Kuntal Tapas

হেপাজতে নিয়েই কুন্তল-তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা সিবিআই’র

রাজ্য

যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের ‘কালীঘাটের কাকু’ কে?
নিয়োগকাণ্ডেই ধৃত বাগদার সেই ‘সৎ রঞ্জন’ ওরফে চন্দন মণ্ডল গাড়ি ভর্তি টাকা কলকাতার কোন ঠিকানায় পাঠাতেন?
ধৃত ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডলের মহিষবাথানের অফিস থেকে কোন কোন প্রভাবশালীর কাছে টাকা পৌঁছাতো? 
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে এখনও পর্যন্ত ১৫জন গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সিবিআই তদন্তে মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। আদালতে তা নিয়ে ভর্ৎসিতও হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। এই পরিস্থিতিতে এবার শিক্ষক নিয়োগকাণ্ডে কুন্তল ঘোষ থেকে তাপস মণ্ডল, প্রত্যেকের শেষ গন্তব্যের হদিশ পেতে চাইছে সিবিআই।
ইডি’র হেপাজতে থাকার পরে জেলেই ছিল তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। এর মধ্যে রবিবার তাপস মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার পরে সোমবার সিবিআই কুন্তল ঘোষকেও ইডি’র হেপাজত থেকে নিজেদের হেপাজতে নিল। এর আগের শুনানিতেই আলিপুরে বিশেষ আদালতে কুন্তলকে নিজেদের হেপাজতে নিতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ই্যসুর আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
সোমবার আদালতে তোলা হয় ধৃত তাপস মণ্ডল ও নিলাদ্রী ঘোষকে। আলিপুরের বিশেষ আদালত আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে কুন্তলকেও আদালত ২৩ তারিখ পর্যন্ত সিবিআই হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ফলে এবার নিজাম প্যালেসেই কুন্তল ও তাপসকে একসঙ্গেই নিজেদের হেপাজতে পেল সিবিআই। ইতিমধ্যেই ধৃত দুজন একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ এনেছে সাংবাদিকদের সামনে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতেই কুন্তল ও তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। সিবিআই’র দাবি, এর আগে জেরায় একাধিক তথ্য সামনে আনলেও প্রভাবশালী যোগ সম্পর্কে বারেবারে এড়িয়ে গেছে দুজনে। অথচ নিয়োগ দুর্নীতি নেটওয়ার্কের মাথায় যে প্রভাবশালী আছে তা তদন্তের গতিতেই স্পষ্ট। 
কুন্তল ও তাপস দুজনের সঙ্গেই পার্থ চ্যাটার্জি ও মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাপস ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে মহিষবাথানে তার অফিস থেকে নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠানো হতো অফিসের কর্মীর মারফত। তাপসের কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর মাথা পিছু টাকা দিতে হতো মানিক ভট্টাচার্যকে। অন্যদিকে কুন্তল ঘোষ আবার আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র জেরায় দাবি করেছে, নিয়োগ দুর্নীতির মোট ১৫ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে মধ্যস্থতাকারীর মারফত পার্থ চ্যাটার্জির কাছে পাঠানো হয়েছিল। পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল কুন্তলের। ধৃত মন্ত্রীর নাকতলা ও অর্পিতা মুখার্জির হরিদেবপুর, বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটেও যাতায়াত ছিল কুন্তল ঘোষের। 
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, জেলায় জেলায় রীতিমত টাকা তোলা ও চাকরি প্রার্থীদের যোগাড় করার নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল গত কয়েক বছরে। দুর্নীতির চেহারা পিরামিডের মতো। ইডি আদালতে জানিয়েছিল, পার্থ চ্যাটার্জির থেকেও বেশি প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান ব্যক্তি রয়েছে এই নিয়োগ দুর্নীতির পিরামিডের মাথায়। ২০১৪’র টেট থেকে ২০২১ পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে যে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে তা গেছে সেই ‘অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির’ কাছেই।
আবার অন্যদিকে ধৃত তাপস মণ্ডল সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার পরেও যখন কুন্তল তা ফেরত দিতে পারছিল না, তখন জিজ্ঞাসা করায় সে বলতো কালীঘাটের কাকুকে টাকা দিতে হয়। এখন আর টাকা নেই’।
এই কালীঘাটের কাকু যে অভিষেক ব্যানার্জির ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে বসা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র তাও জানিয়েছিলেন তাপস মণ্ডল। এই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রই আবার অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গেই ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’র প্রথম বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্য ছিলেন। 
ফলে কুন্তল ও তাপস মণ্ডলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা এবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। পাশাপাশি তিনজনের ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি নেওয়ার আবেদনও জানায় সিবিআই। 
এদিকে গত ১৭ তারিখ নিয়োগকাণ্ডে চন্দন মণ্ডলের সঙ্গেই যে পাঁচজন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ধৃত কৌশিক ঘোষ, শাহিদ ইমাম, শেখ আলি ইমাম,আবদুল খালেককে আদালতে তোলা হলে তাদের আগামী ২মার্চ পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। চন্দন মণ্ডলকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে ফের। আরামবাগের দাপুটে তৃণমূল নেতা, তিনটে সিনেমা করে ফেলা শাহিদ ইমাম চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাত কোটি টাকার বেশি তুলেছিল বলে জানায় সিবিআই। মুর্শিবাদের বড়ঞার কৌশিক ঘোষ, আরামবাগের শাহিদ ইমামের মতো ধৃত আবদুল খালেকও মালদহের ইংরেজবাজারে সক্রিয় তৃণমূল বলেই পরিচিত। এক প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। মালদহের নঘরিয়া হাইস্কুলের তৃণমূল পরিচালিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। একটি স্কুলের সামান্য ক্লার্ক হয়েও পেল্লাই চারতলা বাড়ি সহ বিপুল সম্পত্তির মালিক। চাকরি দুর্নীতির টাকাতেই এই ফুলে ফেঁপে ওঠা। উত্তরবঙ্গেও যে নিয়োগ দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছিল তাও স্পষ্ট।

Comments :0

Login to leave a comment