Elections and the Hindutva politics

নির্বাচন ও হিন্দুত্বের রাজনীতির সঙ্কট

উত্তর সম্পাদকীয়​

অমিত সরকার


সদ্যসমাপ্ত মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড নির্বাচন ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবাচ্ছে।
কয়েকমাস আগেই লোকসভা নির্বাচনে যে মহারাষ্ট্রে ইন্ডিয়া জোটের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল কেন্দ্রের এনডিএ জোট, কীভাবে কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হলো এনডিএ জোট? পাশাপাশি, আরও যে প্রশ্নটি ভাবাচ্ছে তা হলো, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড। দুই রাজ্যেই বিজেপি’র প্রচারের একটা বড় ইস্যু ছিল হিন্দুত্ব। তাহলে মহারাষ্ট্রে যে কৌশল সফল হলো, ঝাড়খণ্ডে তা হলো না কেন। এর আগেও আমরা দেখেছি, জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভোটে বিজেপি যেভাবে হিন্দুত্বের বিভাজনের রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছিল, তা সফল হয়নি। অথচ সবাইকে অবাক করে দিয়ে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এবং সেখানে কাজ করেছে জাতপাতের ইস্যু। বিশেষত, দীর্ঘ কৃষক আন্দোলনের পরেও হরিয়ানায় ভোটের এই ফল বিস্মিত করেছে অনেককে।
এখানে একটা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। হরিয়ানা  ও মহারাষ্ট্র পড়ে হিন্দি-হিন্দু বলয়ের মধ্যে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ ও খান্দেশের একটা বড় এলাকা গুজরাট ও মধ্য প্রদেশের লাগোয়া। মূল ভাষা মারাঠি হলেও এবং মারাঠি অস্মিতা থাকা সত্ত্বেও এই রাজ্যটি দীর্ঘদিন ধরে, সেই বাল ঠাকরের আমল থেকে হিন্দুত্বের প্রচারে জারিত ছিল। তার ওপর এই রাজ্যের নাগপুর আরএসএস’র সদর দপ্তর। এখানে আরএসএস’র প্রভাবও খুব বেশি। সুতরাং, মহারাষ্ট্রকে হিন্দি বলয়ের রাজ্য হিসাবেই ধরে নিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোটে সফল বিজেপি-আরএসএস। লোকসভা ভোটের ধাক্কা তারা এই দুই রাজ্যে সামাল দিতে পেরেছে। অন্যদিকে হিন্দি বলয়ের একেবারে বাইরের দুই রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে বিজেপি-আরএসএস’র ধর্মের ভিত্তিতে  কৌশল ব্যর্থ। এক্ষেত্রে মোটা দাগে একথাটা বলা যায় যে, বিজেপি-আরএসএস যেভাবে গোটা দেশটাকে হিন্দু ভারত হিসাবে নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা দক্ষিণ ভারত সহ হিন্দি বলয়ের বাইরের রাজ্যগুলিতে এসে বার বার ধাক্কা খাচ্ছে। ভারতবর্ষ নামক দেশটা যে আদতে বহুত্ববাদী, চাইলেই যে দেশটাকে হিন্দু ভারত হিসাবে গড়ে তোলা যাবে না, একাধিক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়ে সেই সত্যটাই সামনে উঠে আসছে। 
কিন্তু মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটের ইন্ডিয়া জোটই তো বড় ধাক্কা দিয়েছিল এনডিএ-কে। সেই ধাক্কা তারা সামলে নিল কীভাবে? প্রাথমিক উত্তর হলো, অর্থনৈতিক পপুলিজম, জাতপাতের সমীকরণ এবং আরএসএস’র সাংগঠনিক প্রয়াস— এই তিনের সমন্বয়। 
মহারাষ্ট্রের বিশাল এলাকা কৃষিপ্রধান। বহুদিন ধরে এই রাজ্যের কৃষকেরা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন। এরাজ্যের পেঁয়াজ, দুধ, সয়াবীন, তুলো ও টমেটো চাষিরা অনেকদিন ধরেই নানা আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। ফলে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যতম ভোটের ইস্যু ছিল কৃষি সঙ্কট। লোকসভা ভোটে শোচনীয় ফলাফলের পর সম্ভবত কৃষি সঙ্কট নিয়ে সতর্ক হয়ে যায় বিজেপি শিবির। দ্য হিন্দু সিএসডিএস-লোকনীতি সমীক্ষা