Lok Sabha Elections 2024

বিজেপি’র বর্তমান আর প্রাক্তনের সামনে অনেক ‘নেই’র চ্যালেঞ্জ

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

বালুরঘাটের পতিরাম চৌরঙ্গী মোড়ে বামফ্রন্ট মনোনীত ও কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্তের প্রচার সভায় শতরূপ ঘোষ। ছবি : দিলীপ সেন

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায় : বালুরঘাট 
 

রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি এখানে প্রার্থী। সেই সুকান্ত মজুমদার গত পাঁচ বছর এখান থেকে সাংসদ ছিলেন। তৃণমূলের যিনি প্রার্থী তিনি সুকান্ত মজুমদার গতবার জেতার পরেই বিজেপি’তে যোগ দিয়েছিলেন। পরে আবার তৃণমূলে ফিরে যান। যদি তিনি জেতেন আবার বিজেপিতেই চলে যাবেন না, এমন গ্যারান্টি মোদীর দল দিতে পারছে না। মমতা ব্যানার্জির দলও দিতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচন। পাঁচ-পাঁচটি বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে কী পেলেন তাঁরা তা নিয়ে বালুরঘাটে আলোচনা চলছে।
বিজেপি’র প্রচারে রামমন্দির আছে। আর আছে নতুন ট্রেনের কথা। নতুন ট্রেন এসেছে বালুরঘাটে। শিয়ালদহ-বালুরঘাট এক্সপ্রেস ছাড়া তবু নতুন কিছু বলার থাকছে না। 
বালুরঘাট পৌরসভা বাজারে বৃহস্পতিবার সকালে প্রচার ছিল বামফ্রন্ট মনোনীত, কংগ্রেস সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্ত। বালুরঘাটের সাহেব কাছাড়ি বাজারে এদিনের তাঁর প্রচার সাড়া ফেলার মতো। এই নিয়ে জনৈক ব্যবসায়ী বঙ্কিম রায় জানালেন, ‘নতুন ট্রেন হয়েছে তো ঠিক, কিন্তু পুরানো গৌড় এক্সপ্রেসের বালুরঘাট আসা তো বন্ধ করে দেওয়া হলো। এটা আগে থেকে ঠিক ছিল।’ 
এই নিয়ে যাতে লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব না পড়ে, তার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে বালুরঘাট রেল স্টেশনে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান করে বলা হলো আরও একটি ট্রেনের। বলা হলো, মালদহ পর্যন্ত আসা দিল্লিগামী ফারাক্কা এক্সপ্রেসকে নিয়ে আসা হবে বালুরঘাট পর্যন্ত। ব্যাস, ওইটুকুই। এখন তাই নিয়ে চলছে প্রচার। বিজেপি’র আইটি সেল এই জুমলাকে খবর বানিয়ে ঢেকে দিচ্ছে সোশাল মিডিয়া।
অথচ না হওয়ার তালিকা দীর্ঘ। রেল নিয়ে এত কথা ! তাহলে বালুরঘাট-হিলি’র ২৯.৫ কিলোমিটার রেলপথের কী হলো। ২৪২ কোটি টাকা একবার এসে ফিরেও গেলো। পরে আত্রেয়ী নদীর ওপরে রেল সেতু’র দুটি পিলার। এখন তাও ক্ষয়িষ্ণু। বুনিয়াদপুর থেকে কালিয়াগঞ্জের রেলপথ জরিপের কাজের পর পাঁচ বছরেও করা গেল না। এখনো বুনিয়াদপুর থেকে কুশমণ্ডী যেতে রাজ্য সড়কের ওপরে রেল সেতুর পিলার দেখা যায়। বুনিয়াদপুরের রেল ওয়াগন বানানোর কারখানার প্রকল্পও বাতিল হয়ে গেল। 
কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বঞ্চনার শিকার দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পা ভাঙার চিকিৎসা করা যায় না বালুরঘাট হাসপাতালে। গরিব মানুষদের কষ্ট করে যেতে হয় মালদহ কিংবা রায়গঞ্জে। জটিল কিছু হলেই ছুটতে হয় কলকাতা। জেলা সদরে এখনো তৈরি করা যায়নি একটা মেডিক্যাল কলেজ। 
রাজ্য-কেন্দ্রের অবহেলার সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়া এখানকার এয়ারপোর্ট থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছে। কেন্দ্রের বঞ্চনা দেখাতে রাজ্যের তৃণমূল নেত্রী এখানে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করেছিলেন। কলকাতা-মালদা-বালুরঘাটের সেই হেলিকপ্টার সার্ভিস দীর্ঘদিন বন্ধ। এয়ারপোর্ট যে আদৌ বালুরঘাটে আছে, তাই সব লোকে জানেন না। 
বিদায়ী সাংসদ মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। স্ত্রীও হাইস্কুলের শিক্ষিকা। অথচ দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বালুরঘাট গার্লস কলেজের দুটো ঘরে সীমাবদ্ধ। পড়ুয়া আছে কাগজে কলমে। কোনও শিক্ষক নেই। একজন উপাচার্য আর একজন আর্থিক আধিকারিক মিলে চালাচ্ছেন নাকি ওই বিশ্ববিদ্যালয়। জায়গা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির। বারংবার সরে যাওয়ার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছে না বলে এখন আবার বালুরঘাট গার্লস কলেজ বেঁকে বসেছে। তাদের বক্তব্য, জায়গার সঙ্কুলান একেই নেই, তার ওপর বাড়তি চাপ মানা যায় না। 
তৃণমূলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্র। তিনি রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী হয়েও নিজের জেলার কৃষি মান্ডির একটিও চালাতে পারেন না। ঠেকাতে পারেননি জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’র (জেসিআই) কাজ বন্ধ করাকে। বালুরঘাটের বোল্লা কিংবা হরিরামপুরে রয়েছে জেসিআই’র দুটি পাট কেনার কেন্দ্র। কিন্তু সেখানে নেই কোনও কর্মী বা আধিকারিক। বালুরঘাটের বিশাল অংশের পাটচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করতে পারেননি। বালুরঘাটের অদূরে খিদিরপুর মহাশ্মশানের বন্ধ হয়ে যাওয়া ইলেকট্রিক চুল্লিও সারাতে পারেননি। সাধারণ মানুষকে এখনো পুরানো সেই পদ্ধতিতে দাহ করতে হচ্ছে। গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা হওয়ার জন্যই তিনি নাকি চাইছেন যা হোক তা তার জায়গায়, বালুরঘাটে আর নয়। বিজেপি’তে থাকা ওই মানুষ এবারে তৃণমূলের জার্সি পরে এসেছে মানুষ কাছে ভোট চাইতে। বিদায়ী সাংসদের মতো তিনি এনেছেন হরেক রকমের প্রতিশ্রুতি। কৃষিপ্রধান দক্ষিণ দিনাজপুরে সার নিয়ে শাসক দল যে কালোবাজারি তাতেই তিনি প্রত্যক্ষ মদতদাতা।    
ছবি এক : বালুরঘাটের সাহেব কাছাড়ি বাজারে বামফ্রন্ট মনোনীত, কংগ্রেস সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্তের প্রচার।

Comments :0

Login to leave a comment