোরালোভাবে করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় আপেক (এশিয়া প্যাসিফিক ইকনমিক কো-অপারেশন) গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন মঞ্চে ভাষণ দেবার সময়। প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে অবস্থিত আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো, চিলি, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া সহ ২১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সামনে তিনি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন কীভাবে বন্ধ করেছেন যুদ্ধ। তাতে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন সংঘাত শুরুর পর তিনি প্রথমে মোদীকে ফোন করে বলে দেন যুদ্ধ বন্ধ না করলে ভারতের কোনোরকম বাণিজ্য হবে না। ভারতের পণ্যের উপর ২৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। পরে পাকিস্তানকে ফোন করে তিনি নাকি একই কথা বলেন। এর দু’দিন পর মোদী নাকি ট্রাম্পকে ফোন করে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হন। পাকিস্তানও তাই করে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান ভারতের ৭টি চকচকে নতুন যুদ্ধ বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। পাশাপাশি মোদী ও আসিম মুনিরের প্রশংসা করেন। মোদীর রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। মুনিরকে দুর্ধস্য যোদ্ধা বলে বর্ণনা করেন।
ট্রাম্পের এই দাবি পাকিস্তান প্রথম থেকেই স্বীকার করে নিলেও এবং তারজন্য ট্রাম্পের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলে ভারত কিন্তু অস্বীকার করেছে। সরকারের তরফে একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করেছে যদিও একবারের জন্য আমেরিকা বা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ট্রাম্পই বার বার নির্দিষ্ট করে বলছেন মোদীর সঙ্গে কথা বলে বাণিজ্যের বন্ধের ভয় দেখিয়ে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করিয়েছেন। যেখানে ট্রাম্প নিজে মোদীর নাম করে কথা বলছেন সেখানে মোদী গত প্রায় ছ’মাসের মধ্যে একবারের জন্যও মুখ খোলেননি। ট্রাম্পের কথার জবাব দেননি। ট্রাম্পকে মোদীর কেন এত ভয় বোঝা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অবশ্য ট্রাম্প-মোদীর ফোনাফোনি হয়েছে। তাতে মোদী ট্রাম্পের প্রশংসাই করেছেন কিন্তু ভুলেও যুদ্ধ বন্ধের প্রসঙ্গ তোলেননি বা ট্রাম্পের মুখের উপর উচিত জবাব দেননি। ট্রাম্প যেভাবে অনবরত মোদীকে অপমান-উপহাস করে চলেছেন তাতে ব্যক্তি মোদীর গায়ে না লাগতে পারে কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অপমান তো ভারতের অপমান। ট্রাম্প যদি মিথ্যে বলে থাকেন তাহলে মুখ খুলে দুনিয়াকে জানিয়ে দিন। এইভাবে ভয়ে সিঁটিয়ে দেশের অপমান হজম করবেন না। আর যদি ট্রাম্প ঠিক দাবি করে থাকেন তাহলে সেটাও জানিয়ে দিন। হ্যাঁ-না কিছু না বলে তিনি বোবা সেজে বসে আছেন। আসলে তাঁর সরকারের সাজানো অর্থনীতি আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যের উপর এতটা নির্ভরশীল এবং মার্কিন সহযোগী হয়ে মার্কিন বদান্যতায় আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারে এতটাই প্রত্যাশী যে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয় এমন কোনও কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকি ট্রাম্পের শর্তে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে মুখিয়ে আছেন। এই ট্রাম্পের অপমান সাদরে গ্রহণ করছেন। এবং প্রমাণ করে দিচ্ছেন ট্রাম্পের কথা মেনে চলা ছাড়া তাঁর উপায় নেই।
 
                                         
                                    
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0