জানাচ্ছে, পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প  পিএম ফসল বিমা যোজনা, পিএম কিষান মানধন যোজনা, শ্বেতকরী সম্মান যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে উপকৃতের সংখ্যা রাতারাতি বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এই প্রকল্পগুলির সুবিধা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে মহাজুটি সরকার। ফলে বেশি ভোট গেছে মহাজুটির বাক্সে। উপরে অন্য একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, ৩০ সেপ্টেম্বর শিন্ডে সরকার তুলো ও সয়াবীন চাষিদের এমএসপি ও বাজার দামের ফারাক মেটাতে ৬৫ লক্ষ কৃষককে দিয়েছিল ২৫০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লাড়কি বহিন যোজনাকে। এই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার যোগ্য হিসাবে ধরা হয়েছে ২১ থেকে ৬৫ বছরের সেই সব মহিলাকে যাদের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম। এই টাকা পাওয়ার কথা রাজ্যের ২ কোটি ৩৪ লক্ষ মহিলার। নির্বাচনের ঠিক আগে এদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল একসঙ্গে ৫ মাসের ৭৫০০ টাকা। মধ্য প্রদেশে বিজেপি’র এই কৌশল সফল হওয়ায় তার অনুকরণ করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। এই কর্মসূচির ফলে গ্রামীণ মহিলাদের ৫৫ শতাংশ এবং শহুরে মহিলাদের ৪৪ শতাংশ সমর্থন করেছেন মহাজুটিকে। এক্ষেত্রে এমভিএ পেয়েছে যথাক্রমে ৩২ ও ৩৪ শতাংশ মহিলার সমর্থন। সবচেয়ে বড় কথা, রাজ্যের ৮৩ শতাংশ পরিবারের মহিলারা এই টাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। 
অর্থনৈতিক সুবিধাদানের এই ফ্যাক্টরের সঙ্গে জাতপাতের সমীকরণের হিসাবও করা দরকার। লোকনীতি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, উঁচু জাতের ৬৩ শতাংশ,মারাঠা-কুনবিদের ৫৪ শতাংশ, অন্যান্য ওবিসিদের ৬০ শতাংশ, তফসিলি জাতিদের ৩৪ শতাংশ এবং অন্যান্যদের ৫১ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে মহাজুটি। এক্ষেত্রে এমভিএ’র সমর্থন যথাক্রম ২৫,৩২,২৬ ও ২৫ শতাংশ। একমাত্র আদিবাসী ভোটারদের ৫৬ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে এমভিএ। 
আমরা জানি, লোকসভা ভোটের সময় হিন্দি বলয়ের অন্যান্য রাজ্যের মতো মহারাষ্ট্রেও সংবিধান ও সংরক্ষণ হয়ে উঠেছিল একটা বড় ইস্যু। ছিল কৃষক সঙ্কটের ইস্যুও।  সেই দুই ইস্যুতেই বিজেপি-আরএসএস’র গড়ে তোলা জাতপাত ভিত্তিক হিন্দুত্বের সমীকরণকে ধাক্কা দিতে পেরেছিল ইন্ডিয়া জোট। সেই ফাটলের অস্তিত্ব টের পেয়ে এবার মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছিল আরএসএস। একদিকে ছিল বাঁটেঙ্গে তো কাটেঙ্গের মতো বিভাজন সৃষ্টিকারী স্লোগান। মূলত বহুদিন বঞ্চিত থাকা নানা ধরনের মাঝারি ও ছোটখাট কৃষিজীবী জাতিবর্ণের লোকজন, যারা মূলত ওবিসিভুক্ত,তাদের নানা ধরনের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং হিন্দুত্বের স্লোগান সামনে রেখে গড়ে তোলা হয়েছিল নতুন সমীকরণ। জাতপাতের সেই সমীকরণেই কংগ্রেসের আধিপত্য খর্ব করা হয়েছিল। অন্যান্য ওবিসি ও দলিতদের সঙ্গে নিয়ে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলা হয়েছিল জাতপাত ভিত্তিক এক ভোট ব্যাঙ্ক। এটাই ছিল এবং এখনও রয়েছে আরএসএস’র জোরের জায়গা। গত লোকসভা ভোটে সংবিধান ও সংরক্ষণ ইস্যুতে উত্তর প্রদেশে এই সমীকরণই ভেঙে দিয়েছিলেন অখিলেশ যাদব। তবে এবার মহারাষ্ট্রে কমবেশি সেই সমীকরণকেই ফের কাজে লাগিয়েছে বিজেপি-আরএসএস। এই সমীকরণকে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে ক্রমাগত বিভাজনের রাজনীতি প্রচারের মধ্যে দিয়ে।
