ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে উঠলাম, তখন উপত্যকা জুড়ে সকালের হিমশীতল হাওয়া হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে যাচ্ছে। আমরা একে একে আমাদের ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে এলাম। আজ যে আমাদের ট্রেকিংয়ের শেষ দিন। এই অরণ্য বনানীর থেকে বেরিয়ে সভ্যতার পরশ পাবো আমরা। আজ আমাদের গন্তব্য ছাত্রু ক্যাম্পসাইট।
সকালের খাবার খেয়ে আমরা যখন আমাদের আশু লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ততক্ষণে আমাদের ট্রেক লিডার দেবেন্দ্র আর দেবরাজ জল মাপতে শুরু করে দিয়েছে ট্রেকপোল ডুবিয়ে ডুবিয়ে। আমি একবার জলে হাত দিলাম। বরফ গলা জল, কনকনে ঠাণ্ডা। হাত প্রায় কেটে যাওয়ার মত অনুভূতি হলো। কেদারকন্থাতে ফ্রোস্টবাইট এর অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। সেই কথাই আবার মনে পড়ে গেলো। কিন্তু এই জল হেঁটে পেরোতে হবে আমাদের। ভাবতেই শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো। এ স্রোত আমি চিনি। আতঙ্ক!
এবার জায়গা বাছাই হয়ে গেছে। আমরা একে অন্যের হাত ধরে এক মানবশৃঙ্খল তৈরি করেছি, এবং একে একে নামবো জলে। হাটু প্রমাণ জল নদীতে। জল প্রথম পা দিতেই টের পেলাম যেন হাজার সূচ একসাথে ফুটিয়ে দেওয়া হলো আমার দুপায়ের পাতাতে। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলাম আমি। পিছন থেকে আমাদের এক সহযাত্রীর গলা ভেসে এলো। মনকে বিক্ষিপ্ত করো, কষ্ট মম হবে। আমরা সবাই মিলে চিৎকার করে উঠলাম, "হর হর মহাদেব!" সেই সিংঘনিনাদে আমরা সব যন্ত্রণা উপেক্ষা করে পা ফেলে ফেলে এগোতে লাগলাম জল কেটে।
ওপরে পৌঁছে দেবরাজ বলল দাঁড়িয়ে পর না। পা নাড়াতে থাকো, নাহলে পা অবস হয়ে যেতে পারে। আমরা একটু একটু করে স্বাভাবিক হলাম। তারপর আবার জুতো পোরে পথ ধরলাম। নীল আকাশ আর ধূসর প্রান্তর যেন ডেকে চলেছে অবিরত। এগিয়ে চলেছি আমরা।
পথের সৌন্দর্য ভাষাতে বলা কঠিন। কখনও সবুজ ঘাসে ঢাকা জমি আসছে বটে, তবে অধিকাংশই ধূসর পাথুরে এলাকা। ঝুরো মাটি আর খাড়া পাহাড়ি রাস্তা। দূরে পাহাড়ের গায়ে মরা নদীর সোঁতা। পাথরে পাথরে পা ফেলে একটু একটু করে নীচে নামছি আমরা। এমন সময় পাহাড়ের গায়ে রাস্তা দেখলাম আমরা। সে রাস্তায় একটা জীপ এগিয়ে চলেছে। উল্লসিত আমরা সবাই চিৎকার করে উঠলাম, আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি। ওই তো ছাত্রু !
Comments :0