জাতপাত ও অর্থনৈতিক ইস্যু— দুটোর সম্মিলনেই মহারাষ্ট্রে এবারের বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। শুধু মাত্র জাতপাতের সমীকরণে এই জয় পাওয়া সম্ভব ছিল না। জাতপাতের সমীকরণের সীমাবদ্ধতা ঠিক কোথায়, তা লোকসভা ভোটে দেখিয়ে দিতে পেরেছিল ইন্ডিয়া জোট। ফলে জাতপাতের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়েছে অর্থনৈতিক পপুলিজমকে। 
ঝাড়খণ্ড বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও একটা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। সেটা হলো, এখানকার ভোটে অর্থনৈতিক পুপলিজমের ইস্যু কাজে লেগেছে ক্ষমতাসীন জেএমএম’র পক্ষে। কিন্তু বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতি এই রাজ্যে কাজ করেনি। 
ঝাড়খণ্ডে জেএমএম’র জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে মহিলাদের। এবং তারও পিছনে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মাইয়া সম্মান যোজনার ভূমিকা। এবছরের ৩ আগস্ট জেএমএম-আরজেডি-কংগ্রেস সরকার চালু করে এই কর্মসূচি। এই প্রকল্পে রাজ্যের ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি মহিলাদের দেওয়া হতো মাসে ১০০০ টাকা। উপকৃত হতেন ৫২ লক্ষ মহিলা। নির্বাচনী প্রচারে নেমে বিজেপি এই টাকা বাড়িয়ে মাসে ২১০০ করার প্রস্তাব দেয়। বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার ঠিক আগে ঝাড়খণ্ড সরকার জানিয়ে দেয়, তারা মহিলাদের এই ভাতা বাড়িয়ে করছে ২১০০ টাকা যা ডিসেম্বরেই পাওয়া যাবে। এবং তা পাবেন ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলারা। এই ঘোষণার প্রভাব পড়েছে ভোটদানেও। এবার ঝাড়খণ্ডে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৯১.১৬ লক্ষ মহিলা, যা পুরষ ভোটারদের চেয়ে ৬ লক্ষ বেশি। ভোটদানের হারের বিচারে, মহিলা ভোটারদের মধ্যে ৭০.৪৬ শতাংশ এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অথচ পুরুষদের মধ্যে এই হার ৬৫ শতাংশ। পাঁচ মাস আগে লোকসভা ভোটেও মহিলা ভোটদানের হার ছিল ৬৮.৬৭ শতাংশ, যেখানে পুরষদের ভোটদানের হার ছিল ৬৩.৭৯ শতাংশ। এবারের বিধানসভা ভোটে ঝাড়খণ্ডের ৮৪ আসনের মধ্যে ৭২টিতেই মহিলাদের ভোটের হার বেশি। এর মধ্যে ৪৮টি আসনেই জয়ী হয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীরা।  
যদি জাতপাতের হিসাব ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে,রাজ্যের ২৮টি তফসিলি উপজাতি আসনের মধ্যে ২৭টিতেই জয়ী হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। এর মধ্যে জেএমএম ২০টি ও কংগ্রেস ৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। একমাত্র সেরাইকেল্লা আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি’র চম্পাই সোরেন যিনি ভোটের আগে জেএমএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। সাঁওতাল পরগনার ১৮টি আসনে অনুপ্রবেশ নিয়ে জোরদার প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। তাতেও এখানে ১টি মাত্র আসনে জিতেছে তারা। কুর্মি-মাহাতো গোষ্ঠী এরাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ। এবার বিজেপি ও আজসুর ওপর ক্ষুব্ধ, ৩০ বছরের জয়রাম মাহাতোর ঝাড়খণ্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারী মোর্চা বিজেপি’র মাহাতো-কুর্মি ভোটে ভালো রকম থাবা বসিয়েছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ ছাড়াও অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকেও ভোটে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। তবে জানিয়েছিল, আদিবাসীদের এর আওতায় আনা হবে না। মূলত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বাকি ভোটারদের উত্তেজিত করাই ছিল বিজেপি’র লক্ষ্য। তবে অনুপ্রবেশ এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, কোনও প্রচারই বিজেপি’র পালে হাওয়া তুলতে পারেনি। দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া এই রাজ্যে আর্থিক সুবিধা ও আদিবাসী স্বাভিমানই শেষ পর্যন্ত বিজেপি’র বিভাজনের ন্যারেটিভকে পরাস্ত করেছে। যদি এই প্রবণতা ভবিষ্যতেও দেখা যায়, তাহলে একথা বলার সময় হয়ত আসবে যে হিন্দুত্বের সমীকরণ থেকে আদিবাসীদের দূরে রাখার সূত্রটি সম্ভবত খুঁজে পাওয়া গেছে। যদিও আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্বের মধ্যে দলিতদের আত্মস্থ করার যে কৌশল, তাকে নিষ্ক্রিয় করার পালটা কৌশল এখনও বিকশিত করে তোলার কাজ বাকি। 
সবশেষে আরও কয়েকটি পর্যবেক্ষণ করা যায়। শুধু স্বাভিমান প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতপাতের সমীকরণকে এখন আর খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছে না বিজেপি-আরএসএস শিবির। হিন্দি বলয়ে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে গেছে লোকসভা ভোটের সময়। ফলে জাতপাতের সমীকরণের আর্থিক বিলির রাজনীতিকেও কাজে লাগাতে হচ্ছে বিজেপি-আরএসএস-কে। এর মানে, নির্ভেজাল জাতপাতের রাজনীতি ক্রমশ তার সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাচ্ছে। ফলে ভোট টানতে একদিকে দরকার হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক পপুলিজম। অন্যদিকে আরও বেশি ফ্যাসিস্ত হয়ে উঠে ভোটারদের ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পথ ধরতে হচ্ছে শাসককে। এবার এই বিষয়টি দেখা গেছে উত্তর প্রদেশের উপনির্বাচনে। 
আমরা জানি, নয়া উদারবাদী অর্থনীতি ক্রমশ বেশি বেশি করে সম্পদের বৈষম্য বাড়িয়ে চলে এবং লোকজনকে আরও দরিদ্র করে তোলে। এই অর্থনীতিতে কাজের সুযোগ কমে এবং শোষণ আরও তীব্র হয়।  অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে রাষ্ট্র ক্রমশ পিছু হটতে শুরু করে। এবং অবাধ শোষণের মধ্যে দিয়ে দেশি-বিদেশি ক্রোনি পুঁজি তাদের সর্বোচ্চ মুনাফার পরিমাণ বাড়িয়ে চলে। কিন্তু এমন একটি নয়া উদারবাদী রাষ্ট্রে যদি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভোট করাতে হয়, তাহলে ক্ষমতায় থাকার জন্য বঞ্চিতদের ভোট পেতে দরকার হয় অর্থনৈতিক পপুলিজম। যে সুপার প্রফিট পুঁজিবাদ নিজের ঘরে তোলে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও তারই একাংশ রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সহায়তা হয়ে ফিরে আসে তাদের কাছে যারা তাদের শোষণের শিকার। এভাবে দূরে সরে যাওয়া রাষ্ট্র আর্থিক সহায়তার রূপ ধরে ফিরে আসে জনমানসে। এই বৈপরীত্য নয়া উদারবাদকে বয়ে চলতেই হবে যদি তাকে নির্বাচনভিত্তিক সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই কাজ করতে হয়। আর তা না হলে তাকে ক্রমশ গণতন্ত্রকে ছেঁটে ফেলে নির্ভেজাল স্বৈরতান্ত্রিক বা ফ্যাসিস্ত শাসনের দিকে এগতে হবে। সেটা যত বেশি হবে ততই বিরোধিতার ব্যাপ্তি ও গভীরতা আরও বাড়বে এবং সেধরনের শাসনের বিরুদ্ধে বঞ্চিত মানুষের লড়াই আরও তীব্র হবে। নয়া উদারবাদী শাসনের এই যে সঙ্কট, এদেশে আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্বের জোট ক্রমশ সেই সঙ্কটের আবর্তে গিয়ে পড়ছে। নির্বাচনে বিজেপি’র জয় ও পরাজয়, দুটোর মধ্যেই এই সঙ্কটের অনপনীয় ছাপ রয়ে যাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment